জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
কাশ্মীর
নিয়ে যে আন্তর্জাতীক তর্জা হয়ে গেলো বা চলছে, সেটা কখনোই কোনভাবে ইউরোপ
কিংবা অষ্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে ঘটতে পারতো না। এমন কি, দক্ষিন
আমেরিকার কোন স্বাধীন
--- যখন বলা হচ্ছে, ঘটতে
পারতো না। এই নয় যে, কোন দৈব কারণে অথবা রাজনেতাদের দয়ায় এমন টি ঘটা সম্ভব
ছিলো না। যদি সেরকম কথা কোন প্রকৃ্ত স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, এরকম
কথা বলেও থাকতেন, কোন আমেরিয়ান প্রেসিডেন্টের বাবার পক্ষেও কথাটা ফাস করতে
সাহস দেখাতেন না। সেজন্য লিখিত চুক্তি অথবা সরকারী-ভাবে চিঠি পাঠানোর
পরেই, সে রকম কথা প্রকাশ্যে আনার, ক্ষমতা হোত না।
-----
অন্যপ্রান্তে বলতে হয়, যে 'সাহসের' উপর ভিত্তি করে, আমেরিকান রাষ্ট্রপতি,
বিশ্বের এক তৃ্তীয়াংশ মানুষের এবং ইতিহাসের প্রথম সভ্যতার রাষ্ট্রের
স্বাধীনতাত্তোর কালের, পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কীত গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে
নিয়ে তঞ্চকতা করলেন,
----- একই কারণে, ভারতীয়
সংসদে, রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে, কার্য্যতঃ মিথ্যাবাদী আখ্যা দেওয়া সত্বেও,
বর্তমান কালে যে দেশের মিলিটারীতন্ত্র, নিজেকে বিশ্ব অভিবাবক বলে ঘোষনা
করেছেন, তিনি দেদার আরোপিত বিশেষনটা চেপে গেলেন । অন্যকথায় বলা যায়,
উপমহাদেশের দ্বি-দেশীয় এবং আমেরিকানদের মাখামাখিটা 'এতোই মধুর' সেই
------
লোকসভার নির্বাচন পূর্ব কাল থেকেই, পররাষ্ট্র নীতির সাথে যুদ্ধের সম্পর্ক
রয়েছে, এমন কোন প্রশ্নেই কেউ কাউকে চটাতে চাইচ্ছেন না।
-----
আলোচনাকে আরো একটু এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আরো বিস্ফোরক ধরনের প্রশ্ন তোলাই যেতে
পারে। বিশ্বের যেকোন স্বাধীন দেশের, শুধু বুনিয়াদী নীতির বিপরীতেই নয় -
সে দেশের আত্মমর্য্যাদা কিংবা প্রতিরক্ষা সম্পর্কে সন্দেহ হতে পারে অথবা
সেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে, যার সাথে কাশ্মীর প্রশ্নে বিরোধ, সেই দেশে
আন্তর্জাতীক সুবিধা পেতে পারে
-------- এমন পরিস্থিতি
নির্মান হলে, যে রাষ্ট্র এসব থেকে ক্ষতির কার হয়েছে, সেই রাষ্ট্র আমেরিকার
সাথে সামরিক মাখামাখি কমিয়ে দেওয়ার ব্যস্থা নিতেই পারতো।
------
সে সব কিছু যে ঘটে নাই, তাই নয় --- PRIME MINISTER OF THE NATION, NEVER
THOUGHT IT TO ASSURE THE PARLIAMENT THAT THIS WOULD NEVER HAPPEN.
--------
কাশ্মীর প্রশ্নে, এই ঘোষনা এ কারনেও গুরুত্বপূর্ন --- মার্কিনীরা
কাশ্মীরের প্রশ্নে মধ্যস্ততায় যে এতো আগ্রহ তার কারন যে অন্য, সেটা
শ্রীমোদি জানেন না, সেরকম মানার কোন কারন নেই।
------
আমেরিকা, তৃতীয় পক্ষের ভূমিকায় - কাশ্মীরের প্রশ্নের সমাধান থেকেও
ঝুলিয়ে রাখাই প্রধান নীতি হবে, তার বিশ্ব নীতির কারনেই। আমেরিকার প্রধান
লক্ষ এখন, ভারত-কাশ্মীর-পাকিস্থান-চিন সীমানার মত , অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং
সম্ভাব্য যুদ্ধ কেন্দ্রে আমেরিকার সৈন্য পাঠানো।
------
আমার ধারনা নিশ্চিত,পশ্চিম বাংলা থেকে বাম ফ্রন্টকে সরিয়ে রাখার
প্রশ্নেও, বঙ্গোপোসাগরের মুখ সপ্তম নৌবহরের জন্য খালি রাখা। তেমনটি, ঘটলে,
নৌ-বহর সোজাসুজি চট্টগ্রাম হয়ে, চিনের কাছাকাছি চলে যেতে পারবে।
-------
এসব থেকে অন্য যে প্রশ্নটা উঠবে তা ইতিহাসের দিক থেকে আরো বিস্ফোরক
প্রশ্ন উঠবে। তবে কী ভারতবর্ষ এমন কোন প্যাচে পরে গেছে, যেখান থেকে ভারত আর
বেড়িয়ে আসতে পারছে না, যেখানে, ভারত জোর গলায় বলতে পারছে না
------
কিছুতেই, সত্তোর বছরের কাশ্মীরে তৃতীয় পক্ষকে ঢুকতে দেওয়া হবে না, সেই
ঘোষনাটি আসতে পারে নাই। একই কারণে, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিষয়টা চেপে
গেছেন।
এখানেই, ভারতে তথাকথিত অর্থনৈতিক সংস্কার।
এই সংস্কারে, পরিনতিতে আভ্যন্তরীন অর্থনীতির কাঠামো ছারখার হয়ে যাওয়ায়, চুল
থেকে নোখ পর্য্যন্ত আমেরিকান অর্থনীতি এবং প্রতিরক্ষা বাঁধা পরে যাওয়ার যে
প্রকৃয়া চলছিলো, তা ভারতকে ধর্মীয় রাষ্ট্র ঘোষনার প্রশ্নে আরো জট পাকিয়ে,
আমেরিকার উপর নির্ভরশিলতা বেড়েছে কি না?
-----
এখান থেকেই, আরো গুরুতর প্রশ্ন উঠবে, যে দেশের সামগ্রিক অর্থ নীতির বাইরেও
ইতিহাসগত জটিলতার বিষয়টি জট পাকিয়েছে কী না? সেসব প্রশ্নকে সমাধান করেই,
ভারতীয় গনতন্ত্রকে এগুতে হবে।
------ যদি প্রশ্ন
দাড়ায়, এরকম ঘটনায়, ইউরোপের জনগন যখন কোন মতেই তাদের সামাজিক বিকৃতিকে
কিঞ্চিত প্রশ্রয় দিলেও, কিছুতেই আর্থ-সংস্কৃতিতে প্রশ্রয় দেবে না,
----- অথচঃ ভারত সহ তৃ্তীয় বিশ্বের প্রতিটি দেশ, একের পর একে
আত্মসমর্পন
করছে, একের পর এক। এসবের অধিকাংশ দেশ,আজ কোন স্বাধীন আর্থ-সামাজিক অবস্থান
নিতে পারছে না। মিশরকে দিয়ে তো জোর করেই, ত্রিশ বছরের জন্য, একজন
রাষ্ট্রপতি ' নির্বাচিত' করিয়ে নিয়েছেন। প্রাক্তন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি,
শুধু গদিচ্যুত নয়, তিনি আদালত কক্ষেই 'মৃত্যুমুখে' পতিত হন। বিশ্ব মেনেছে,
তাকে হত্যা করা হয়েছে।
------
অন্যদিকে আরো বিপদজনক, মিডিয়া সংবাদ যদি সঠিক হয়, কংগ্রেস দলের পক্ষ
থেকে শ্রীমোদির মাথায় 'বিশ্বাস ঘাতকতার' তকমা লাগানো, একতৃ্তীয়াংশ মানুষের
দেশের মাথা, প্রধান মন্ত্রীর বিবৃতি অনুযায়ী,এতো মিথ্যা চাপিয়ে দেওয়া
সত্বেও, তারা আমেরিকা বা ইসরাইলের সাথে ভারতের সামরিক যোগাযোগকে সংকুচিত
করার দাবী রাখেন নাই। প্রসংগত উল্লেখ করতে হয়, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে, এই
কয়েকদিন পূর্বে, পেলেষ্টাইনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের গনহত্যা যখন ব্যাপক শিশু
এবং নারীহত্যায় নেমে এসেছে, তখন ভারত বিশ্ব সভায়, ইসরাইলের পক্ষ নেওয়ার
মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে।
পোষ্টিং
এর শেষে এসে সেই স্তালিনের ভবিষ্যতবানীটা নতুন করে রেখে,আগামী পোস্টিং এর
পটভূমিটা নির্মান করে দেওয়া যাক। দ্বিতীয় যুদ্ধের পর, স্তালিন যখন বল্লেন,
পুঁজি যেমনভাবে সে কেন্দ্রীভুত হবে
------
তেমনভাবেই, সেসব গরিব দেশ এদের খপ্পরে পরবে, যে সব দেশে গনতন্ত্র স্থায়ীত
পায় নাই। ইউরোপে এটা ঘটবে না - কারন সেখানে ফরাসী বিপ্লবের (১৭৮৯) পর লাইন
ধরে গনতান্ত্রিক বিপ্লব হয়েছিলো।
স্তালিনের এই
বিশ্লেষনের ভিত্তিতেই পঞ্চাশের দশকে, স্তালিন-নেহেরু অর্থ নৈতিক চুক্তি সই
হয়েছিলো, সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের অর্থনৈ্তিক কাঠামো নির্মান হয়েছিলো।
সেটাই ২০১৯ এর নির্বাচন ভেংগে চুড়মার করে দিয়েছে। এইভাবে ভারতটা উলটে
দিয়েছে। এই বিপদের কথাই ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, প্রনব মুখোপাধ্যায়
উল্লেখ করেছেন।
---- বিপদ আরো বিপুল, প্রনব বাবু যাই
বলুন না কেন, এই কারণে যে, আমেরিকার কাছে অর্থনৈতিক এবং প্রতিরক্ষার
প্রশ্নে কংগ্রেস এবং বিজেপি সমভাবে, দেশকে বিক্রি করতে গিয়ে, নিজেদের
বিক্রী করে দিয়েছেন। যখন রাজ্য সভায় ছিলাম, তখন প্রনব বাবুর আচরনও লক্ষ
করেছি।
---- তবে গুরুতর প্রশ্ন এখানেই,দেশ কী সেই
বিন্দুতে পৌছে গেছে - হয় 'নিশ্চিত ফ্যাসীবাদ' নয়তো কী ' জনগনের গনতন্ত্র'/
মাঝামাঝি কিছু নেই।
ভারতীয় ইতিহাসই কি তবে, ইতিহাসের জন্য একটা মহা সংকট নির্মান করেছে? বিষয়টি আগামী পোস্টিং এ আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। (চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours