fiture
গৌতম ভট্টাচার্য, সমাজকর্মী: বিশেষ শিশুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, তাদের শিক্ষা এসব নিয়ে সরকারি ভাবে যত আড়ম্বর আছে, কাগুজে আইন এবং নির্দেশ আছে বাস্তব চিত্র ঠিক ততটা মসৃণ নয়। এখনও জন্মের পর এই সব শিশুদের প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে অভিভাবকদের ডাক্তার নির্ভরতা কাটে নি। চিকিৎসকেরাও নানান কারণে শিশুদের সমস্যা সম্পর্কে অভিভাবকদের সঠিক তথ্য এবং করণীয় দিশা দেখাতে আলস্য দেখান বা সিদ্ধান্ত নির্ধারণে তাদের দীর্ঘসূত্রিতা অনর্থক কালক্ষেপ ঘটায়। যার ফলে অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরী যেমন হয় তেমনি শিশুরও ক্ষতি হতে থাকে। সমাজে এখনও শিশুদের প্রতিবন্ধকতার ব্যাপারে অভিভাবকদের মধ্যে বিশেষ প্রশিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা ও তাঁর মতামতের গুরুত্ব তৈরী হয় নি। প্রতিবন্ধকতা ও রোগ এই দুটি বিষয় সম্পর্কে এখনও মানুষ সঠিক ভাবে অবহিত নন। অভিভাবকদের অজ্ঞতা এবং সেই কারণে চিকিৎসক নির্ভরতা সময় ও অর্থ অপচয়ের হেতু হয়ে দাঁড়ায়। 
Early intervention এর কাজ যত দ্রুত শুরু হয় শিশুদের জন্য ততই মঙ্গল। শিশুরা তত তাড়াতাড়ি সঠিক প্রশিক্ষণের আওতায় আসতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতার সাথে সাথে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ শিশুদের জন্ম পরবর্তীতেই তার ভবিষ্যত করণীয় নির্দিষ্ট করা যায় যা early intervention এর মধ্যে অন্তর্গত। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি শুরু হওয়া উচিত হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকেই। সেই কাজে আমরা এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে আছি। এব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া ভীষণভাবে প্রয়োজন। শিশুদের প্রতিবন্ধকতার প্রকারভেদের তালিকা, তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং সেই প্রতিবন্ধকতা যে রোগ নয় সেকথাও লিখিত আকারে বিভিন্ন হাসপাতালের বাইরে থাকা দরকার। চিকিৎসকেরাও দায়িত্ব নিয়ে কালক্ষেপ না করে অভিভাবকদের সঠিকভাবে দিশা দেখাবেন এটাও নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বিশেষ প্রশিক্ষকের গুরুত্ব সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের ভিতরে এবং বাইরে দৃশ্যমান জায়গায় লিখিত ভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। স্পিচ থেরাপি এবং ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য আছে সেটাও হাসপাতালে বিজ্ঞাপিত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ শিশুদের স্বনির্ভর করে তুলতে স্থানীয় ভাবে বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির তালিকাও বিজ্ঞাপিত হলে অভিভাবকদের চিন্তা ও হয়রানি লাঘব হয়। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরকারি ভাবে বিভিন্ন হাসপাতালের ভিতরে এবং বাইরে থাকা উচিত তা হলো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের প্রয়োজনীয়তা এবং সেই শংসাপত্র পাওয়ার সঠিক নিয়মাবলী। 
যেগুলো না জানার কারণে অভিভাবকদের নানান অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক সরকারী ভাবে প্রচারের আলোয় এলে বিশেষ শিশুদের জন্য নির্ধারিত পরবর্তী পদক্ষেপ নেবার সুবিধা যেমন হয় তেমনি বৃহত্তর সমাজ, স্থানীয় বিভিন্ন জন-প্রতিনিধি এবং অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা ক্রমশ বাড়ে। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours