দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:  মঙ্গলগ্রাম! দুর্ভিক্ষে গ্রামবাসীদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সরযু নদীতে জল নেই। এর মধ্যে রটনা! সোনার গহনা পেটে ঠাসা এক কুমির নাকি পাওয়া গেছে! অত্যুৎসাহী গ্রামের লোক তার পেট চিরে পেয়েছে—নারী- পুরুষের অলঙ্কার! হবেই না বা কেন, মানুষের দেহ হজম হলেও, অলঙ্কার হজম তার কম্ম নয়। গাইড উপন্যাসের একটা অংশে এই ঘটনার অবতারণার মধ্য দিয়ে আর কে নারায়ণ যাই বলতে চান না কেন, একটা কথা পরিষ্কার অলঙ্কার নিয়ে কুমিরের আগ্রহ না থাকতে পারে, মানুষের কম নেই!! সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখল রামপুরহাট। না কুমিরের পেট থেকে গহনা পাওয়া যায় নি! গহনা পাওয়া গেছে এক রোগীর পেট থেকে! কিন্তু সেটা সোনার গহনা কিনা? দেড় কেজি মানে কত ভরি? কোন কোন গণমাধ্যম তো ওই গহনাকে সোনার গহনা বলে বসল। অর্থাৎ পাবলিক এটা খায়! শেষ মেশ রোগীর পেট থেকে কী বেরোল? আগ্রহ সবার! বেরোল গয়না – গলার চেন, নাকের নথ, কানের দুল, হাতের বালা, পায়ের নুপুর! আর অপারেশন টেবিলে তা দেখে খোদ চিকিৎসকের চক্ষু চড়কগাছ! যদিও সব গহনা ইমিটেশনের প্রথমে বললে, ঘটনার এ্যন্টি-ক্লাইম্যাক্স চলে আসে। তাই একটু দেখে বলাই ভালো! জানা গেছে, রুগীর নাম রুমি খাতুন। বাড়ি বীরভুমের মাড়্গ্রাম থানার অনন্তপুর গ্রামে। বছর ছাব্বিশের এই মহিলারা দুই ভাই এক বোন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, অবিবাহিত ওই যুবতীর মাস দুয়েক আগে শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে শরীর শুকিয়ে যেতে থাকে। তার পেটে কিছু থাকত না। খাওয়া দাওয়ার পর বমি করে দিত।
চিকিৎসকের পরামর্শে কোন লাভ হয় নি। এরপর এক চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করিয়ে পেটের মধ্যে সুতোর মত কিছু একটা নজরে আসে। তাঁর পরামর্শে মলদ্বার দিয়ে ওষুধের মারফৎ ওই বস্তু বের করানোর চেষ্টা করা হয়। যদিও তাতে কোন কাজে আসে নি। দিন সাতেক আগে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক সিদ্ধার্থ বিশ্বাসকে এক্সরে রিপোর্ট দেখানোর পর ওই রোগীকে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। দেড় ঘন্টা ধরে সফল অস্ত্রপোচারের পর করানোর পর রোগীর পেট থেকে ১ কেজি ৬৮০ গ্রামের গয়না ও কিছু পয়সা পাওয়া যায়। এই গোটা অস্ত্রোপচার পক্রিয়ায় সাহায্য করেন সহকারী চিকিৎসক সুমন দে, এনাসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক সুপ্রীয় ভট্টাচার্য ও অরূপ ঘোষ। তবে ওই গয়নাগুলি ছিল পিতল ও তামার ধাতব পদার্থের। আর ছিল ৬০টি ৫ ও ১০ টাকার মূদ্রা। চিকিৎসক সিদ্ধার্থ বিশ্বাস জানান, অস্ত্রোপচার ঝুঁকি পূর্ণ ছিল। কারন রোগীর দেহে হিমোগ্লোবিন ও এ্যলবুমিন কম ছিল। তাই আগে থেকে হোমিগ্লোবিননের জন্য পাঁচ বোতল রক্ত দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। অতিরিক্ত রক্ত মজুত রাখতে হয়। এলবুমিনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য কিত্রিমভাবে প্রোটিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনহাজার টাকা দামের এক একটি ওই ওষুধের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এই এলবুমিনের মাত্রা না বাড়ালে সেলাই করে দেহাংশ জুড়ে দেওয়া অসম্ভব ছিল।
সিদ্ধার্থবাবু জানান, ২০১৭ সালে মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত অবস্থায় ৬৩৯টি পেরেক একজন মহিলার পেট থেকে উদ্ধার করি। তবে এত পরিমান গহনা উদ্ধার চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্ব ইতিহাসে নেই। ওই রোগীর মা মরফিয়া বিবি জানান, তাঁর মেয়ে মানসিক রোগী। বহু চিকিৎসা করিয়ে কোন লাভ হয় নি। বাড়িতে ছোট ছেলের মনোহারি দোকান আছে। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে গয়না ও কয়েন উধাও হয়ে যেত। যার কোন হদিশ পাওয়া যেত না। সেগুলো কোথায় যেত এত দিনে তার হদিশ পাওয়া গেল।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours