জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
আজ ২০১৯ এর পরিনতি হিসেবে যখন, মানুষকে লিঞ্চ করে মেরে ফেলাটা, অনেকে বলছেন মহামারির রুপ নিয়েছে
---
আবার অনেকে বিপরীত দিক থেকে, ধরেই নিচ্ছেন, যেন যারা রাস্তায় রাস্তায় মারা
মরছেন তার ধর্মীয় সংখ্যা লঘু হোন কিংবা দলিত, তার তাদের যা প্রাপ্য তা
রাষ্ট্রের আইনগত কারণে দেওয়া যাচ্ছে না বলেই, 'মানুষ' সেটাই নিজের উদ্যোগে
ফিরিয়ে দিচ্ছে।
--- দ্বিতীয়োক্তের ইতিহাসগত ধারনা
এবং আদিভৌতিক অনুমানধর্মী বিজ্ঞান চেতনাই যেহেতু এসব অরাজকতা এবং
অমানিবিকতার ভিত্তি হয়ে দাড়াচ্ছে, সেকারনেই,
---
ইতিহাসবোধের বিস্তার ঘটিয়েই, বর্তমান অরজাকতা থেকে ভারতকে বের করে আনার,
একটা দীর্ঘকালীন প্রকৃয়া শুরু করা সম্ভব, সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই
আজকের পোস্টিং;
শিরোনামায়, বাংলা, বিহার, উরিষ্যার ভূমী ব্যবস্থার যে বিবর্তন রেখা তুলে ধরা হয়েছে,
----
সেটাই কোন কৃষি ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার পথে আধুনিক রুপান্তর প্রকৃয়ার
একটা রেখাচিত্র। নোমাড বা যাযাবর জীবন ব্যবস্থা থেকে জাতীয়তাবাদ এবং
সেখানথেকে আধুনিকতাই যদি সমাজ বিবর্তনের বিশ্বধারা বলে বিবেচিত হয়
------
জমি ব্যবস্থার রদবদল থেকেই তো ইতিহাসের রুপান্তরের ধারা এবং সেই ধারাই এক
একটি কালকে চিহ্নিত করা যাবে। সেই হিসেবেই, ইংরেজ পূর্ব ভারতের শেষ
স্বাধীন সাম্রাজ্য হিসেবে মোগলদেরকে এবং শেষ নবাব হিসেবে সিরাজদৌল্লাকে
মানতে হয়।
---- সেখান থেকেই, যদি ভূমির বিলি
ব্যবস্থা এবং ব্যবস্থার নিয়ম কানুনকেই, অতিত যাযাবর ব্যবস্থা থেকে রেনেসা
কালের ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ধারাকে চিহ্নিত করতে হয়, তবে
----
সেটা যে শুরু হয়েছে, এদেশে টোডরমলকে স্তম্ভ হিসেবে দাড় করিয়ে কে অস্বিকার
করতে পারবে । আর ভারতীয় জমি ব্যবস্টার অন্তিম জাতীয়তাবাদী রুপান্তরের
মহাপুরুষ হিসেবে জ্যোতি বসু-হরেকৃষ্ণ কোনার যুগল বন্দিকে মানতে হয়।
অধায়ের শেষে পৌছুনোর পূর্বে, কিঞ্চিত তত্বকথা আলোচনা করা যেতে পারেই।
-----যদি
কেউ আমায় জিজ্ঞাসা করেন, জীবন রায় ইতিহাস সম্পর্কে কি জানেন, আমি সপাঁট
জবাব দেবো, তিনি কোন দিন ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন না। ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিলে
শ্রেনী রাজনীতিতে উঠিয়ে আনার সংগ্রাম, দল এবং ট্রেড ইউনিয়ন অভিজ্ঞতায়
যতটুকু ইতিহাস কিংবা অর্থ নীতি জানতে হয়, তার বাইরে তিনি কিছুই জানেন না।
----
কিন্তু ইতিহাসের যে কোন বাকে সম্ভাব্য শ্রেনী সমাবেশ কোন পথে এগিতে পারতো
এবং সেখান থেকে রুপান্তরের প্রক্রিয়াটি কি, আধুনিকতা অথবা পশ্চাতপদতার
অভিমুখে যেতে পারতো
----- সে সম্পর্কে একটা নিশ্চিত
ধারনা, যে কোন ক্লাস রুমে একগাদা ইতিহাসের মাস্টার মশাইদের সম্মুখে
নিশ্চিত বুঝিয়ে দেবেন।এ থেকি একজন ইতিহাসবোধ এবং প্রকৃত ইতিহাসের
অন্তসম্পর্কটা চিহ্নিত হতে পারবে। বোধ টা অনেকটা ইতিহাসের দর্শনের মতো, যা
ইতিহাসের সাথে বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির একটা সম্পৃক্ত রুপের বোধ সত্বা বলে
জানতে হবে।
---- আজকে যখন ভারতকে ভেংগে দেওয়ার
রাজনীতিটার জন্মভূমিটাই হোল, অধিবিদ্যা যাকে ইংরাজীতে বলি মেটাফিসিক্স এবং
বিশ্বাস ভিত্তিক ইতিহাসকে নিয়ে যে বোধ জগত নির্মান হয়, তার আপাদমস্তক
মিষ্ট-মধুর বিষ রক্ত পান করে সেখানে, সেখানে
----
বর্তমানের ফ্যাসিবাদ বিরোধীতাই বলুন কিংবা অর্থনৈ্তিক স্বাধীনতার
সংগ্রাম বলুন, যে দুই সংগ্রাম ইতিহাসের কারনেই এক বিন্দুতে বিরাজ করছে,
সেখানে রাষ্ট্রীয় বলুন কিংবা ব্যক্তিগত বোধজগতকে কুয়াশা মুক্ত না করে,
কিছুতেই ইতিহাসকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
-----
প্রশ্ন উঠবে কেন মানুষ এই বিষ কেন পান করতে যাবে। এই যে বল্লাম, এই বিষের
অম্লমধুর স্বাদটিকে পশ্চাদপদ এবং অন-আধুনিক চেতনা সব সময় আকর্ষন করে।
অনেকটা সেই গ্যাসের মতো, যা শিল্পোৎপাদনে প্রয়োজন হয়। স্বাধের দিক থেকে
মিস্ট, কিন্ত দু'চার মিনিটে মানুষ মৃত্যুতে ঢলে পরে।
----
এই সুত্রেই আসছে ইতিহাসবোধ এবং বোধজগতের অন্তসম্পর্কের বিষয়টি। বোধজগত
হোল, বিশ্বচরাচরে নিজের বিশ্ব সম্পর্কে ব্যক্তি ধারনাকেই, বোধ জগত বলা
যেতে পারে। সেখানে, ভৌতিক এবং আদিভৌতিকতার মিশ্রন ঘটে, এক ই্যলিউস্যরি বা
মায়াবিক জগত গড়ে ওঠে। সেখানে, পক্ষিরাজ ঘোড়াও সেই জগতকে নিয়ন্ত্রিত করতে
পারে। আনার ধারনা, ভারতদেশীয় মানুষদের অন্ততঃ ৮০ ভাগ মানুষ জ্ঞান হিসেবে
যাই মেনে নিন না কেন, তাদের বোধ জগতে এখনো 'সূর্য্য পৃথিবীর আবর্তনে।
-----
এখানেই ইতিহাসবোধের কাজ, সে নিরন্তর বোধ জগতকে পরিস্কার এবং পবিত্র করে,
বিজ্ঞান এবং ইতিহাসের সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং এই পথে উভয়ের সম্পর্কের মধ্য
দিয়ে ইতিহাসকে সৃজন মুখীনতায় এগিয়ে দেয়।ইতিহাসবোধের আরো একটা বৃহৎ অনুদান
হোল
------ ইতিহাসের যে কোন বাকে, যে কোন ঘটনায়
একজনকে বিদ্যুৎ গতিতে বিষয়টির আদ্যপ্রান্ত মুল্যায়ন করতে শেখায় একজনকে
স্টেটসম্যানসিপের দিকে এগিয়ে দেয়।সম্ভবতঃ সংস্কৃতি সংক্রান্ত একটি ভাষনে
ইতিহাস বোধের পরিমাপ করতে গিয়ে বুঝিয়েছিলেনঃ
--- "
তিনি প্রকৃ্ত অর্থ ইতিহাস সচেতন যিনি ঃ যে কোন ঘটনায়, সাহিত্যে, প্রেস
বিজ্ঞপ্তি, ছায়া ছবি, যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি, ধর্মঘট কিংবা
মিমাংসায় কোন না কোন ভাব একটি বিশেষ শ্রেনীর স্বার্থ লুকিয়ে রয়েছে,
আবিস্কার করতে পারেন এক লহমায়, তাকেই বলা যাবে ইতিহাস সচেতন"
-
- ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদের সম্পর্ককে যদি সমাজবিজ্ঞানের চোখে যদি দেখা যায়,
তবে মানতে হবে, ধর্ম কোন দিন জাতিসম্পর্ক নিয়ন্ত্রন করে না। জাতি
সম্পর্কটি নিয়ন্ত্রিত হয়, পুজির সাথে ভুমি সম্পর্ক থেকে। সেই সুত্রেই বুঝতে
হবে
----- প্রকৃ্ত ভারতের ভূমি নীতি যাত্রা শুরু হয়,
সম্রাট আকবরের ব্যবস্থা পনায় টোডলমলের পরিচালণায়। এর আগে পাঠান সম্রাট
হিসেবে শের সাহ যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মহম্মদ বীন তোগলকের আমলে
'মুদ্রা' ব্যবস্থার প্রচলন হয়ে থাকে, তবে এরা ভূমি সংস্কারের প্রাথমিক
ভিত্তি রচনা করেছিলো।
----- পূর্বে উল্লেখ করেছি,
ইউরোপে যখন জাতীগুলি গড়ে উঠছিল একটা নিদৃষ্ট ভূমি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক
উপাদানকে ঘিরে, তখনি ভারতে জমিব্যবস্তার মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক
বিশ্বাস।
----- ইতিমধ্যে এই শিল্পপুজি ব্যাতিরেখে
এক নড়বঢ়ে জাতীয়তাবাদ ভেংগে দিয়ে, সম্পূর্ন বিপরীত ধরনের সাম্রাজ্যবাদের
কাচামাল রপ্তানীকারক,ইউরোপের শিল্পোৎপাদন ব্যবহার নির্ভর একধরনের আশ্রিত
জাতীয়তাবাদের
আবির্ভাবের সাথে সংগতি রেখে, নতুন ভূমীনীতি নির্মান করা হোল। এর অভিমুখ,
শ্রেফ, জাতিকে পংগুত্বে ঢেকে ফেলা। এই ব্যবস্থাই বিশ্বে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা
হিসেবে পরিচিত।
----- শ্রীমতি মমতা সত্যি যদি
প্রগতির ধারায়, কেন্দ্রকে মোকাবিলা করতে চান, তার প্রধম কাজ হতে
হোত,চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের করাল গ্রাস থেকে জ্যোতিবসু-হরেকৃষ্ণ কোনার -
বিনয় চচধুরীদের মিলিত সত্বা
------ যেভাবে চিরস্থায়ী
ব্যবস্থাকে গুড়িয়ে দিয়ে ভারতের ভূমী ব্যবস্থার সাথে সাথে যে বৈপ্লবিক
সামাজিক রুপান্তর ঘটিয়েছেন, তাকে বর্তমান রাহ্যগ্রাস থেকে প্রথমে মুক্ত
করবেন।
------- পূর্বে উল্লেখ
করেছি,জ্যোতিবাবু-হরেকৃষ্ণ যুগলবন্দি আসলে, চিত্তরঞ্জন দাসের আধুনিক
বাংগালী সত্বা এবং সাম্যবাদী আন্দোলনের উত্তর পুরুষ। আসলে সি আর দাসই
প্রাথমিম ভাবে ব্যংগল প্যাক্ট নামে যে প্যাকেট তৈ্রী - এই সংস্কার ছিলো তার
এই প্রস্তাব যদি দেশের কংগ্রেসী জমিদারেরা যদি মেনে নিতো, কোন দিন ভারত
দু'ভাগ হোত না।প্রসংগত, আসল আইন কিন্তু নেহেরু পাস করিয়েছিলেন সংসদের উভয়
কক্ষে। কিন্তু কট্ট্রর জমিদারেরা লাগু করতে দেয় নাই।
-----
ভূমি সংস্কারই যে পঞ্চায়েত, ১৮ বছরে ভোট, গ্রাম ও শহরের যোগাযোগ, শিক্ষি
স্বাস্থ্য কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, ইত্যাদি জাতীয়তাবাদী সংস্কারের অভিমুখ
১৯৭৭ এর পরে সারা দেশে উন্মুক্ত হয়েছিলো
------
প্রয়োজনীয় শ্রেনী শিক্ষার অভাবে এবং পরিনামে গনশিক্ষার স্তর,
সাম্রাজ্যবাদী কালে থেকে যাওয়াতেই মুলতঃ বাম ফ্রন্ট সরকারের বিপর্য্যয়
হয়েছে, বলে জানতে হবে। । চ ল বে ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours