জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
দ্বিতীয় যুদ্ধকে উপলক্ষ করে, এজন্যেই বলা হয়ঃ
---- যদি মেনে চলা হয়, যা নেই মহাভারতে, তা নেই ভারতে, তবে মানতে হবে - যা নেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, তা নেই বিশ্বে। দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরুর কালে, ইংল্যান্ড যখন ভাবছে, হিটলারকে দিয়ে সাম্যবাদী রাসিয়াকে বিনাশ করানো হবে এবং পোলান্ড দখল এবং চেম্বারলেন-হিটলার মিউনিখ চুক্তি দ্বিতীয় যুদ্ধের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো
---- স্তালিন ইতিমধ্যেই, এই যুদ্ধের সম্ভাবনাকে লেনিনবাদী প্রয়োগ রীতির এক একটি পারত উন্মুক্ত করে, যুদ্ধের প্রকৃ্ত চরিত্রকে উন্মুক্ত করছিলেন। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স অষ্ট্রিয়া সমেত ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্র সহ আমেরিকা যখন ভাবছিলেন, হিটলার হতে যাচ্ছেন, পুজি বনাম সাম্য বা শ্রমের সংঘাতে তুরুপের তাস
----- স্তালিন বুঝিয়ে দিলেন, যদিও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ বিরতির সন্ধিপত্রে জার্মানীকে যা মানতে বাধ্য করা জাতীয় অবমাননাটাই ছিলো, হিটলার আগ্রাসনের গনভিত্তি, তিনি জার্মানীর এই জাতীয় অবমাননাকে হিংস্রতায় উঠিয়ে এনে ,
----- পুঁজি ও শ্রমের সংঘাতকে সাম্রাজ্যবাদিদের মধ্যে এক ঘোরতর দ্বন্দ্বে এবং জাতীভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মানের রেনেসাঁর সব রীতিনীতিকে ভেংগে চুরমার করে দেবে। এই সুত্রেই বলে রাখি, লেনিন ইতিমধ্যে বলে গেছেন - পুঁজির অতিকেন্দ্রিভবনের রাষ্ট্রগত প্রতিরুপ হোল 'সাম্রাজ্যবাদ' এবং সেখানে জাতীভিত্তিক রাষ্ট্রের দিন ফুরিয়ে দিয়ে
---- পুঁজি এবং স্রমের দ্বন্দ্বকে ইতিহাস পরিসমাপ্তি ঘটানোর দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলছে।
স্তালিন যখন বুঝে গেলেন বৃটেন এবং ফ্রান্স, হিটলারের বিরুদ্ধে রাসিয়ার সাথে হাত না মিলিয়ে বিপরীত পথে হাটছেন, দ্বিতীয় যুদ্ধ যত
---- উপনিবেশের হাত বদলের লড়াইতে বদলে যাচ্ছে, সেটা 'হেভ এবং হেভ নটের' (Having colony and Not having colony) লড়াইতে বদলে যাচ্ছে, তত লড়াইটা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে বদলে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে প্রতিকৃয়ার শক্তি, হিটলারের সাথে হাত মেলাচ্ছে।
এই সুত্রগুলি হাতে ছিলো বলেই স্তালিন যুদ্ধের প্রথম দু'বছরেই নিজেকে এক বিশ্বব্যাপী লড়াই এর জন্য নিজেকে নির্মান করেছিলো, যুদ্ধ প্রস্তুতির সাথে সাথে রাসিয়ায় শিল্প কাঠামো বিস্তারের পথে এবং
----- তার থেকেও বিপুলভাবে সারা বিশ্বে 'দুনিয়ার মজদূর এক হোক' শ্লগানকে সামনে এনে এক নতুন ধরনের জ্ঞান এবং সংস্কৃতিগত জাগরনের
পথকে বিশ্বের কোনায় কোনায় পৌছে দিয়ে।
স্তালিন এই সুত্রগুলি ধরে এগিয়ে যেতেই বুঝেছিলেনঃ
----- এ পথে হাটতে গিয়েই পুঁজি যেমনভাবে কেন্দ্রিভূত হতে থাকবে, সে পথেই জাতীগুলির রাষ্ট্রীয় চেতনাকে ভেংগে দিতেই তাকে 'রেনেশা' বা অখন্ড জ্ঞানসত্বার 'মৃত্যুদুত' হয়ে উঠতেই হবে।
তিনি শুধু সতর্ক করে দিয়েই খ্যান্ত থাকেন নাই...। তিনি সারা বিশ্বকে বুঝাতে চাইলেন, সাম্রাজ্যবাদের আভ্যন্তরীন মেরুকরনের কারনেইঃ
------ সেই পথ আলোর বিচ্ছুরন রেখাকে আগলে দিয়ে , নিজেকে প্রতিকৃয়ার কেন্দ্র হিসেবে দাড় করাবে।
স্তালিন যে সতর্কবানী উচ্চারন করেছিলেন, ইতিহাসই প্রমান করেছে, তাই শেষ পর্য্যন্ত ঘটেছে।যে বৃটেনের নৌ শক্তি বিশ্বের প্রথম ছিলো ত কার্য্যত ধ্বংস না হয়ে যাওয়া কিংবা ফ্রান্স হিটলারের হাতে চলে না যাওয়া পর্য্যন্ত এরা এবং আমেরিকা হিটলার বিরোধী ফ্রন্টে যোগ দেয় নাই।
---- কার্য্যতঃ সোভিয়েত ইউনিয়নকে এক হাতে বিশ্বযুদ্ধের দায় মাথায় বহন করতে হয়েছে। ক্ষয় ক্ষতি এবং মৃত্যুর পাহাড়কে বহন করেই সোভিয়েতের মানুষ, সভ্যতাকে বাচানোর মূল্য দিতে হয়েছে।
ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলটি এই বিজয়ের পুর্ণ লাভ নিয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় যুদ্ধে সোভিয়েত বিজয়ের ঐতিহাসিক ভুমিকাকে খাটো করে দেখেছে।
এই যুদ্ধে সব থেকে বড় সাফল্যঃ
----- যেখানে, এই বিজয় জাতীসত্বাগুলির চরম বিপর্য্যয় থেকে বাচিয়ে দিয়ে, বিশ্বের সব পরাধীন দেশগুলিকে স্বাধীন করে দিলো, তখন এই দল দাবী করলো, যেন মহাত্মার অ-সহযোগীতার ভয়েই, বৃটিশ ভারত ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানের শাসক দল তো, পুরো যুদ্ধের কালে, একপ্রান্তে হিটলারের লেজ ধরে চলছিলো, অন্যপ্রান্তে উঘ্র মুসলিম বিরোধীতার কারণে, বৃটিশের খোসামোদ করে চলছিলো। কদাচিৎ প্রশ্ন করা হয়েছে, 'অসহযোগ যদি এতোই বেগবান ছিলো, তবে বিশ্বটা কি করে স্বাধীন হয়ে গেলো?
স্বিকার করা উচিত হবেঃ
যুদ্ধোত্তর কালে, স্তালিনের সতর্কবানীর সাথে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু নিশ্চিত ভাবে একটা সহমত নিয়ে চলছিলেনঃ
অন্যথায় নিশ্চিতভাবেই তিনি, পঞ্চশীল গঠন করেঃ এসিয়া এবং আফ্রিকার জাতীসত্বা গুলিকে এককরার চেষ্টা করতেন না। মূলতঃ তার নেতৃত্বেই পাচ মহাশক্তিকে এক করে পঞ্চশীল ঘঠিত হয়েছিলো। সেখানে (ক) নেহেরু ছাড়াও (খ) মিশরের আব্দুল গামাল নাসের (গ) চিনের চৌ এন লাই (ঘ) ইন্দোনেশিয়ার সোয়াকর্ণ (ঙ) যুগোস্লভিয়ার মার্শাল টিটো মিলে মিশে এক বিশ্ব শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলো।
কী ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা ছিলো বলেই, স্তালিন - নেহেরু অর্থনৈতিক যুক্তি সম্পাদিত হয়েছিলো। শুধু, ভারতের জন্যেই নয়, স্তালিন
প্রায় সব জাতীসত্বাগুলির স্বাধীন অস্তিত্বকে দৃঢ় করতে অর্থনৈ্তিক সহযোগীতার যুক্তির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।
মজার ব্যপার হোল, নেহেরু যখন এই বন্ধনকে শক্তিশালী করছেন, তখন ১৯৫৮ সালে, নেহেরুর সরকার, কয়েক লক্ষ অনুগামী সমেত, দলাইলামাকে নেমত্যন্ন করে নিয়ে এসে, পঞ্চশীলের কবর তোলার চেষ্টা শুরু করেন।
এবারে যুদ্ধোত্তর কালে স্তালিনের শেষ সতর্কবানীটি উচ্চারন করেছিলেনঃ
তিনি বল্লেন
(ক) হিটলার গেছেন, হিটলারবাদের সমাপ্তি ঘটে নাই।HITLER HAS GONE, BUT HITLARISM WOULD GO STRENGTHEN WITH FURTHER CENTRALIZATION OF CAPITAL
(খ) পুঁজির কেন্দ্রিভবন ঘটার সাথে সাথে, বিস্বের কেন্দ্রিভুত পুজির নেতৃ্ত্বে হিটলারের স্থানটি, অধিকার করবে, আমেরিকান মিলিটারিতন্ত্র।
আজকের দিনে, জাতীসত্বাগুলির যে পতন চলছে, একটু খুটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, সব কিছু চলছে স্তালিনের সতর্কবানী ধরেই। (সমাপ্ত)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours