রাজশ্রী মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, ঝাড়খণ্ড:
পাবলিয়াস ওভিড ছিলেন প্রাচীন রোমের মহান কবি।তিনি খ্রিস্টপূর্ব 43 সনে জন্মগ্রহণ করেন ।তাঁর প্রমুখ কাব্যগ্রন্থগুলি ছিল হল "মেটামরফসিস","হেরোইডস্","মেডিক্যামিনা ফেসেই ফেমেনি(উইমেন্স ফেসিয়াল কসমেটিক্স)","আরস্ অ্যামেটোরিয়া(দি আর্ট অফ লাভ)" ও আরো অনেক ।তবে এখানে "আরস্ অ্যামেটোরিয়া"র কথাই বলব যা তাঁর জীবনে বিপর্যয় এনে দিয়েছিল ।এই কাব্যগ্রন্থটি শিক্ষামূলক কিন্তু এতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে যে কিভাবে পুরুষরা নারীসঙ্গী ও নারীরা পুরুষসঙ্গী যোগাড় করবেন ।যা বহু শতাব্দী ধরে ইতালি তথা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনৈতিক হিসেবে গ্রাহ্য হয়েছে।
গ্রন্থটির তিনটি ভাগ আছে।প্রথম ভাগটি পুরুষদের উদ্দেশ্যে লেখা।এখানে শুরুতে, প্রেমের দেবতা,ভেনাস বা শুক্রকে স্মরণ করা হয়েছে এবং এরপর শেখান হয়েছে যে পুরুষরা কোথা কোথা থেকে নারী সঙ্গিনী খুঁজে পেতে পারেন আর কিভাবে তাঁদের আকৃষ্ট করতে পারেন ।
এরজন্য তিনি কিছু বিশেষ স্থানের উল্লেখ করেছেন যেমন নাট্যস্থল,শোভাযাত্রা, ক্রীড়াস্থল ও ভোজসভা।সেখানেও কিভাবে সঠিক সময় নির্বাচন করে নারীকে প্রেম নিবেদন করতে হবে, সেকথাও তিনি বলেছেন ।
গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাগটিও পুরুষদের উদ্দেশ্যেই লেখা ।এখানে তিনি প্রথমে আইকারাসের কাহিনি বর্ণনা করেছেন ।আইকারাস ছিল এক প্রাচীন গ্রীসের পৌরাণিক গল্পের চরিত্র ।আইকারাসের দুটো ডানা ছিল ও তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি যাতে খুব বেশি উঁচুতে না ওড়েন যাতে ,সূর্যের তাপে তাঁর ডানাটা জ্বলে যেতে পারে আবার খুব বেশি নীচেও যেন না নেমে যান যাতে তাঁর সমুদ্রের জলে তাঁর ডানা ভিজে নষ্ট না হয়ে যায় ।কিন্তু তিনি তাঁর পিতার কথা না শুনে, উড়ে সূর্যের কাছে চলে যান ও পাখা জ্বলে গিয়ে আবার সমুদ্রে পড়ে গিয়ে ডুবে যান।এই গল্পটা এখানে অবতারণার কারণ হল তিনি প্রেমের ব্যাপারে ভারসাম্যে বিশ্বাসী ছিলেন তব ।প্রথমত তিনি প্রাচীন নিয়মকে ভেঙে নারী ও পুরুষের সাম্য আনার চেষ্টা করেছিলেন।এছাড়াও নারীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে আতিশয্যপূর্ণ কিছু করতেও মানা করেছেন ।তিনি পুরুষদের বলেছেন যে উপহার ,সংখ্যায় কিন্তু সুরুচিপূর্ণ দেওয়া উচিত ।এছাড়া নারীকে পূর্ণ সম্মান দিতে বলেন ।তাঁদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে মানা করেন।এইভাবে তিনি, যে প্রাচীন সমাজে পুরুষদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি ভাঙবার চেষ্টা করে।তবে এই গ্রন্থটি শিক্ষার উদ্দেশ্যে রচিত হলেও, হালকাভাবে লেখা ।তিনি পুরুষদের বলেছেন প্রেমিকার মনে ঈর্ষার উদ্রেক করতে ও কখনও তাঁদের বয়স জিজ্ঞাসা না করতে।
তৃতীয় ভাগটি নারীদের জন্য লেখা ,তাঁরা পুরুষদের কাছে কিভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবেন সেই ব্যাপারে বিশেষ জোর দিয়েছেন।এখানে তাঁদের পোষাক আষাক ,প্রসাধনী, গয়না,হাঁটা চলা ,বাচনভঙ্গি ও অন্যান্য কলায় পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে ।তবে তাঁর মতে সবকিছুই পরিমিতভাবে করা উচিত ।এছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে ঠগ ও অসৎ পুরুষদের থেকে সাবধান থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন ।
তিনি যৌন ক্রিয়ার সম্পর্কেও লিখেছেন কিন্তু তাঁর লেখার মধ্যে অশালীনতাকে তিনি কখনও ই আসতে দেননি।
তবুও তিনি এই গ্রন্থটির জন্য অগাস্টাস সিজারের কোপে পড়েন এবং তাঁকে তাঁকে কৃষ্ণ সাগরের এক নির্জন শহর,টমিসে কোস্টানজা) নির্বাসিত করা হয় ।তাঁর এই কাব্যকে অনৈতিক বলে আখ্যা দেওয়া হয় ।পরে একাদশ ও দ্বাদশ শতকে, ইতালিতে এই পুস্তককে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হলেও আবার 1497খ্রিস্টাব্দে তা আবার নিষিদ্ধ হয়।ইংরেজি নাট্যকার, ক্রিস্টোফার মার্লো এটির ইংরেজীতে অনুবাদ করলে,তা আবার 1599 সনে ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ হয়ে যায় ও উনবিংশ শতক পর্যন্ত এটিকে অনৈতিক হিসেবেই চিহ্নিত করা থাকে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours