drama
পূবালী রাণা, লেখিকা, কলকাতা ও শৌভিক দে, লেখক, হাওড়া:


শুরু করছি কথোপকথন ২০১৯। 
এমন একটা সময় দাঁড়িয়ে এই গল্পের চরিত্ররা কথা বলছেন, যখন চিঠির জমানা প্রায় শেষ।তবু চিঠি চাপাটিতেই জমে উঠুক এ যুগের নন্দিনী আর রঞ্জনের কথোপকথনে। কী বলেন?

 রঞ্জন,

          আজ আর কিছু ভালো লাগছে না। বিকেলগুলো বড্ড  গুমোট। এপ্রিলের প্রথম থেকেই বেশ নিয়ম করে কালবৈশাখী হচ্ছিল। ফণীর গতি পাল্টানোর জন্য সব কেমন ওলোট পালট হয়ে গেল! সেই প্রগাঢ় কৃষ্ণবর্ণের মেঘ দেখার বড় সাধ হয়।
ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে জানো!  তখন বোশেখ মাসে রোজ কালবৈশাখী। সূর্যকে ঢেকে ফেলে যখন সে তার রুদ্রমূর্তি প্রস্তুত করত, কোন আমগাছের নীচে সেদিন আমরা হানা দেব সেই প্রস্তুতি আমাদেরও শুরু হয়ে যেত।তখন ভয় ডর কি কিছুই জানতাম না। ওই তীব্র ঝড়ের মধ্যেই আমরা ছুটতাম আম কুড়োতে। ঝড়ের তাণ্ডব শেষে স্বস্তির বৃষ্টিতে আমরা প্রাণ খুলে ভিজতাম।  আমাদের শরীরই শুধু ভিজত না মন ও ভিজত। আমরা আনন্দের রসটুকু আস্বাদন করতাম। 
আজকালের বাচ্চারা কিছুই পায় না। আনন্দ কাকে বলে জানেই না, বোঝেই না। 
বহুদূর থেকে সাদা হয়ে আসা বৃষ্টি ওরা দেখেনি। পাখির বাসা ভেঙে পড়া দেখেনি। গাছ নুয়ে পড়ে মাটি স্পর্শ করা দেখেনি। এখন সব কৃত্রিম মাঠ, কৃত্রিম সাঁতার আর বাকিটা গেজেট।  এক অন্য পৃথিবী।  আমার প্রেমিক একবার বলেছিল কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে আমরা হাত ধরে ভিজব অনেক্ষণ আর হেঁটে যাব অনেকটা পথ। 
সেই স্মৃতির উত্তাপ চাঁদের আলোর মতো এখনো গলে গলে পড়ে আমার বুভুক্ষু হৃদয়ে।  ছাতিমগাছটার মগডালে যে কুবো পাখি দুটো বাসা বেঁধেছিল তারা ভালো আছে তো? সেই বৃষ্টিভেজা ঝড়ের রাতে তাদের দেখবার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে এখনো। সব ফুল  ঝরে যায়নি কিছু বোঁটায়  এখনো  সংলগ্ন। এক ছায়া প্রতিবিম্ব এসে দাঁড়ায় আমার সামনে। হঠাৎ দেখি নিছিদ্র কালোমেঘে ঢেকে গেছে আকাশের মসৃণ মুখ।
                                ইতি
                              নন্দিনী

নন্দিনী,

           "উত্তুরে মেঘ মেখে উত্তর পড়ে থাকে ঢাকা/ বৃষ্টি ফোঁটায়, কাদা ধুয়ে যায়, আমাদের গায়ে লেগে থাকা..."
বৈশাখ বিকেল, কালবোশেখী, তারপর বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি...
সেই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ফুটবল মাঠে কাদায় মাখামাখি হয় কয়েকটা পান্ত
ভুতের জ্যান্ত ছানা।তারপরেই পুকুরে ঝুপ ঝুপ্পুস হুলুস্থূল।নাহ, পুকুরের সেই অনাবিল ঐশ্বর্য আমি পাই নি। তোমার মতন প্রকৃতির কোলে বড় হবার সৌভাগ্য তো সবার হয় না।কাদা মেখে ফুটবল খেলার শেষে আমাদের ভরসা ছিল "টিউকল"! তাও তখন শক্ত শক্ত কলের হ্যাণ্ডেল আর আমাদের কচি কচি হাত।দুজন মিলে হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে পড়লে কলের মুখ থেকে হু হু করে সাদা ফ্যানা তুলে নেমে আসত জল...
জল।জল কে চল, বেলা যে পড়ে এলো। সত্যিই সন্ধে নেমে আসত।বেজে উঠত শাঁখ।একবাড়ি থেকে আরেক বাড়ি সেখান থেকে আরেক বাড়ি ছড়িয়ে যেতে থাকত শাঁখের আওয়াজ। ভালোবাসার মতোন...
এই দেখো, তোমাকে চিঠি লিখতে বসলে এই শব্দটা আমার পিছুই ছাড়তে চায় না।
তো এহেন হ্যাংলাথোরিয়াম আমি কে শাসন করে মূল প্রসঙ্গে ফিরি। বীথি  জানো, আমার অনেক প্রিয় শব্দ আছে।শব্দ বলতে, বলতে চাইছি ধ্বনি। ঠিক এই মুহূর্তে আমাকে ঘিরে রেখেছে এমন ই এক মায়াময় ধ্বনি ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।একটানা... ঝিমঝিম...
ঝিঁঝিঁ আর জোনাকি ছাড়া কি রাত নামে নাকি? নিগূঢ় নিঝুম ঘন রাত। রাত্রি আমার বড় প্রিয়।বড় নিজের।হয়ত তার নির্জনতায়, তার নৈঃশব্দে...
যদিও এই নৈঃশব্দের ও ভাষা আছে। বড়ই ব্যক্তিগত সে ভাষা, কেউ কেউ টের পায়, বোঝে...
জীবনানন্দ পেয়েছিলেন। জ্যোৎস্না ধোওয়া প্রান্তর।ফসল কাটা হয়ে যাওয়া শূন্য মাঠ!
ধ্যাত, কী কথা থেকে কী কথায় চলে আসি আমি।এই হলো আমার মতোন বাচালকে  নিয়ে সমস্যা।
বলছি যে, অনেক অনেক কথা আছে। তাড়াহুড়ো নেই।ধীরে সুস্থে বলা যাবে।আসলে আমি তো তোমার মতন গভীর নই, তাই উতল হয়ে উঠি হাওয়ার মতন।
ভালো থেকো, ভালোবাসা...

                              রঞ্জন

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours