fiture
মহ: এনামুল হক, ফিচার রাইটার, বর্ধমান: রংচঙে মন্দির। বড় বড় ইমারত দিয়ে তৈরী করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিগ্রহই উপেক্ষিত। বটের নামাল (ঝুড়ি) যেমন মূল কান্ড থেকে নেমে এসে মাটি স্পর্শ করতে মরনপণ লড়াই করে ঠিক তেমনি পার্শ্ব শিক্ষকদের অবস্থা। একটা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়েও ঝুড়ির ন্যায় আমরন কাল ঝুলে থাকা মাটির স্পর্শ পাবার আশায়। মূল কান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নয় ঠিকই কিন্তু কান্ডের ন্যায় শক্ত পোক্তও নয়। ফলে প্রাণ রক্ষার তাগিদে পরনির্ভরশীল হয়েই থাকা এক প্রকার বলা যেতে পারে। পার্শ্ব শিক্ষকদের জন্য পূর্ণ শিক্ষকদের ন্যায় বেতনের দাবি করি। গ্রাম বাংলার ছেলে মেয়ে রা সরকার পরিচালিত বা সরকারি স্কুল কলেজের প্রতি নির্ভরশীল। এরা বাংলা বোর্ড থেকেই পড়াশোনা করে জীবনের সেই সুপ্ত লক্ষে এগিয়ে চলে। একই যোগ্যতা মান থাকা সত্ত্বেও পূর্ণ শিক্ষকদের সাথে পার্শ্ব শিক্ষকদের প্রতি বেতন বৈসাম্যর বঞ্চনা অযৌক্তিক এবং অমানবিক বলেই মনে করি। কাজের বিনিময়ে উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাওয়া সকলের ন্যায্য অধিকার। এই অধিকার কেড়ে নিয়ে, শাসনের যাঁতাকলে পার্শ্ব শিক্ষকদের পেষাই করা হয়। এই সকল কিছুর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে ছাত্র বা পড়ুয়াদের উপর। 


ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে পড়ুয়াদেরই। সমাজের এলিট শ্রেণীর মানুষরা তাদের সন্তানদের রাজ্যের বাংলা বোর্ডে ভর্তি করান না। তাদের সন্তানদের দিল্লি বোর্ডের মাধ্যমে পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। ফলে এলিট শ্রেণীর মানুষ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসবেন না। তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম থাকবেন কিছু জ্ঞানী মানুষ অবশ্যই। সরকারি বিদ্যালয় গুলো কে রাজ্যের সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষিত বা মানুষ করে তোলার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হলে পার্শ্ব শিক্ষকদের প্রতি সরকার কে আরও আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের কে উপযুক্ত বেতন প্রদানের জন্য চেষ্টা করতে হবে। পেটে খিদে রেখে অন্যের সন্তান কে শিক্ষিত করে তুলতে পারে না। পারবে না। হয় তো কর্মাভাবেই শিক্ষিত ছেলে মেয়ে রা সেখানে শিক্ষকতার মতো একটা মহান পেশায় পার্শ্ব শিক্ষকতার কাজ করতে একরকম বাধ্য হয়েছে ঠিকই কিন্তু একজন সাধারণ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের থেকেও কম বেতনে কাজ করে নিজেকে কতটুকু সন্তুষ্ট করতে পারবে, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পার্শ্ব শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কে সুনিশ্চিত করার দ্বায়বদ্ধতা সরকারের। কারণ রাজ্যের জনগণের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জড়িত ঐ সকল সরকারি বিদ্যালয়ের উপর। যাদের নিজেদের ভবিষ্যতের ঠিকানা নেই তারা কোন যাদুবলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতে নিয়ে আন্তরিক ভাবে যত্নবান হবে? পার্শ্ব শিক্ষকরা উপযুক্ত ভাবে পূর্ণ শিক্ষকদের সমতুল্য বেতন পাক। তারা পূর্ণ মর্যাদার সাথে চিন্তা মুক্ত হয়ে আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠুক। 'পেটে খিদে মুখে লাজ 'এমনটা চলতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে আমি মন্দির সমজ্ঞানে শ্রদ্ধা করি। 

আর ঐ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কে বিগ্রহ মনে করেই ভক্তি করি। সেখানে বিগ্রহই যদি অবহেলিত হন তবে সেই মন্দিরে পূজা পাঠ ও নৈবদ্যের ডালি পাঠিয়ে কি হবে? আমি একজন সাধারণ অভিভাবক। আজও, না মানুষ হতে পেরেছি, না মুনিষ হতে পারছি।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours