ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ
স্বামী তপানন্দ মহারাজের জন্ম মানকরের রাইপুরে! তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম বিশ্বেশ্বর চট্টোপাধ্যায়! তাঁর জন্ম ১লা জানুয়ারী ১৮৮৮ খ্রীঃ তাঁর পিতা নিষ্ঠাবান ব্রাক্ষ্মন নন্দ কুমার চট্টোপাধ্যায়! মা ভক্তিমতী হরমোহিনী দেবী! সুশিক্ষিত বিশ্বেশ্বর মাতৃবিয়োগের পর হঠাৎ সংসারের প্রতি বিতরাগ হয়ে স্ত্রী প্রভাসিনীকে পরিত্যাগ করে চিরকালের জন্য সংসার ত্যাগ করলেন! ১৩১৫ বঙ্গাব্দে কার্ত্তিক মাসের অমাবশ্যা তিথিতে তিনি মা সারদামনীর কাছে দীক্ষা নেন!সারদামায়ের নির্দ্দেশে তিনি বেলুড় মঠে থাকেন! তিনি খুব ভাল গান করতেন! তাঁর সাথে ব্রক্ষ্মানন্দ, শিবানন্দ ও রামকৃষ্ন মঠের সতীর্থদের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল!
তিনি ভারতের বিভিন্নপ্রান্তে রামকৃষ্ন ভাবধারা প্রচার করেন! পরে পুরুলিয়ার কেতিকা গ্রামে কংসাবতী নদীর তীরে একটি রামকৃষ্ন তারক মঠ প্রতিষ্ঠা করেন! আজ সেটি এক তীর্থ ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে!
তিনি তাঁর আত্মজীবনী" আত্ম কথা" গ্রন্হে লিখেছেন! " আমার পিতৃকুলে পিতামহী কিংবা প্রপিতামহী তাঁহার স্বামীর সহিত একই চিতায় সহমৃতা হইয়া সতী হইয়া ছিলেন, তাহার প্রমান স্বরূপ বর্ধমান জেলার অন্তবর্তী মানকর গ্রামের সায়র পুষ্করিণীর তটস্হিত শশ্মানে প্রতিষ্ঠিত সতীর স্মৃতিস্তম্ভ আজও বিদ্যমান " তবে বর্তমানে এই স্তম্ভটি কালের নিয়মে ধ্বংস হয়ে গেছে!
এই মানকরে আরও দুইজন সতীর কথা জানা যায়, কিছুদিন পূর্বেও গ্রামের কৃষ্নগঙ্গা নামক পুষ্করিনীর ঈশান কোনে সতী মন্দিরের একটি ভগ্নস্তুপ দেখা যেত! ! সতী মন্দিরের গাত্রে লেখা ছিল রাইপুর নিবাসী দুলাল চন্দ্র কর্মকারের স্ত্রী ১২২৪ বঙ্গাব্দে স্বামীর সহিত সহমরনে একই চিতায় প্রান বিসর্জন করেন !
এই গ্রামের সায়রের পাড়ে আজও একটি সতী স্তম্ভ রয়েছে! সেই সতী স্তম্ভে লেখা আছে 'সতীমায়ের সমাধি , শ্রীমতি অন্নপূর্না দাসী, স্বামী জ্যোতিলাল দাস, সন ১৮৮১! এর পাশে সতীমায়ের শশ্মান আছে ! এটা থেকে বোঝা যায়, মানকর গ্রামে সতীদাহের প্রচলন ছিল!
ষোড়শ - সপ্তদশ শতাব্দী পর্য্যন্ত মানকর সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল! প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ১৮৬২ সালের ভয়াবহ মহামারী ও ১৮৬৬ সালের দুর্ভক্ষে এই গ্রাম প্রায় জনশুন্য হয়ে পড়ে! এরপর আবার ধীরে ধীরে মানকরে জনবসতি বড়তে থাকে! গড়ে ওঠে স্কুল কলেজ, রেলস্টেশন, গ্রামীন হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, সমবায় সমিতি ,জমি রেজিষ্টির অফিস!গ্রন্হাগার প্রভৃতি!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours