কাজল ভট্টাচার্য, সিনিওর জার্নালিস্ট, কলকাতা :
'পাশের মানুষটাকেও এখন যেন কেমন অচেনা লাগে।' হামেশাই অনেকে এই কথা বলেন। 'এতদিন পাশাপাশি হাঁটলাম, তবু মানুষটাকে চিনতে পারলাম কই?'
তা চিনতে পারবেনটা কী করে?
ভালো
করে দেখুন তো মানুষটাকে। সে কি বেশ লম্বা? অনেকদিন ধরেই দেখছেন, তবু বয়সটা
কেমন যেন থমকে দাঁড়িয়ে। না, ভয় পাবেন না। হতে পারে সে ভিনগ্রহের মানুষ।
কিন্তু আপনার ক্ষতি করার তার কোনও ইচ্ছাই নেই। আপনাকে অভয় দিচ্ছে বোরিস
কিপ্রিয়ানোভিচ। পৃথিবীতে এই ভিনগ্রহবাসীদের পুনর্জন্মের একটাই উদ্দেশ্য-
মানুষ, মানুষের সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখা।
বোরিস
বলছে, 'শুধু আমিই না, পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করছে আরও অনেক লালগ্রহবাসী।'
বোরিসের মতোই এদেরও পুনর্জন্ম হয়েছে, এই পৃথিবী নামের গ্রহে। এদের আদরের
নাম 'ইনডিগো চাইল্ড'। বলছিলাম না, এদের বয়সটাও যেন থেমে থাকে এক জায়গায়। এই
গোপন রহস্যেরও সন্ধান দিয়েছে বোরিস।
তবে এসব কিছুই
হয় লালগ্রহের মাটিতে। লালগ্রহের মানুষের বয়স থমকে যায় ওই পঁয়ত্রিশে এসেই।
সময় পেরোয় তার নিজের নিয়মেই। লালগ্রহের আপনি আটকে থাকবেন সেই পঁয়ত্রিশেই।
চিরযৌবন। এরপরে আরও আছে। অমরত্ব। এক মৃত্যুহীন জীবন।
একবার ভেবে দেখুন দেখি ব্যাপারটা। একেবারে জমে ক্ষীর!
বোরিসের
জন্ম রাশিয়ার ভলগোগ্রাদে। সালটা ছিল 1996। মা চিকিৎসক। তিনি বলেন, 'ছেলের
জন্মের পর দু'সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই বুঝি ও অন্যরকম। দিন পনেরোর মধ্যেই
ছেলের ঘাড় সোজা হয়ে যায়। কোনরকম সাপোর্ট ছাড়াই মাথা সোজা করতে শেখে। কথা
ফুটতে শুরু করে কয়েক মাসের মধ্যেই। এরপর বছর দেড়েক বয়স হতে না হতেই পড়তে
শেখে। যখন ওর দু'বছর, কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করে দিই। স্কুলের টিচাররাও
অবাক হয়ে যেত ওই পুঁচকে শিশুর সুন্দর গুছিয়ে লেখা দেখে। আর সেরকম
স্মৃতিশক্তি। সময়কে যেন বারেবারে টপকে চলেছিল বোরিস।
তবে এক দোষও ছিল ওই ছেলের।
মাঝেমাঝেই
আনমনা হয়ে যেত বোরিস। তখন মনে হতো, ও অনেক দূরের কেউ। আকাশ যেন ওকে
হাতছানি দিত। বোরিসের নীল চোখ জলে টলটল করতো। তারমধ্যে ভাসতো মেঘের ছায়া।
তখন
বোরিসকে কিছু জিজ্ঞেস করলেই হলো। কেমন এক ঘোরের মধ্যে বলে যেত, 'সে কী
ভীষন যুদ্ধ! হাজারো বছর আগের কথা। ধ্বংস হতে বসেছিল আমাদের লালগ্রহটাই। তবু
কিছু গ্রহবাসীরা নিজেদের জন্য এক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে ফেলে। বেঁচে যায়
গ্রহসভ্যতার বেশকিছু নিদর্শন। আর আমরা।
আমরা
বলতে ঠিক কাদের বোঝাতে চেয়েছিল ওই বিস্ময় বালক? 'আমরা যারা লালগ্রহের ওই
কুরুক্ষেত্রের পরেও বেঁচে গেলাম, পুনর্জন্ম নিলাম পৃথিবীতে।' বলে বোরিস।
আপনি
ঠিক ওরকম কারুর পাশে-পাশে এতদিন হাঁটেননি তো? এই পুনর্জন্ম নেওয়া
ভিনগ্রহবাসীরা কিন্তু প্রযুক্তিবিদ্যায় ওস্তাদ। আবার এদের এমন কিছু ক্ষমতাও
থাকে, যা আমার আপনার কাছে অপার্থিব মনে হতেই পারে।
ওই মহারণের সময় কতোই বা আর বয়স ছিল রাশিয়ার বোরিসের?
ওই চোদ্দ কী পনেরো, জানায় বোরিস। এক বন্ধুর সঙ্গে তাকে মাঝেমধ্যেই পাঠানো হতো এয়ার রেড করতে।
ওইটুকু ছেলের মুখে এসব গল্প শুনেতো তাজ্জব মা-বাবা। ছেলেটা বলে কী!
'বোরিসকে
আমরা কখনওতো অন্য কোনও গ্রহ বা অন্তরীক্ষ নিয়ে কিছু শোনাইনি,' বলতো ওর
মা-বাবা। 'তবে খেয়াল করতাম, সেই ছেলেবেলা থেকেই ওর একটা টান ছিলো আকাশ,
অন্তরীক্ষের ওপর।'
কিন্তু
ছেলের যে কথা শুনে মা শিউরে উঠতেন তা ছিল, পৃথিবীর মানুষগুলো জানো তো,
যুদ্ধের আগের মঙ্গলের মানুষগুলোর মতোই হয়ে যাচ্ছে। যত্ত সব ক্ষমতার লোভে
উন্মত্ত। একনায়কতন্ত্রী।
আমেরিকা, উত্তর কোরিয়ার
যুদ্ধং দেহী মনোভাবের খবর শুনে খুব অস্থির হয়ে উঠতো বোরিস। বারেবারে বলতো,
'মানুষ খুব দ্রুতপদে ভয়ঙ্কর পরিণামের দিকে এগোচ্ছে মা।' ছেলের কপালে স্পষ্ট
চিন্তার ভাঁজ দেখতে পেতাম।
কিন্তু মঙ্গলবাসীরা কিভাবে এই পৃথিবীর সন্ধান পেল?
একদিন
এক তিনকোনা ত্রিভুজ আকৃতির অন্তরীক্ষ যানে ভেসে চলেছিল লালগ্রহের
নভশ্চরেরা। তখনই চোখে পড়ে যায় পৃথিবী নামের এই অজানা গ্রহটা, জানায় বোরিস।
সন্ধান মেলে প্রাণের। তবে অন্তরীক্ষ যাত্রার জন্য যে যানগুলি ব্যবহার করা
হতো সেগুলি হতো গোল। তাতে সময় এবং কাল(টাইম অ্যান্ড স্পেস) দুটোই এড়ানো
যেত।
পৃথিবী নামের এই
গ্রহটাও নাকি কম রহস্যময় নয়। হামেশাই বলে বোরিস। আর আঙুল তোলে মধ্য মিশরের
এক বিস্ময়, আকাশছোঁয়া গিজা পিরামিডের দিকে। খ্রিষ্ট জন্মের 2580-2560 বছর
আগে ওই পিরামিড তৈরি হয়েছিল চুনাপাথর আর গ্রেনাইট দিয়ে। চারশো একাশি ফিট
উঁচু।'
বোরিস হামেশাই বলে, 'গিজা'র গর্ভে চমকে
দেওয়ার মতো অনেক কিছু রাখা আছে।' স্ফিংসের কানের পাশেই সম্ভবত রয়েছে
গিজার গর্ভে ঢোকার চাবিকাঠি। তবে আজ আর তা ঠিক ভাবে মনে করতে পারে না
বোরিস। গিজার দরজা খুলতে পারলেই পালটে যাবে মানুষের জীবনদর্শন।
বিজ্ঞান
কোনও কথাই উড়িয়ে দেয় না। শৈশবের সহজ সরল মনের বিশ্বাস তার সম্বল। 2017
সালেই ময়দানে নেমে পড়েছেন গবেষকরা। কসমিক রে ব্যবহার করে তোলা হয়েছে বন্ধ
গিজার মোটা দেওয়ালের আড়ালের অজস্র ছবি। তথ্যের বিশ্লেষণ শুরু হতেই তাক
লেগে গেছে গবেষকদের। গিজার বুকের ভেতর গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, অন্তত একশো
ফুট লম্বা এক ফাঁপা গুহার মতো অতিকায় গহ্বর।
আড়াল
থেকে যখন একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে গিজা, ঠিক তখনই আড়ালে চলে গেল বোরিস।
চষে ফেললেন সাংবাদিকরা। শোনা গেল রাশিয়ার সরকার অন্তরালে নিয়ে গেছে বোরিস
আর তার মাকে।
বোরিসের সঙ্গে টেলিপ্যাথিতে যোগাযোগ
করতে পেরেছেন বলে দাবি মনোবিজ্ঞানীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, বোরিস আর তার
মাকে প্রত্যন্ত কোনও গ্রামে নিরাপদে রাখা হয়েছে।
সাবধান
থাকবেন। এরকম কোনও এক বোরিস কিন্তু পার্ক স্ট্রিটে আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে
বলতেই পারে- হাউ ডু ইউ ডু ম্যামজি? আপনিও হাতটা বাড়িয়ে বলতেই পারেন- হায়
বোরিস!
ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্টটাও একবার চেক করে দেখে নিতে পারেন।
আবার এমনটাও হতে পারে, এতদিন যার হাত ধরে ময়দানের রাস্তায় পাক মেরেছেন, সেই মানুষটাই আচমকা একদিন বোরিস হয়ে গেল!
চেনার থেকে অচেনা হয়ে যাওয়া মানুষের ভিড় বাড়ছে শহরে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours