সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুরঃ
স্টিমার আসিলো ঘাটে। 
লঞ্চ ঘাটেও ট্রাফিক জ্যাম হয় জানা ছিলোনা।বারো চোদ্দোটা লঞ্চ গুতোগুতি করছে ঘাটে ।এখানে ও সেই জ‍্যাম কাটাতে ভরসা দক্ষ ড্রাইভার ও খালাসী।আমরা ওস্তাদের হাতে।তাই মিনিট পনেরোর মধ্যেই পারের কাছাকাছি।কাঠের পাটাতনের ওপর সাবধান চলা।
তারপর,
টপাটপ নামতে হবে।লাইনে আরো লঞ্চ।কিশোর খালাসী হাত বাড়িয়ে দিলো এসো মা।সুন্দর নেমে গেলাম।আমার সোনা ছেলে।লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
পেছন থেকে আওয়াজ এলো মালবাহক কে?
হায়ার্ড র্ফম দুর্গাপুর?
ইয়েস বলে এগিয়ে চললাম।
আসলে ইঙ্গিতের তীর বুঝতে বাকী নেই।

মজা হলো আমরা শিশু, কিশোরদের হিসেবেই ধরিনা।কিন্তু এদের মত দ্বায়িত্বশীল আমরা কখনোই নই।
দুর্ঘটনায় একটা হাত প্রায় অকেজো।বেড়াতে গিয়ে মাল বহনের দায়িত্ব নিয়েছিল আমার ছেলে মেয়ে।একটা জলের বোতল ছাড়া কিছু নিতে দেয়নি।ওখানে পথের ছেলে প্রথমদিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত পরম যত্নে আমাকে লঞ্চ থেকে উঠিয়েছে, নামিয়েছে।

যেখানে নামলাম জায়গার নাম পাখিরালয়।গোসাবা।হোটেল অনিতায় আমাদের রাত্রিবাস।পুরো দীঘা বা পুরীর হোটেল সঙলগ্ন অঞ্চলের যে ধরনের চরিত্র এখানে ও তার ব‍্যাতিক্রম নেই।তবে আকারে ছোট।
        সকলে স্থানীয় মেলা বলছে তবে সিজিনে এই দোকান গুলো রোজ ই বসে।
হৈচৈ, গন্ডগোল।চিৎকার, হাসি,ঝগড়া সব ই আছে।আমার কাঙ্ক্ষিত নীরবতা ছাড়া।

টুকরো টাকরা গল্প আবার সেই নাচ সব মিলিয়ে দশটা বেজে গেল।সাদিক বাহিনীর রাতের নিবেদন ফ্রাইড রাইস আর চিকেন।
সেই এক ই মাথাব্যথা ,হোম ডেলিভারির পর আমাদের তিন চারজনের খাওয়া।সাথে ২০১৯এর শেষে আবার কোথাও যাবার আলোচনা।
রাতে শুতে গেলাম প্রায় বারোটা।তখনও গেলাসের আওয়াজ নেশাতুর হাসি যেন সুন্দরবনের বুকে চেপে বসেছে।এই প্রথম বড্ডো বিরক্ত লাগতে লাগলো।
ক্লান্তির ঘুমে কোনো স্বপ্ন এলোনা।আর একবেলা হাতে আছে।কাল রাতেই ফিরে যাওয়া। দুদিন মোবাইলে হাত দিইনি।ফোন খুলতেই হাজারো ছবি টুঙ টুঙ শব্দে ঢুকতে লাগলো।

সকাল হলেই আবার বেড়িয়ে পরলাম।সাথে ছেলে মেয়ে।অনেক সকালে ই দোকান গুলো খুলে গেছে।মধু,গুড়,রসের সাথে খেলনার ,ঘর সাজানোর হরেক জিনিস।ছেলে একটা কাঠের কুমীর নিলো। বিশাল কাকড়া বিক্রি হচ্ছে।জিমের দুটো নিতে খুব ইচ্ছে।ও জানে ফেরার পথে মা ওদের খাদ্য রসিক মামার কাছে যাবে।কোনো মতে কলকাতা অব্দি শুধু নিয়ে যাওয়া।দোকান মালিককে পায়ে দড়ি বেধে হাটিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা এ সব নানা প্রশ্ন করলো।উওর যুৎসই হয়নি বুঝলাম।
হলোনা বুঝলে,কাকুটা আইডিয়া টা বুঝলোনা।

ফিরতি পথে দেখলাম উন্নয়নের জোয়ারে বেশ কটি নতুন নীল সাদা বাড়ি তৈরি হচ্ছে।এখনো সেগুলোর নামকরণ হয়নি।

আজ শেষ দিন।তাই অন‍্য রকম খারাপ লাগা সকলের মধ্যেই কাজ করছে।আবার একঘেয়ে জীবনে ফিরে যাওয়ার অনিচ্ছা।বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।কি ফেরার ইচ্ছে নেই।কোথায় ফিরবো ?
কেন?তোমারতো কত জায়গা।তা বটে।
কিন্তু সবইতো ঐ কারো না কারো বাড়ি।নিজের বাড়ি?চিন্তা করলে হতেই পারে।ভেবেছো কোনদিন?
ধ‍্যুস।
তোমার স্বপ্নই নেই।
মনে মনে ভাবলাম আছে গো আছে।তোমরা জানতেই চাওনি কেউ কোনদিন।
নিজের অধিকার নাকি কেড়ে নিয়ে হয়।পারলাম না।
কৃত্রিম ঝর্নার তলায় অকৃত্রিম চোখের জলে মিশিয়ে দিলাম ,"কি পাইনি তার হিসাব মিলাতে মন মোর নহে রাজী।
(ক্রমশ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours