হীরক মুখোপাধ্যায়, লেখক,হাওড়াঃ
ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলার রেলপথের ইতিহাস 15 ই আগস্ট এর দিন মিলেমিশে একাকার। 1854 সালের 15 ই আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি হাওড়া হুগলির মধ্যে চব্বিশ মাইল পথে প্রথম রেল চলাচলের ব্যবস্থা করে। 2 ফুট ন্যারো গেজের লাইনে এই রেল পরিষেবা শুরু হয়। এই সময় এই সময় সড়ক পথের পাশাপাশি ছোট বগীর এই ট্রেন কু ঝিক ঝিক করতে করতে দুলকি চালে চলাচল শুরু করে।
এই 2লাইনের রেলওয়ে প্রকৃত নাম ছিল হাওড়া আমতা লাইট রেলওয়ে অর্থাৎ (এইচ এ এল আর)। বর্তমানে রেল মানচিত্র থেকে এই ন্যারো গেজ এর লাইন মুছে গেলেও হাওড়া আমতা বাসীর মনে আজ ও মার্টিন ট্রেন স্মৃতির মনিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে।
এই ট্রেনের সাথে জড়িয়ে আছে এক ইংরেজ ব্যবসায়ীর নাম তিনি হলেন স্যার টমাস অ্যাকুইনাস মার্টিন ।
হাওড়া থেকে আমতা পর্যন্ত প্রান্তিক দুটি স্টেশন বাদ দিলে প্রায় 18 19 টা মধ্যবর্তী স্টেশন ছিল। এই ছোট ট্রেন তেল কল ঘাটের প্রান্তিক স্টেশন থেকে ধোঁয়া উড়িয়ে যাত্রা শুরু করতো এরপর হাওড়া ময়দান কে এক প্রান্তে রেখে ব্যাঁটরা হয়ে কদমতলা স্টেশন পৌঁছাতো। এরপর দাসনগর হয়ে মাকড়দহ রোডের পাশ দিয়ে লাইনটি একে একে বালিটিকুরি, বাঁকড়া, মাকড়দহ, ডোমজুড়, দক্ষিণ বাড়ি হয়ে বড়গাছিয়া পৌঁছাতো। সেখান থেকে একটি লাইন চাপাডাঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রধান লাইনটি পাঁতিহাল মুন্সিরহাট হয়ে মাজু ,জালালসি, পানপুর ,হরিদাসপুর হয়ে আমতা পৌঁছাতো।
হাওড়া থেকে আমতা ছোট লাইনের মার্টিন রেল হাওড়া বাসীর কাছে ছিল আপন জনের মত।
কলকাতা ছাড়লেই দামোদরের পূর্ব তীরের ছবির মত জনপদ আমতা। হাওড়া জেলা জুড়ে যে বিশাল গ্রামীণ এলাকা ছিল তার মধ্যে সেই সময়ে আমি তাকেই ব্রিটিশ আমলে শহর বলে গণ্য করা হতো। এই লাইনের প্রধান স্থপতি ছিলেন স্যার বীরেন মুখোপাধ্যায়। যার হাত ধরে হাওড়া ময়দান ফাঁসি তলার মোড় থেকে আমতা পর্যন্ত ছোট লাইনের এই রেল কারোর বাড়ির উঠোন দিয়ে ,কারোর বাড়ির বাগান দিয়ে ইঞ্জিনের কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে যেত তার গন্তব্যস্থলের দিকে। অনেক মজাদার গল্প এই মাটির রেল কে নিয়ে প্রচলিত আছে। শোনা কথা কেউ আত্মঘাতী হওয়ার জন্য এর রেলপথে শুয়ে পড়লে চালক ট্রেন থামিয়ে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিত। এই ট্রেনের সাথে বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার যোগাযোগ ছিল আত্মিক। বোম্বের গুরুদত্ত এই ট্রেনে শুটিং করেছিলেন ।এছাড়া দীনেন গুপ্তের "নতুন পাতা "অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত জয়া ভাদুড়ি অভিনীত" ধন্যি মেয়ে" এর শুটিং এইট্রেনে হয়েছিল। ১৯৭১ সালে এই ট্রেন চলাচল বন্ধ হলেও আজও হাওড়া আমতার মানুষ এই ট্রেনের নামে নস্টালজিক হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্টেশন সংলগ্ন যেসব সাইনবোর্ড এবং ছবি সেই সময় ছিল তা আজও দেখতে পাওয়া যায়।
আমার কাছেও পুরানো সেই মার্টিন ট্রেনের বোর্ডের উপর প্রিন্টিং করা টিকিট ছিল কিন্তু যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে খোঁজ করলে আজও হয়তো কারো কারো কাছে মার্টিন ট্রেনের টিকিট পাওয়া যেতে পারে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours