fiture
সঞ্চারী চট্টোপাধ‍্যায় লেখিকা , কলকাতা : বেশ কিছু বছর হয়ে গেল সোস‍্যাল মিডিয়ায় আছি । অসংখ‍্য গুণী মানুষের সাথে বহুবার পরিচয় ঘটেছে । শুধু গুণের ও প্রতিভার কারণেই নিজের নিজের ক্ষেত্রে তারা সত‍্যিকারের ছাপ ফেলতে সক্ষম জনমানসে । তারা এবং আমরা একটা কমন প্ল‍্যাটফর্মে বিলং করি , তাদের সাথে শব্দ এবং ছবির আদানপ্রদানের মাধ‍্যমে ব‍্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব এটা আমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ আগেও বিশ্বাস করেছেন এবং সম্ভব হয়েছেও সেটা অনেক ক্ষেত্রে । অভিজ্ঞতা 75% ভাল হলে 25% খারাপ হতেই পারে , ল অফ অ্যাভারেজ তাই বলে । এতদুর অবদি আমরা প্রত‍্যেকে মারাত্মক যুক্তিবাদী ছিলাম । ঠিক এই সময়ে আমাদের ব‍্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ সামনে এসে দাঁড়ায় । আমার বাদামী রং ভালো লাগলে তোমার কেন হলুদ রং ভালো লাগবে যেখানে আমি হলুদ রং একেবারে পছন্দ করি না ??? শুরু হয় বিরোধ , তার থেকে আঁচড় , কামড় , কে ভুল কে ঠিক ইত‍্যাদির দ্বন্দ্ব এবং আরো বহু কিছু । তোমার মতটা ঠিক আর আমার মতটা ভুল এই বিষয়টা মেনে নেওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন‍্যই আদ‍্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে । আসলে আমরা প্রত‍্যেকে নিজের নিজের মতের কাছে মারাত্মক রকম ঠিক । এর কারণ আমাদের যুক্তি । যে সন্ত্রাসবাদী , তাকেও যখন জিজ্ঞেস করা হয় তার কাজের উদ্দেশ‍্য , সে একটা যুক্তি অবশ‍্যই দেখায় । হতে পারে সে যুক্তি সাধারণ সমাজের পক্ষে মেনে নেওয়া দুঃসাধ‍্য । তবুও সেই যুক্তি সেই মানুষটার কাছে অখন্ডনীয় । আসলে ঠিক ভুল বলে এই পৃথিবীতে বোধহয় কিছুই হয় না । সবটাই আমাদের আপন দৃষ্টিকোণ । 
লড়াইতে মেতে ওঠার সময়ে ঠিক দুটো শব্দ আমাদের ডিকশনারি থেকে একেবারে হারিয়ে যায় - দৃষ্টিকোণ এবং আপেক্ষিক । আর ঠিক এই দুটো শব্দের জন‍্যই বিপরীতার্থক শব্দ বিষয়টার সৃষ্টি । সাদা না হলে কালোর মহিমা এই জগত কখনোই টের পেতো না । যে দুনিয়ায় এমনকি জীবনেরও বিপরীতার্থক শব্দ মরণ রূপে দাঁড়িয়ে থাকে মাথার পাশে , সেই দুনিয়াতে আমার সামনের লোকটার মতামত আমার বিপরীত হবে এটা জেনেও আমরা নিষ্ফল ভাবে লড়ি , শুধু লড়ি নিজেকে জেতাবো এই মোহে । বুদ্ধিমানেরা ইতিমধ‍্যে চুপচাপ দুরে দাঁড়িয়ে মজা দেখেন । কখনো তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আরো একটু উস্কে দেন দুই বিপরীতধর্মী মানুষকে । এতে তাদের লাভ ? তাদের লাভ প্রশ্নহীন আনুগত‍্য যেকোন এক পক্ষ অথবা দুপক্ষের মানুষের থেকেই । আর যুদ্ধ শেষ হলে যখন বাদী আর বিবাদী পক্ষ দুজনেই বুদ্ধিমানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন "আমাদের অ্যাজেন্ডাটা যেন ঠিক কি ছিল??" বুদ্ধিমান হাসতে হাসতে জবাব দেন "তোদের অ্যাজেন্ডা ছিল - আসলে সবটাই আপেক্ষিক ।" সেই মুহুর্তে যুযুধান দুই পক্ষ অবাক হয়ে ভাবে , "আশ্চর্য ! এই শব্দটা তো লড়ার সময়ে সত‍্যিই মাথায় আসে নি !" ঠিক এই মুহুর্তেরই অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগসন্ধানী বুদ্ধিমান । তিনি এসে ঘোষণা করেন , যেহেতু এই শব্দটাই তোরা লড়বার সময়ে ভুলে গিয়েছিলি এবং আমি এসে তোদের মনে করিয়েছি , অর্থাৎ কিনা যুদ্ধের বাদী , বিবাদী দুই পক্ষকে তোদের আসল উদ্দেশ‍্য মনে করিয়ে দিয়েছি , অতএব যোগ‍্যতমের উদবর্তন রীতি মেনে এখন থেকে আমিই তোদের সর্বময় কর্তা । মানবজীবনের সেই কোন আদিম কাল থেকে এই রীতির শুরু । বড় জানতে ইচ্ছে করে যে বৈষম‍্য বিষয়টা বজায় থাকলে কোন একজন সর্বময় কর্তা হবার সুযোগ পাবেন এই বিষয়টা সর্বপ্রথম পৃথিবীর কোন আদিমতম মানবের মস্তিষ্কে সর্বপ্রথম ঝিলিক দিয়েছিলো । 
সম্ভবত এই পৃথিবীতে তিনিই রাজনীতির আদি পুরুষ । অ্যারিস্টটল , সক্রেটিস , চাণক‍্যের নাম ইতিহাস আমাদের জানালেও আজও কোন এক অব‍্যক্ত ইতিহাসের আড়াল থেকে হয়তো সেই আদি পুরুষ পৃথিবীর প্রত‍্যেকটি যুদ্ধের সময়ে অলক্ষ‍্য থেকে বসে মৃদু হাসছেন , আর মনে করাচ্ছেন বারবার - সাদার বিপরীত যতই কালো হোক না কেন , লালের বিপরীত নীল , বেগুনি নাকি সবুজ , প্রকৃত বিপরীত কোনটা , সেই খোঁজেই যুদ্ধ জারি রাখবে এই সভ‍্যতা , ততক্ষণ অবদি যতক্ষণ না আপেক্ষিক (relative) আর দৃষ্টিকোণ (perspective) শব্দদুটো মনে পড়ে এই সভ‍্যতার ।। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours