রণজিৎ গুহ, প্রাক্তন ইস্পাত কর্মী, সমাজকর্মী ও লেখক:
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম সমূহ এবং এগুলোর আনুষ্ঠানিক আচার বিচার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের মানব ধর্ম থেকে বিচ্যুত করে।ধর্ম হল আপন প্রকৃতি। প্রকৃতি দত্ত স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। জড় বা জীব সকলেরই নিজস্ব ধরণ আছে। জড়ের ক্ষেত্রে বা না-মানুষ প্রাণীদের ক্ষেত্রে এই স্বকীয়তার উত্তরণ ঘটেনা। ভেদাভেদও অনুপস্থিত। মানব জীবনে প্রতি একক ব্যাক্তিত্ব পৃথক বৈশিষ্ঠ্যে সমুজ্জ্বল। অর্থাৎ ধর্ম কি?প্রকৃতি নির্দিষ্ট করণীয় কর্ম।মানুষের কি ধর্ম?মানুষের জন্য প্রকৃতির কি নির্দেশ? এখানেই বাস্তব বিতর্ক বিরাজিত।
মানুষ অন্য প্রাণীদের মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ্যে সন্তুষ্ট থাকবে? প্রকৃতিও কি তাই চায়? মানুষের জন্য প্রকৃতির অনুজ্ঞার স্বরূপ বোঝা যাবে কিভাবে? প্রাজ্ঞজন বলছেন আমাদের অন্তঃস্থিত শক্তির নিরন্তর জাগরূক করাই আমাদের ধর্ম।অন্তঃস্থিত মেধা মনন দক্ষতাকে উৎকর্ষতার শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই ধর্মানুশীলন।এই ধর্মানুশীলনে বাইরের কিছু ইন্ধন আবশ্যিক। যা কিনা স্বভাব স্বকীয়তায় বেড়ে ওঠার সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করে।কিন্তু কেন এই ধর্মানুশীলন? এই অনুশীলন এই সাধনাই ঈশ্বর সমীপে পৌঁছানোর সোপান। কোন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিত্য অভ্যাসের আবশ্যিকতা?ঈশ্বরের স্বরূপটি কেমন? যে উৎকর্ষতার লক্ষ্যে মানবের যাত্রা সেই উৎকর্ষর পরিমাপ কিভাবে হবে?কোথায় তার সীমানা? কোথায় শেষ হবে সাধনা? গন্তব্যের অন্তিম বিন্দুটি কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর না জেনেই ক্রমাগত অভিযান ই মানব প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য। এই যে অজ্ঞেয়, অসীম, অনন্ত, অশেষ লক্ষ্য( target) যা কিনা স্পর্শ করা যায়না আয়ত্তাধীন হয়না অথচ নিরন্তর প্রাণীত করে। এই অজানা লক্ষ্য বিন্দুকে কেউ ঈশ্বর নামে অভিহিত করলে গুরুতর আপত্তির কারণ দেখিনা।একজন সেতার বাদক বা ফুটবল খেলোয়াড় উৎকর্ষ অভিযানে এভাবেই ঈশ্বর প্রাপ্তির দিকে ক্রম-অগ্রসরমান হন।এই ঈশ্বর কোনও পূজ্য নিয়ন্ত্রক নয়। ন্যায় অন্যায়ের হিসাব রক্ষকও নয়। নেই অথচ আছে। মানব উৎকর্ষতার সম্ভাব্য চুড়ান্ত বিন্দুর অনুপম মানবিক কল্পনার অপর নাম ঈশ্বর। এই ঈশ্বরকে আমাদের বড়ই প্রয়োজন।স্থবিরতার সকল বাঁধা ঠেলে ক্রমাগত এগিয়ে চলার দিশা যোগায় এই নিজস্ব ঈশ্বর।
এই ঈশ্বর নাস্তিকতা আস্তিকতা বিতর্কের সাথে সম্পর্ক রহিত।
গভীর প্রজ্ঞা বা উপলব্ধির বিকল্পে তীব্র কর্মতৎপরতা ঐ ঈশ্বর নিকটবর্তী লক্ষ্যে পৌঁছাবার অন্যতম নিশ্চিত পথরেখা হতেই পারে। প্রত্যেক ব্যাক্তি মানবের পৃথক ঈশ্বর। পৃথক উপাচারে পূজার্চনা।কোনও পরিসরেই কোন সার্বভৌম বা সর্বমান্য আচার পদ্ধতি গ্রাহ্যই হতে পারেনা।সেরকম উদ্যম মানব প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণ করে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours