চিত্রলেখা সান্যাল, ফিচার রাইটার, কলকাতা:
জব ভী কো ই কঙ্গনা বোলে পায়েল ছনক জায়ে
শোয়ি শোয়ি দিল কি ধড়কন সুলগ সুলগ জায়ে
কঁহু যতন লাখ মগর মন মচল মচল জায়ে......
দূর থেকে ভেসে এলো কিশোরকুমারের সেই বিখ্যাত গানটা!একদল অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে গানটি রিমিক চালিয়ে হুল্লোড় করছে বীচের মধ্যে। হটাৎই সুচিত্রার মনটা মোচড় দিয়ে উঠল! দিন কয়েক আগে সব স্কুলের বন্ধুরা শলাপরামর্শ করে প্রায় ২০ জন গোয়ায় এসে হাজির হয়েছে।বন্ধুরা আগে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই এই সুচিত্রার সঙ্গে।মা ছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ভক্ত,তাই ফুটফুটে প্রথম কন্যাটির নাম রাখলেন তারই নামের অনুকরণে।বলাবাহুল্য রূপেযৌবনে সুচিত্রা তার মাতৃদত্ত নামটিকে সার্থক করে বর্তমানে একজন সরকারি গেজেটেড অফিসারের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মা।দেখতে দেখতে সন্তানেরা প্রতিষ্ঠিত এবং বিবাহিত হলে সুচিত্রার এখন অখণ্ড অবসর।এরই মধ্যে একদিন ফেসবুকের দৌলতে স্কুল- কলেজ জীবনের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে জমাটি আড্ডায় ঠিক হল সবাই মিলে গোয়া বেড়াতে যাওয়া হবে।হাসব্যান্ডদের বাদ দেওয়া হল,কারণ তারা যেখানেই যান নিজেদের স্ত্রীর নিন্দা করতে ভোলেন না! কয়েকদিনের জন্য সবাই মিলে বেড়াতে যাবে,সেখানেও নাকি টিকটিক!সবাই এক কথাতেই স্বামীদের বাদ দিয়ে দিল।অসুবিধার তো কিছু নেই,কারণ সকলে বিগতযৌবনা আর প্রত্যেকেরই সন্তানেরা বিবাহিত এবং প্রতিষ্ঠিত। সেই সঙ্গে সব বন্ধুরা মিলে ঠিক করল , যতই আমাদের বয়স হোক না কেন আমরা সবাই যৌবনেরই দূত! অতএব প্রত্যেকে সঙ্গে নেবে একটা করে হট প্যান্ট আর গেঞ্জি।কেউ কেউ গাঁইগুঁই করলেও তাদের বোঝানো হল সঙ্গে পরিবারের কেউ তো আর যাচ্ছেনা! তাছাড়া গোয়া এই বাংলা থেকে অনেক দূরে! কে দেখবে আমাদের এই পোশাক। যাই হোক গোয়ায় এসে সবাই অনাবিল আনন্দে ভেসে গেল! সারাদিন খালি গল্প আর আড্ডা। কখনো বীচে বসে, কখনো বা হোটেলের লবিতে।হাহা হোহো হাসিতে গোটা চত্বর মুখোরিত হয়ে উঠল। দীর্ঘ দিনের জমানো গল্প যেন লাভার স্রোতের মতো বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে।কি জানি কেন
এতো গল্প - আড্ডার মধ্যেও সুচিত্রার চোখ বারবার চলে যাচ্ছিল সামনের ব্যালকনিতে ।যেখানে একজন সুদর্শন সুপুরুষ বিদেশী যুবক নানা আছিলায় ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াচ্ছে আর সুচিত্রাদের দিকে বারবার তাকাচ্ছে! মহুয়া,দেবশ্রীরা হাসতে হাসতে সুচিত্রাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে লাগল মজার ছলে।সুচিত্রাও এটাকে নিছক মজা হিসেবে গ্রহণ করে হাসাহাসিতে যোগ দিল।এই বয়সে প্রেম!! কিন্তু ভাগ্য দেবী অলক্ষ্যে মনে হয় হাসছিলেন!একদিন সুচিত্রা তার হলুদ হট প্যান্ট আর লাল গেঞ্জিতে অপ্সরা হয়ে বীচে বালুতে পা ডোবাতে ডোবাতে বাচ্চা মেয়েদের মতো ছোটাছুটি করছিল।হটাৎ একটা বিশাল ধাক্কা খেয়ে টাল সামলাতে না পেয়ে যার গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল, তার মুখটা দেখেই ভয়ে আনন্দে বিহ্বল হয়ে গেল! একি! এ কাকে দেখছে! এতো সেই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা সুপুরুষটা! যাকে মনে মনে ডেকেছেন স্বপ্নের সিলভাস্টোর স্ট্যালোন বলে।সেই একমাথা কোঁকড়া চুল, সেই সারল্য মাখানো হাসি,সেই পেশিবহুল বাহু! সরি বলে চলে যেতে উদ্যত হলেই পেছন থেকে একটা গলার স্বর ভেসে আসল।তারপর? এই কয়দিন যত না বন্ধুদের সঙ্গে সময় কেটেছে,তার চাইতে বেশি সময় কাটতে লাগল স্ট্যালোনের সঙ্গে।হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসতে লাগল সুচিত্রা সেই ১৮ বছরের কিশোরীর মতো! বন্ধুরা একটু অপছন্দ করছিল ঠিকই,সেইসঙ্গে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ বোঝাচ্ছিল যে এটা ঠিক নয়,কিন্তু কে কাকে বোঝায়! সুচিত্রা বিভোর হয়ে ভুলে গেল প্রবীর আর তার সন্তানদের কথা! এবার ঘরে ফেরার পালা।সবাই সুটকেস গোছাতে ব্যস্ত,শুধু সুচিত্রা জানলার কাছে উদাসভাবে দাঁড়িয়ে আছে! মাঝেমাঝে দুই চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসছে।বন্ধুদের মুখও বেশ থমথমে।সবাই সুচিত্রাকে নিয়ে তার হাসব্যান্ডের হাতে ফেরত দিতে পারলে বাঁচে! যাওয়ার আগের দিন স্ট্যালোন দেখা করতে আসল হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে।সুচিত্রার চোখের জলের বাঁধ ভেঙ্গে পরল।তারপর কি হল? হ্যাঁ প্রতি বছর একবার করে সুচিত্রা ছুটে যেত গোয়ায়
স্ট্যালোনের খোঁজে,কখনও একা, কখনও বা সাথে কেউ।কিন্তু না, ১০ বছর হয়ে গেল আজ পর্যন্ত স্ট্যালোনের খোঁজ সুচিত্রা পায় নি।হয়ত নিজের দেশে ফিরে গেছে সে!সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুচিত্রার মন যে বরই অবুঝ! আজও বীচের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্ট্যালোনকে অনুভব করে সে। প্রত্যেক বারই বুক থেকে বেড়িয়ে আসে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস। তবুও হাল ছাড়তে পারেনি সুচিত্রা।
তাই যারা ভবিষ্যতে গোয়া যাওয়ার কথা ভাবছেন তারা কিন্তু সাবধানে হট প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়বেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours