ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ
কাঁকসার গোপ রাজ বংশ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শুরু হ'ল মুসলিম শাসন! ক্ষমতাচ্যুত রাজ্যহারা প্রতাপাদিত্য আশ্রয় নিলেন উৎগড়ে ! তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সাত পুত্র বিভিন্ন স্হানে বসতি স্হাপন করলেন! জ্যেষ্ঠ পুত্র রনসিংহ রায় হুগলী জেলার নন্দপুরে বসতি গড়ে তোলেন! পরবর্তীকালে তাঁর বংশধররা নিকটবর্তী চক্রপুর,কোটারপুর ও রাধাকৃষ্নপুরের জমিদারী লাভ করেন!কনিষ্ঠপুত্র শত্রুভান নিকটবর্তী বিলাসপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন! প্রতাপাদিত্যের অন্য পুত্ররা উৎগড় ও কাঁকসা ত্যাগ করে বর্ধমানের অন্যত্র এবং বীরভুম, হুগলী, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জেলায় স্হায়ীভাবে বসতি স্হাপন করেন! এই বংশের পদবী ছিল রাও পরে 'রায়' পদবীতে পরিনত হয়! কিন্তু এরা রাজ্যের বিভিন্ন স্হানে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন পদবী গ্রহন করেন! কোথাও 'রায়' 'রায় চৌধুরী ' 'চৌধুরী ' 'কুমার ' 'কোনার ' ও সিংহ ! এই বংশের উল্লেখযোগ্য খ্যাতিমান ব্যক্তির একজন হলেন ভুবনেশ্বর রায়, যিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের অধীন জমিদার ছিলেন! অন্যজন হলেন নিধিরাম রায়, যিনি বাংলা, সংস্কৃত ও আরবী ভাষায় শুধু সুপন্ডিত ছিলেন না, তিনি ছিলেন বীরযোদ্ধা!
১৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দে দিল্লীর সম্রাট আকবরের সাথে রাজমহলের যুদ্ধে বঙ্গেশ্বর দাউদ খাঁ পরাজিত ও নিহত হলে সমগ্র বাংলা মুঘল অধিকার ভুক্ত হয়!
কিন্তু তখনও বাংলার বার ভুঁইয়ারা আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেনি! তাই আকবর মানসিংহকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন! সেই সময় নিধিরাম রায়ের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সেনাধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করেন! পরে তাঁ সাহসিকতা ও কর্মকুশলতার পরিচয় পেয়ে স্বয়ং দিল্লীশ্বর তাঁকে সন্মান সূচক 'চতুর্ঘরীন 'চৌধুরী উপাধী প্রদান করেন! সেই থেকে এই পরিবার রায় চৌধুরী বা চৌধুরী পদবী ব্যবহার করতে থাকেন! এই বংশের মোক্ষদা প্রসাদ রায় চৌধুরী ' সদগোপ কুলীন সংহিতা ' গ্রন্হ রচনা করেন!
কাঁকসার রাজাদের আর অস্তিত্ব নেই আজ, কিন্তু তাঁদের কীর্তি কাহিনী মুছে যায়নি! কাঁকসার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কাঁকসার রাজপরিবারের পুরাকীর্তি ! কাঁকসা রাজ্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ কঙ্কেশ্বর রাও তাঁদের কুলদেবতা কঙ্কেশ্বর শিবের প্রতিষ্ঠা করেন! এই শিবের নামানুসারেই এই জনপদের নাম করন হয় কাঁকসা!
এই শিবলঙ্গটি স্হানীয় বেলে পাথরে নির্মিত প্রস্তর খন্ড বিশেষ,যেটিকে বীরস্তম্ভও বলা হয়! কঙ্কেশ্বর শিবলিঙ্গটিও প্রাচীন বীরস্তম্ভ বলেই মনে হয়! কঙ্কেশ্বর শিব মন্দিরের পশ্চিমে 'জীবিত কুন্ড' ব শিবগড়ে ও কাঁকসা গ্রামের বিভিন্ন স্হান থেকে প্রাচীন বেশ কিছু পুরাকীর্তি আবিস্কৃত হয়েছে! এর মধ্যে রয়েছে দুটি ব্রোঞ্জের মূর্তি একটি লোকেশ্বর বুদ্ধের অন্যটি যম্ভল মূর্তি, এগুলি আনুমানিক খ্রীঃ নবম দশম শতকের ! বর্তমানে মুর্তিদুটি গ্রামের দেবপদ দাসের বাড়ী আছে! এছাড়া সুশীল বসুর বাড়ীতে রয়েছে দু'টি ভগ্ন বিষ্নু মূর্তি, বিজন চক্রবর্তীর বাড়িতে পুজিত হয় বেলে পাথরের বিষ্নু মূর্তি ! এই মূর্তিগুলির নির্মানকাল আনুমানিক শ্রী নবম দশম শতক!
এই মূর্তিগুলি আবিস্কারের ফলে এটা জানা যায় এই দেবমূর্তিগুলি পাল যুগের মধ্যবর্তী সময়ের এবং কাঁকসার রাজপরিবারও ঐ সময়ে কাঁকসায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তাঁরা শৈব হলেও বিষ্নুদেবেরও উপাসক ছিলেন!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours