Vromon kahini
সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুরঃ দলের দুষ্টু মিষ্টি ক্ষুদে সদস্য আধো বুলিতে বলে চলেছে "বাবাল দিম উলে গেল"। সে কি রে? ঐ দেখ, পি। হুচ,ধপাস দলে(জলে)। বাবা ভীষন ব‍্যতিবস্ত।চুপ কর।চুপ কর। আসলে কিঞ্চিৎ জলপানের উপকরণ হিসেবে ছয়টি ডিম দিয়ে এক বিরাট অমলেট হয়েছিল। যেটি প্লেট শুদ্ধ উড়ে গেছে। রসিক দাদা গাইছেন 'না যেওনা,এখনও যে খাওয়া বাকী। মজায় মজায় গানের আসর জমে গেল।কেউ কখনও আমাকে গাইতে বলেনা তবুও আমি মাথা গলিয়েই ফেলি।
গায়ক,বাদকের শুনলাম কলেজে নিজেদের ব‍্যান্ড ছিল।ঘন্টা খানেকের জমাটি আসর। অনেক পুরানো গান উঠে এল,যেন অনুরোধের আসর।শেষ হল পুরানো সেই দিনের কথায়। পৌঁছে গেলাম সজনেখালি।সরকারি উদ্যোগে বানানো হয়েছে অভয়ারণ্য।গোসাপ আর কটি হরিণ ছাড়া কিছুই নেই।একটি মিউজিয়াম গোছের কিছু তৈরী হচ্ছে শেষ হলে হয়তো ভালো লাগবে। খারাপ লাগল সুন্দরী গাছ যথেচ্ছ কাটা হয়েছে দেখে।মৃত গাছের শ্বাসমূল গুলো এখনও তাদের পরিচয় বহন করছে। আমি জঙলী মানুষ। কৃত্রিম জিনিস দেখতে ভালো লাগেনা। সবাই হ‍্যামিলটন বাঙলো যাবো বললো ।শুনলাম ওটা আমাদের রুটে নয়। কে যেন বলে উঠলেন রবীন্দ্রনাথের অনেক স্মৃতি বিজরিত।ইতিহাস বলছে কবি একবেলা ছিলেন ওখানে। বরং স‍্যার দানিয়েল হ‍্যামিলটন সাহেবের অনেক বড় অবদান এখানে।উনি সুন্দরবনে ৯০০০একর জমি নিয়ে গোসাবায় জমিদারী স্থাপন করেন ।১৯১০ নাগাদ উনি ওখানে জড়িপের কাজ শুরু করেন।১০,০০০ মতো জনবসতির মানুষের মধ্যে তিনি পরিকল্পিত চাষ ( model farming) Cooperative banking চালু করেন।১৫ জন স্থানীয় মানুষ কে নিয়ে গোসাবা সমবায় ব‍্যাঙ্ক স্থাপন করেন।সেখান থেকেই উনি গরীব মানুষদের চাষাবাদের জন্য ৫০০টাকা করে মূলধন দিতেন। হ‍্যামিলটন সাহেব সুদূর স্কটল্যান্ড থেকে এসে সুন্দরবন কে ভালোবেসে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এখানেই কাটান। তাই রবিঠাকুরের কর্মক্ষেত্রে সুন্দরবনকে ঢোকানোর অহেতুক চেষ্টা বন্ধ করে হ‍্যামিলটন সাহেবকে বাঙালি চিনুন এই আশা রাখি।ছোট বেলা থেকে ইতিহাস পড়ে আজ অব্দি কিছু পড়াশোনা করে বারবার ই মনে হয় এই দেশকে শুধু আমরা ভারতীয়রাই ভালোবাসিনি অনেক বিদেশি মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপর এই দেশের ভিত দাঁড়িয়ে। আ
বাঙালি হলেই অকারন রবীন্দ্রনাথ নিয়ে ভুল তথ্য পরিবেশনের ক্লিনচিট যে কে আমাদের দেয় কে জানে।তাই অবলীলায় সুন্দরবনে রবীন্দ্রনাথ, সাগরদাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ,সব শেষে মোনালী, তৈমূর ও রবি ঠাকুরের কত প্রজন্ম, এমন আলোচনায় আমাদের বিদ‍্যার ঝুড়ি উজাড় করে ফেলি। যাক,এখন মধ‍্যাহ্ণভোজনে বিরতি। লঞ্জ একটু পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। ডিম কেলেঙ্কারির বর আর সাহস করে মাঝ দরিয়ায় আয়োজন হয়নি। মেনু বেশ।জম্পেশ। ভাত,আলুভাজা,সব্জী, ভেটকি মাছ,চাটনি। গল্প এখনো বাকি।সঙ্গে থাকুন। (ক্রমশ) ছবি সৌজন্যে: সুশান্ত পারুই, অধ্যাপক, কলকাতা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours