সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায়, ফিচার লেখিকা , কলকাতা : "তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা মন জানো না" , প্রচলিত এই লোকগানটি মানুষে মানুষে সেতু বন্ধনের জন্যই গেয়েছিলেন কোনকালে কোন এক বাউল , মানবতাই যার ধর্ম । আসলে মানবহৃদয়ই যে সবচেয়ে বড় দেবালয় তার জ্বলন্ত নিদর্শন হয়তো এই দক্ষিণেশ্বর । তাই তো আড়িয়াদহ ও দক্ষিণেশ্বর মিলিয়ে যে গ্রাম শত সহস্র বর্ষের ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গঙ্গাকে নীরব সঙ্গী করে , সেইখানেই কখনও কাজী সাহেব হরিধ্বনি দিয়ে ওঠেন অজান্তেই আবার কখনো ব্রাহ্মণ পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতায় মায়ের পুজোর দায়ভার গ্রহণ করে তাঁতি পরিবার । মানবের ঘরেই তাই বারবার আশ্রয় নিয়েছেন দেবদেবীরা এবং কবে যেন ঈশ্বর আর মানুষ অবিচ্ছেদ্য হয়ে গেছেন । গত সাতটি পর্বে আমরা যেকটি স্থানের কাহিনী পড়েছি , বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক মানুষের চোখে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু কাহিনী অলৌকিক মনে হতে পারে ।
তবু ধর্মই এদেশে বহু মানুষের সম্বল । পুত্রহারা মা যে বালগোপালের মুর্তিকে বুকে জড়িয়ে তাতেই সন্তান সুখ লাভ করেন এ ঘটনা তাই অবাক করে না আমাদের । প্রায় পাঁচশো বছরের ধর্মীয় ইতিহাসে তাইজন্যই দক্ষিণেশ্বর এক অন্যতম নাম , শুধু দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের জন্যই নয় বরং আরো সুপ্রাচীন কাল থেকে যে বিভিন্ন দেবদেবীর এই গ্রামের বিভিন্ন ঘরে আগমন এবং স্থায়ীত্ব তার জন্যও বটে । চৈতন্য যুগ , রাষ্ট্রকূট বংশ , বর্গি আক্রমন পরবর্তী তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ , নকশাল যুগ ইতিহাসের এই সমস্ত অধ্যায়গুলোর সাথে দক্ষিণেশ্বর ও আড়িয়াদহেের পাঠবাড়ী , বুড়োশিব, বিন্ধবাসিনী পুজো , দোল পিঁড়ি ও শীতলা বাড়ির ইতিহাস কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় ।
আড়িয়াদহ দক্ষিণেশ্বরের এই প্রাচীন ইতিহাসের কথা আমাদের জানান সুবোধ রায় , নিত্যধন ভট্টাচার্যের মতো আড়িয়াদহের গর্বরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে । এছাড়াও এ গ্রামের প্রতি রাস্তায় , বয়স্কদের আলাপচারিতায় , পুরোন ইঁটের পাঁঁচিলে কান পাতলেই আজও শোনা যায় তাদের পদধ্বনি , দেবমাহাত্ম্যে যে স্থান ঋদ্ধ অনাদিকালের ইতিহাস বুকে নিয়ে ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours