সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
"মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি"। ঠাকুমা, দিদিমার আমলে অল্প বয়সে বিয়ে বছর বছর মাতৃত্ব, অভাব, অপুষ্টির সাথে ঐ কথাটি মিলে যেতো।আজ যুগ বদলেছে।
গ্রাম হোক বা শহর মেয়েরা নিজেদের সুন্দর করে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর।
নারী সুন্দর। তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ পুরুষ। রাধার রঙ নিয়ে কেষ্ট ঠাকুর বলছেন, "রাধা কিউ গোরি, ম্যায় কিউ কালা?"
সে যুগ থেকে রাজারাজরার যুগেও গোলাপ জলে স্নান, চন্দন কাঠে ধোয়ায় রানীর চুল শুকানো,ও নানা বাহারি পোষাকের ইতিহাস আমরা পাই।
তা কবে থেকে বাঙলার নারীদের এক কাপড় চালু হয়েছিল, জানা নেই।তবে নারীর সেলাই করা বস্ত্র পরা নিষিদ্ধ ছিলো মাত্র একশো বছর আগেও। বাঙালি নারীর পোশাকে বিপ্লব এনেছিলেন রবি ঠাকুরের বৌদি জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। উনিই প্রথম গাউন দেখে তার দেশীয় রুপ দেন, সেমিজ, পেটিকোট ও ব্লাউজে। তা নিয়ে সমাজের মাথাদের ছিছিক্কার ঠাকুর পরিবারের আধুনিকতার পথে বাধা হয়নি।
তাই আজকের ড্রেস নিয়ে যে প্রচণ্ড মাতামাতি তার ইতিহাস বিশেষ পুরানো নয়। ঠাকুরের পরিবারের বিদুষী মহিলাদের
আধুনিকতায় মুগ্ধ ছিলেন বাঙলার বিদগ্ধ পুরুষ মহল।
তাই বুদ্ধি ও মেধার হাত ধরেই আসে পোষাকের বৈচিত্র্য।অন্ধ অনুকরন কখনোই সৌন্দর্যের বাহক নয়।
জীবনের জলছবি!
প্রথম মাতৃত্বের অপার্থিব স্বাদ যে নারী উপলব্ধি করেছেন এবং সদ্যজাত তুলোর বলকে হাতে নিয়ে তার যে অপরুপ রুপ মাধুরী তা বোধহয় সেই মুহূর্তে লিওনার্ড সাহেবের মোনালিসাকেও হার মানায়।
আড়াই তিন বছরের আধো বুলির মেয়েটি যখন লাল জামা পরে ঝুঁটি নাড়িয়ে টুঙ্কিল টুঙ্কিল লিটিল স্টার বলে, যেন সত্যিই মাটিতে তারা খসে পরে।
ষোড়শী কণ্যে, পোঁ পোঁ করে সাইকেল চালিয়ে জিন্সের ওপর সাধারণ টপ যাতে লেখা ক্যাচ মি,ইফ ইউ ক্যান। উড়তে উড়তে চলে যায় ,"মুগ্ধ পুরুষের নজর" চোখ এড়ায় না।
বিয়ের পর ইয়া বড় একটা ঘোমটা টেনে যে বুদ্ধিমতী,আত্মীয়,গুরুজনদের সামনে দাঁড়ায় ,ঘোমটা সরিয়ে অবাক চোখে দু দন্ড দেখেই,
"এযে দেখি দুগ্গা মা"। উঁচু কপাল খ্যাদা নাকের দুগ্গার রহস্য ঐ ঘোমটা আর সিঁদুরে।
তাই, সময়ের সাথে স্টাইল গেটআপ একটু রকমফের করে নিলেই বয়স লুকিয়ে খুকি সাজার বোকামি থেকে বোধহয় রক্ষা পাওয়া খুব একটা অসম্ভব নয়।
সাজসজ্জার, প্রধান উদ্দেশ্য অপর প্রান্তের মানুষটির দৃষ্টি আকর্ষণ । তার জন্য রঙ মেখে সং সাজা কি খুব প্রয়োজন ?
শেষে একদমই ব্যক্তিগত এক গ্লোরিয়াস দিম্মার গল্প।
আজকের দিম্মারা নাইট হাউজকোট পরেন।
আমার ছেলেবেলায় এসবের চল ছিলোনা।আমার এই দিম্মা সাদা চওড়া লাল পাড় শাড়ি পরতেন ।কপালে বড় লাল টিপ।আর সারাসময় পান খেতেন।টুকটুকে লাল ভেজা ভেজা ঠোঁট আর মিষ্টি পানের গন্ধ আজকের যেকোনো গ্লসি লিপ আর দামি ডিওকে হার মানাবে।ঐ গন্ধ আর ঠোঁট আমাকে চুম্বকের মত টানতো।আমিও পান খেতাম।দিম্মা ছোট্ট পান সেজে আমার মুখে দিতেন । কিন্তু লাল হতোনা।তাই নিয়ে নিত্য ঝামেলা।
একদিন জানলাম যার বর যাকে যত বেশি ভালোবাসে তার ঠোঁট নাকি তত লাল হয়।ঐ বাড়ির দাদু আমাকে ছোট বউ বলতেন ।ভীষণ রেগে দাদুকে সোজাসুজি প্রশ্ন তুমি আমার থেকে দিম্মাকে বেশি ভালোবাসো। দাদু ভীষণ অবাক হয়ে আমাকে কোলে তুলে এদিক ওদিক দেখছেন । দরজায় দাঁড়িয়ে সেই ভেজা ঠোঁট।
মুগ্ধতা চিরন্তন। ভালো লাগা চিরন্তন।সব বয়সেই ভালো লাগা থাকে, ভালোবাসা আসে।তাই ষোড়শী সেজে ভালোবাসার কাঙালিপনা যেন মূর্খতারই নামান্তর।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours