old temple
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ অতীতে মানকরে বহুঞ্জানী গুনী মানুষের বাস ছিল! রঘুনাথ শিরোমনি ও রঘুনন্দন গোস্বামী মানকরের নিকটস্হ মাড়ো গ্রামে জন্মগ্রহন করেন! বর্ধমান মহারাজের দেওয়ান গঙ্গা গোবিন্দ সিংহের গুরুদেব সিদ্ধ সাধক উত্তম ভট্টাচার্য্য মানতরের সন্তান! তাঁর নামাঙ্কিত ' উত্তম সায়র ' দিঘীটি আজও বর্তমান! জনশ্রুতি, সন্ন্যাস গ্রহনের পুর্বে নবদ্বীপ থেকে নিমাই মানকরে এসে শক্তি সাধক উত্তম ভট্ট্চার্য্যের সাথে দেখা করেন! দিনটি ছিল সম্ভবতঃ পৌষ সংক্রান্তি ! তিনি যে স্হানে উত্তম ভট্টাচার্য্যের দেওয়া চিঁড়ে মুড়কি ও পানীয় জল গ্রহন করেন, সেই স্হানে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে তাঁর স্মৃতিতে ভোগ নিবেদন করা হয়! এই গ্রামে আরও কয়েক জন মাতৃসাধক ছিলেন! এঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলেন, সাধক বানীকন্ঠ ভট্টাচার্য্য, কথিত আছে, তাঁর আরাধ্যা দেবী' বড়কালী' মা তাঁরই কন্যার রূপ ধারন করে ' নতুন পুকুর '-এর পাড়ে শাঁখারীর কাছে শাঁখা কিনে পরেছিলেন! 
আর একজন মাতৃসাধক বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য্য ছিলেন বাক সিদ্ধ! মানকরকে নিয়ে কিংবদন্তী আজো লোকের মুখে মুখে ফেরে! মানকরের একপ্রান্তে একটি স্হানের নাম পৌষমুনির ডাঙা,জনশ্রুতি, দ্বাপর যুগে পরশু বা পৌষ নামে একমুনি তাঁর আশ্রম গড়ে তোলেন! পান্ডবরা অঞ্জাতবাসের সময় কিছুকাল এখানে অবস্হান করেছিলেন! এ বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও একটি বিশাল প্রাচীন বটবৃক্ষের নীচে পাথরে খোদিত পঞ্চমূর্তি এবং গ্রাম্য দেবতা পঞ্চাননের অবস্হান এখানে পান্ডবদের অবস্হানের বিষটির পক্ষের,মত দৃঢ় করে! আর একটি কিংবদন্তীকে রাজাদের করে বিতর্ক আছে! নবাব আলিবর্দী খাঁ ১৭৪৪ খ্রীঃ বর্গীনেতা ভাষ্কর পন্ডিতের সাথে সন্ধির জন্য মানকর গ্রামের পূর্বপ্রান্তে 'সভাবরন 'বা 'সভা হরন' নামক স্হানে মিলিত হয়ে সুকৌশলে ভাষ্কর পন্ডিত ও তাঁর ঘনিষ্ট সহচর কে হত্যা করে মানকরের ভোলার বেড়া নামক স্হানে সমাধিস্হ করেন! আজও দুটি সধাধি মন্দির অতীতে আলিবর্দী খাঁর বিশ্বসঘাতকতার সাক্ষ্য বহন করছে! অবশ্য এই মানকরেই ভাষ্কর পন্ডিতকে হত্যা করা হয়েছিল এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে! কল্পনা ভৌমিক তাঁর ' নবাবী অন্দর মহল ' গ্রন্হে উল্লেখ করেছেন মু্র্শিদাবাদ স্টেশন থেকে ১৮ তিনি দক্ষিনে সারগাছি ও বহরমপুরের মাঝে. ' মানকরা ' নামে একটি বৃহৎ জলাশয় আছে! মারাঠা বর্গীহামলায় দিশেহারা আলিবর্দী খাঁ মারাঠা সেনাপতি ভাষ্কর পন্ডিতকে সন্ধির ছলে এনে এখানে ২১ জন সহচর সহ তাঁকে গুপ্তহত্যা করান! ভাষ্কর পন্ডিতকে আলিবর্দীর নির্দ্দেশে মিরজাফরের ভাই মীরকাজেম আলি খাঁ হত্যা করেন! এই ঝিল বা দীঘিটি ভাষ্করদহ নামে পরিচিত! 
 নিশিকান্ত বসু রায়, তাঁর 'বঙ্গে বর্গী ' নাটকে উল্লেখ করেন ' মানকরে নবাব শিবির মন্ত্রনা কক্ষ' অমরার গড়ের সন্নিকটে 'সভবরন ' স্হানে স্হাপন করা হয়েছিল আলিবর্দী ও ভাষ্কর পন্ডিতের সন্ধির জন্য! তবে একথা ঠিক মানকরের পুর্বপ্রান্তে ' সভাবরন ' স্হানটি সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারের সাক্ষ্য বহন করছে! (চলবে)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours