fiture
সুখময় ঘোষ, লেখক, শ্রীরামপুর: বুদ্ধ, নানক ও চৈতন্যের দেশে স্বৈরতন্ত্রের নিঃশব্দ উপস্থিতি ভয়ঙ্কর রকম ভাবে টের পাচ্ছে এদেশের জনগণ । জনগণের বাক্‌ স্বাধীনতা ও সংবিধানিক অধিকারকে দমন করার খেলায় মেতেছেন দিল্লীর শসকদল । দীনদয়াল উপাধ্যায়ের উত্তরসূরীদের ক্ষমতার প্রতি তীব্র লালসা তাঁদের হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য করেছে । সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে গাজোয়ারী করে সংসদের প্রথম অধিবেশনেই শুরু হয়েছে বিল পাশের তাড়া । নাগরিক অধিকারকে গর্ব করতে পেশ হয়েছে দুটি সর্বনাশা বিল । (১) তথ্যের অধিকার (সংশোধনী) বিল ও (২) বেআইনী কার্যকলাপ প্রতিরোধ (সংশোধনী) বিল । ২০০৫ সালে ডঃ মনমোহন সিং-এর সরকার এক ঐতিহাসিক বিলের মাধ্যমে জনগণের হাতে দুরন্ত এক সাংবিধানিক অধিকার তুলে দেয় । ‘তথ্য জানার অধিকার (Right to Information)-এই আইনের মাধ্যমে যে কোন নাগরিক সরকারের কাছ থেকে তথ্য জানতে চেয়ে অন্যায়ের প্রতিকার করতে পারতেন ।ভারতীয় সংবিধানে বাক্‌ স্বাধীনতার যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তার থেকেই এই তথ্য অধিকারের উৎপত্তি । 
দেখা গেছে গত পাঁচ বছরে এই আরটিআই-এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে সরকারী ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ, বেকারত্বের হার, নোট বাতিলের কারিণে দেশের ভয়াবহ আর্থিক অবস্থা ও রাফাল চুক্তির অনেক বেনিয়ম । সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে শাসক দলের কিছু নামী প্রার্থীর অ্যাফিডেভিটগুলি তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে ‘ক্রস ভেরিফাই’-এর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল । এখন বিজেপি সরকার ঝোলা থেকে আসল বেড়াল বেড়িয়ে যাবার শঙ্কায় যেখানে নরেন্দ্র মোদীর স্নাতক ডিগ্রী সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়েছে সেই সম্ভবনা ঢাকতে এই সংশোধনী বিল পাশ । অথচ দুর্নীতি মুক্ত করতে সফল এই আইনের জন্য ৮৩ জন আরটিআই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে । মোদি সরকার নিজেদের দুর্নীতি ফাঁস হয়ে হয়ে যাবার ভয়ে বিল সংশোধনের এই গা-জোয়ারী পদক্ষেপ করেছে যা দেশের গণতন্ত্রকে হাস্যেস্পদ করে তুলেছে । শুধু তাই নয় স্বৈরতন্ত্রের ছায়ায় ব্যক্তি অধিকারকে পদদলিত করতে মোদি সরকার আরও একটি বিল এনেছে যা দেশের রাজনীতি ও সমাজজীবনে অন্ধকারময় অবস্থা ফিরিয়ে আনবে । এই বিলে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত না থাকলেও তাঁকে সন্ত্রাসবাদী তক্‌মা দিয়ে গ্রেফতার করা যাবে । যে কোন ব্যক্তিকেই এখন থেকে ‘অ্যান্টিন্যাশনাল’ বা ‘টেরোরিস্ট’ হিসাবে প্রতিপন্ন করা যাবে তাঁর জাতীয়তাবিরোধী মনোভাবের জন্য । অর্থাৎ যে কাউকে এখন ‘শহুরে নকশাল’ হিসাবে চিহ্নিত করে ‘ফ্যাসিস্ট’ কায়দায় দমন করা হবে যেখানে যে কোন রাজ্যের অনুমতি ছাড়াই এন আই এ সেখানকার যে কোন বাসিন্দাকে গ্রেফতার বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে । রাষ্ট্রযন্ত্রের গিলোটিনকে জনগণের উপর ব্যবহারের জন্য আইনের মাধ্যমে শাস্তির প্রথা আনতে চায় মোদি-অমিত জুটি যাঁরা কথায় কথায় উঠতে বসতে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার কথা বলে । 
এই বিল আইনে পরিণত হলে কেউ যদি বিজেপির চিন্তা-ভাবনার বিপরীতে কথা বলে তাঁকে রাষ্ট্রের গ্রেফতারযোগ্য শত্রু হিসাবে দমন পীড়নের আওতায় আনা হবে । চলবে রাষ্ট্রক্ষমতার নির্যাতন । ক্ষমতার মোহে অন্ধ মোদী সরকার ইতিহাসকে ভুলতে চায় । ইতিহাসকেও ভুলিয়ে দিতে চায় । কিন্তু ইতিহাসেরও পুনরাবৃত্তি হয় এই অমোঘ সত্যটি মনে রাখতে হবে ক্ষমতার বলে দাম্ভিক মোদী-অমিত জুটিকে ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours