politics
সুখময় ঘোষ, লেখক, শ্রীরামপুর: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে ‘কর সেবার’ নামে তান্ডব চালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল বাবরি মসজিদের কাঠামোকে । আর সেই নারকীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় রাজনীতিতে সূচনা হয়েছিল ‘রাম’-এর নাম যুক্ত করে একধরণের সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ । আর ভারতবাসী প্রত্যক্ষ করেছিল দেশব্যাপী এক নৃশংস দাঙ্গা । এই অস্থির সময়ে ভারতীয় জনতা পার্টি হিন্দুত্বের জিগির তুলে হাইজ্যাক করল ‘প্রজাবৎসল’ ও ‘সত্যনিষ্ঠ’ দেবতা ‘রাম’কে তাদের প্রতিটি নির্বাচনী বৈতরণী সুকৌশলে পার হওয়ার জন্য । এই বিতর্কিত জমিতে একটি মসজিদ ধ্বংস করে মন্দির নির্মানের প্রচেষ্টা শুধু ভারতীয় ঐতিহ্যকেই অপমান করা নয়, রামকেও অপমান করা, যিনি পিতার সত্যরক্ষার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে ১৪ বছরের জন্য বনবাসে কাটিয়েছিলেন । হিন্দুত্বের তাস খেলে জনগণকে কাছে টানার এই ভয়ংকর প্রবনতা কেবলমাত্র দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে না, পাশাপাশি যা দেশের অর্থনীতির পক্ষে বিপজ্জনক । গণতন্ত্রের মূল কাঠামোকে আঘাত করে বিজেপি-র এই আগ্রাসী উত্তরণ যেমন ভয়ংকর তেমনি আগামী প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা । বিজেপি তার এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে দেশাত্মবোধ বলে প্রচার করলেও তা শুধু দাঙ্গায় ইন্ধন যোগাবে না দেশের উন্নয়নকেও থামিয়ে দেবে । কারণ দেশের সংখ্যালঘুদের সাথে সংখ্যাগুরুর পাশাপাশি সহাবস্থান থেকেই যাবে । দাঙ্গা করে সংখ্যালঘুদের অন্য দেশে পাঠানো যাবে না । এটা মাথায় রাখতে হবে । আজকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভূমিকা নিয়ে আরএসএস বা বিজেপি সরব হলেও এই দ্বিজাতিতত্ত্বের শিক্ষা সাভারকরও দিয়ে গেছেন । অখন্ড বাংলার জন্য যখন শরৎ বসু প্রমুখেরা দাবী করেছিলেন তখন তৎকালীন হিন্দু বাঙালীরা সংখ্যালঘু হওয়ার ভয়ে তা মেনে নেননি । 
সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে হিন্দুত্বের তাস খেলা বিজেপি-র বর্তমান ভূমিকা ভাবের ঘরে চুরির নামান্তর । এই ছলনার আশ্রয়ে ‘রাম নাম’-কে ব্যবহার করে শাসক দলের এগিয়ে চলা দেশ ও জাতি গঠনের পক্ষে অন্তরায় । ‘রাম’ নাম হয়ত ব্যালট বাক্সের পক্ষে আদর্শ হতে পারে কিন্তু ভারতবর্ষের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরম্পরার ক্ষেত্রে বিপত্তি ডেকে আনবে । রামকে এমনভাবে টেনে নামানো হয়েছে যেখানে নারকীয় ঘটনাগুলিও তাঁর নামে ধ্বনি তুলে সংঘটিত করা হচ্ছে । গান্ধীজি যেখানে রামের ভজন গেয়ে সকলকে বুকে টেনে নিয়েছিলেন সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে দুর্বৃত্তদের একধরণের বিকৃত উল্লাস সর্বত্রই চোখে পড়ে । আসলে এই ধরণের সংস্কৃতির জন্ম দিয়ে বিজেপিকেও আগামী দিনে এই পাপের ফল বইতে হবে । এই সমস্ত গেরুয়া ফেট্টিধারীদের উপর নেতৃত্বের কোন নিয়ন্ত্রন নেই । যেমন নিয়ন্ত্রন নেই সেই সমস্ত নেতাদের উপর যারা মহাত্মাকে ‘বেনিয়া জাত’ বলে আখ্যা দেন, নাথুরাম গডস্‌কে শহীদ বলে বর্ণনা করেন । অথচ এই দলও সর্বত্র মহাত্মাকে ব্যবহার করছে নিজেদের ‘ক্লীনচিট’ বজায় রাখার জন্য । মানুষের রুচি, অভ্যাস ও ধর্মের উপর যখন খড়্গ নেমে আসে তখন সেই নারকীয়তার সাথে রাজনীতির যোগ সভ্যতাকে অন্ধকারের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় । ‘জয় শ্রীরাম’-কে সামনে রেখে হিন্দুত্বের বাড়াবাড়ি সাধারণ মানুষের মোহাবিষ্ট হওয়া একটা সাময়িক ব্যাপার । বিজেপি-র এই প্রচেষ্টা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হতে পারে না । ব্যর্থ হতে বাধ্য । 
কেননা এর মধ্যে নাটকীয়তা বেশি । কিন্তু শান্তি ও সম্প্রীতি চলে নিঃশব্দে । তাই ‘রাম’-কে রাজনীতির টেবিলে না রেখে বরং প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে থাক – এটাই মেনে নেওয়া উচিত । 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours