short story
চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজঃ রোদের পিঠে পিঠ দিয়ে বসে, এলোচুল শুকিয়ে নিচ্ছিল বছর আঠাশের এক তরুণী। 
চওড়া পিঠ, পিঠের মাঝখান পর্যন্ত চুল ছড়িয়ে আছে, একটু বাদামি ঘেঁষা রঙ । পিঠের ঢল নীচের দিকে নামার সময় তানপুরার মত আকৃতি নিয়ে মাটিতে থমকে গেছে। মাজামাজা গায়ের রঙ, চোখ গুলো বেশ ছোট, নাকটা একটু বোঁচা, ভ্রূ যুগল অতি অবহেলায় রয়েছে , বহুদিন প্ল্যাক করা হয়নি। পুরু ঠোঁট দ্বয় একটু ওল্টানো, থুতনিতে একটা গভীর খাঁজ। তবুও কি মোহময়ী, একটা আবেদনীয় চোখের ভাষা।
তার নাকি মতিচ্ছন্ন হয়েছে, শ্বশুরবাড়ির ঘর সে আর করবে না। এই কথাটাই তার দিদিমা নানা রকম ভাবে ফেনিয়ে ফেনিয়ে বলেই চলেছে। কিন্তু সে নির্বিকার, কোন উত্তর যেন নেই তার কাছে। মা কদিন ধরে বুঝিয়ে বুঝিয়ে রণে ক্ষান্ত দিয়েছেন। বাবা মেয়েকে সোজাসুজি কিছু বলেননি, মেয়ের মাকে নানা রকম দোষারোপ করে বলেছেন, মেয়ের এই মতিচ্ছন্নতার জন্য তার মা'ই নাকি দায়ী। বরের সাথে দ্বিরাগমনে এসে আর ফেরৎ যায়নি সে, বর একাই ফেরৎ গেছে । ফেরৎ না যাওয়ার বিশেষ কোন কারণ দেখাতে পারেনি কাউকে । কিন্তু সে জানে তার মন জানে , কেন সে আর ওবাড়ির ঘর করবে না। পড়াশোনায় গড়পড়তা আর পাঁচটা মেয়ের মতই সাধারণ, তাই চাহিদা গুলো বা তার চিন্তা ভাবনাও সাধারণ হওয়া উচিৎ ছিল।
কিন্তু তার মনে জুড়ে এখনো বিরাজ করছে এক বাউণ্ডুলে বাউল । একবার যখন সে রাঙামাটির দেশে গিয়েছিল, সেখানে দেখেছিল এক বাউণ্ডুলে বাউলকে, যে তাকে কৃষ্ণনামের সুর শুনিয়েছিল , শুনিয়েছিল একতারার তানে পথে হারাবার সুর। ভালোবেসেছিল বাউলকে । আর সেই বাউল !!! মুগ্ধ হয়ে তার নাম আউড়ে ছিল বার বার , "জাহ্নবী, জাহ্নবী"। তার সাথে মেঠো পথে ফেলে আসা পায়ের ছাপ, রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা সাথে নিয়ে সেই রাঙা পথে হেঁটে যাওয়া পাশাপাশি। একদম টাটকা স্মৃতি। জাহ্নবী বলেছিল, "তুমি একতারায় সুর তুলো বাউল আর আমি নতুন করে গেরুয়া পড়ে ,সেই সুর বাঁধবো বুকে।" বাউল মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বলেছিল, "আসবে রাণী? আজ বাউল আখড়ায় বসবে নাচের আসর। পূর্ণিমার রাতে ঝুমুরের তালে, মাদলের বোলের দ্রিদিম দ্রিদিম শব্দ রাত্রির বুকের মাঝে ঢেউ তুলবে, তুমি আমি একাত্ম হয়ে সুরের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকবো!!" নিজের অজান্তেই জাহ্নবী সায় দিয়েছিল, এ ডাক যে বড় সন্মোহনী ডাক , এড়ানো যায় না। নাচের শেষে বাউল কানে কানে বলেছিল, "এ কী রূপ দেখলাম তোমার রাণী? কেন যাও শহরের মাঝে? এখানেই যে তোমায় সঠিক চেনা যায়। তোমার তুমিটা যে পরিপূর্ণ এই বনপাহাড়ীতে।"
সেদিন জাহ্নবী বলতে পারেনি , "মন যা চায় তা মেনে নিতে গেলে জীবনে বড় রকম ছন্দপতন ঘটে।" কিন্তু সে বাউল বড়ই নিঠুর .কিছু না বলেই কেমন ফাঁকি দিয়ে চলে গেল, নিজের খেয়ালটুকু সঙ্গী করেই। পথের সাথী হতে চেয়েছিল জাহ্নবী, পথের বাধা নয়। তাই তার চলে যাওয়া মেনে নিয়েছে নিজের অশ্রুপান করেই। পিছন হতে ডাক দিয়ে পথের বালাই হয়নি জাহ্নবী। সে বাউলের কাছে চেয়েছিল একখানা গেরুয়া বসন, বাউল হেসেছিল, বুঝেছিল মনে মনে, ঠিক ফাঁকি দেবে । কিন্তু বাউল ফাঁকি দিতে পারেনি জাহ্নবীকে, নিজের অজান্তেই জাহ্নবীকে দিয়ে গেছে পথে হারাবার মন্ত্র। আজ তাই বসনের আড়ম্বর মূল্যহীন।
 আবার সেই ফাগুন মাস গেরুয়া মাস, আবার ফিরে পেল বাউলকে , দীর্ঘ বছর পর। কিন্তু, একি!! যার সাথে পথে হারাতে চেয়েছিল জাহ্নবী,সে আজ একই বাড়িতে। তার বরের ছোটো ভাই!! যে দিলো পথে হারাবার মন্ত্র তাকে সামনে রেখে কি করে ঘর বাঁধবে সে!?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours