রণজিৎগুহ, সমাজসেবী ও লেখক দুর্গাপুরঃ
আমাদের সেজমামা মারা যাওয়ার পর স্মরণসভায় অনেকদিন দেখা হয়না এরকম আত্মীয় পরিজনদের সাথে গল্প গাছা চলছে হঠাতই এক মহিলা একেবারে গায়ের ওপর এসে তার তর্জনি আর বুড়ো আঙ্গুলের ফাকে আমার নাকটা ধরে খিল খিল হাসিতে ভেঙ্গে পড়লেন।আমি থতমত।সকলেই বিষ্মিত। কয়েক সেকেণ্ড পরে আমি তোতলাই মান এ মান এ।সেই মহিলা হাসি না থামিয়ে বলে ওঠেন তোতলামিটাও যায়নি তোর? কিরে চিনতে পারলিনা?মঙ্গোনিগ্রয়েড। এক ঝটকায় সাতান্ন বছরের পর্দাটা সরে গেল। আমার ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটতেই মহিলা আমায় জড়িয়ে ধরেন।কেমন আছিস কোথায় থাকিস এই স্মরণ সভায় কি সম্পর্কে? দ্রুত প্রশ্নগুলো ছুড়ে দেয়।দুজনে পাশাপাশি চেয়ারে বসি।
আমাদের এন্থ্রোপলজি ক্লাসে চারজন মেয়ে ছিল।তারমধ্যে রেখার ভাই একই ইয়ারে ছিল পিয়োর সাইন্সে।ফলে রেখা আমাদের রেখাদি।টুকটাক দু একটা কথা হত।বাকি তিন কন্যার সাথে ভাববাচ্যে। না আপনি না তুমি না তুই। তো ফিল্ড ওয়ার্কে যাওয়া হবে পুরুলিয়ায়।তার আগে বিএম স্যার ক্লাসে নিজেদের মধ্যে মুখমণ্ডলির মাপজোক নেওয়ার কায়দা শেখাচ্ছেন।আমাকে তুলিকা বলে একমেয়ের কপাল নাক থুতনি ও ঠোটের মাপ নিতে বললেন।সে মেয়ে দিব্যি আমার সামনে এসে দাঁড়াল।অন্য ছেলেরা তো হা করে তাকিয়ে আছে। ক্যালিপার নিয়ে আমার হাতের কাঁপুনি থামছে না। সে মেয়ে হাসি ছড়িয়ে বল ওঠে আরে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব।আমার হাত থেকে ক্যালিপার নিয়ে বলে আয় আমি তোর নাক কপাল মাপি।বিএম সম্মতি দেন।খুব গম্ভীর হয়ে কপাল মেপে খাতায় টুকে নাক মাপতে এসে থমকে দাঁড়ায়। স্যার এর নাক ক্যালিপারে মাপা যাবেনা।এমন ধ্যাবরানো।আমি আঙ্গুল দিয়ে মেপে নিচ্ছি।ক্লাসে হাসির রোল।আমার মাথা নীচু অপমানে। সে মেয়ে নির্বিকার।আমার থুতনি ঠেলে তুলে তর্জনি আর বুড়ো আঙ্গুলের ফাঁকে নাকটা ধরে স্যারকে বলল এটা স্যার অস্ট্রোয়েড না নিগ্রোয়েড না মঙ্গোলয়েড ধাচের তবে গায়ের রঙের জন্য মঙ্গোনিগ্রয়েড বলা যায়।আবারও হাসির রোল।
পরে দুদিন কলেজ যাইনি ঠাট্টা বিদ্রুপের ভয়ে।সে মেয়ে আমাদের বাড়ীতে এসে জানিয়ে গেল পুরুলিয়া যাওয়ার ব্যাপারে স্যার সকলকে পরেরদিন ক্লাসে থাকতে বলেছেন। মাথা নিচু কলেজে ঢুকছি রেখাদি আমাকে ডেকে নিল।ক্লাসের অন্য তিন মেয়েও দাঁড়িয়ে। রেখাদি বলল শোন ভাই তুলিকার ফাজলামিতে তুই খুব হ্যাটা হয়েছিস।রাগ করিসনা।মন খারাপ করিসনা।এখন থেকে তুই আমাদের নাম ধরে তুই বলবি।
আমরাও তোকে নাম ধরে ডাকব। তুই জানিসনা আমরাই বিএমকে বলেছিলাম যে ছেলেদের মধ্যে শুধু তুই আমাদের মুখের মাপ নিবি। আর স্টাডি টিমে তুই আমাদের সাথে থাকবি পুরুলিয়ায়।একটা শর্ত তুই অন্য কোন ছেলেকে আমাদের সাথে গল্প করার জন্য ভিড়াবিনা।তুই একটু ভ্যাবলা তাই আগেই বলে দিলাম। তুলিকা বলে আজকে যদি ক্যালিপার হাতে ভ্যাবলার মত করিস তোকে লেঙ্গি মেরে ফেলে দেব।
আধখেচরা কলেজের পাঠ চুকিয়েছি কবেই।লোহা লক্কর হাতুরি বাটালি নিয়ে জীবন কেটে গেল।সেই মেয়েদের চেহারাই মনে নেই।শুনেছি রেখা খুব বড় নেত্রী হয়েছে।অন্যদের কথা কিছুই জানিনা। স্মরণ সভার শেষে সবাই যাওয়ার পথে।আমি ফিরব দুর্গাপুরে।তুলিকার কথা থামেনা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম হ্যারে তোর বরের নাক ধ্যাবড়ানো নাতো? না না পুরো ককেশিয়ান।চোখদুটো মঙ্গোলয়েড ছোট কুতকুতে,ঠোট আফ্রিকান। এর জন্য একটা নতুন গোত্র বানাতে হবে।মঙ্গোস্ট্রনিগককশি। তোর বৌকে আমার গল্প করিস কিন্তু।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours