Politics
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ কাব্যিক ভাষায় যদি যান রবীন্দ্রনাথ যদি সভ্যতাকে মহামানবিক সাগর তীরকে 'চিত্তমুক্তি' বলে স্বিকার করে থাকেন, কার্ল মার্ক্স, ইতিহাসের দ্বান্দিকতাকেই, ' চিত্ত মুক্তির' উপায় বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ ' নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ'' এ, চিত্ত যে কারাগারে বন্দী সেটা বলে এবং কারগার ভেংগে চিত্তকে মুক্ত করার আহ্বান দিয়ে, ইতিহাসের প্রতি তার অমর দায় পালনের ডাক দিয়ে গেলেন ইতিহাসকেই। ---- কার্ল মার্ক্স তার জ্ঞানতত্বে, 'চিত্ত' এর উৎস হিসেবে, তাকে প্রকৃ্তিরই সর্বশ্রেষ্ট দান হিসেবে বিজ্ঞানসম্মত-ভাবে প্রতিষ্ঠিত করলেন কেবল তাই নয়, ---- চিত্ত সৃজনকে কৃতীর সাথে মানুষের দ্বন্দ্বের ধারাবাহিক সত্বা হিসেব 'সৃজন' এবং প্রকৃতির ধারাবাহিকতাকেই ইতিহাস বলে চিহ্নিত করে দেখালেন, ইতিহাসের চিত্তের সর্বোত্তম বিকশিত রুপ। ---- ইতিহাসের শেষ পোস্ট হিসেবে দেখালেন, 'সাম্যকে' । 

ইতিহাসের পথটাকেই দেখালেন, অতীতের পুঁজ-রক্ত রক্ত নিস্কাশনের কালে সংঘাতের কাল, এবং তার বিভিন্ন রুপ হিসেবে। ----- লেনিনবাদ তার অন্যান্য যুগান্তকারী অবদানের পাশাপাশি 'সুবিধাবাদ'কে দেখালেন, ইতিহাসের দ্বন্দ্ব থেকে নিষ্কাশিত একধরনের পুজ-রক্ত হিসেবে। এর বাহ্যিক রুপ রুপান্তরকামী, কিন্তু অন্তর্নিহিত সত্তা ----- পেছনের টানে রুপান্তরকামীতাকে আবদ্ধ করা কিংবা দ্বদ্বে শ্রমিক শ্রেনীর মধ্যে শ্রেনী রুপের সংহতিতে প্রয়োজনী উপকরনগুলির দ্রব্যগুন নষ্ট করে দেওয়া। আধুনিক কালে মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী নেতৃত্বের অভিমুখ হিসেবে, মার্ক্সবাদী কমিউনিষ্ট পার্টি ১৯৬৪ সালের পার্টি কর্মসুচী, ১৯৬৯ সালের গৃহীত আন্তর্জাতীক দলিল, স্থালীন অপদস্ত করার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ,কমিটির আলোকে ---- ক্রুশ্চেভবাদ থেকে পেরোস্ত্রোয়ীকাকে, যেমন সুবিধাবাদী তত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে, ঠিক তেমনি মাও বাদের আধারে নকশালবাদকে অনুরুপ বিধানে চিহ্নিত করেছে। প্রথোমোক্তরা যখন 'সাম্যকে' অতি পেছনে ঠেলে মারার চেষ্টা করেছে, প্রথোমোক্তরা শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃ্ত্বগত উপাদানকে হাওয়ায় ভাষিয়ে অতিবাম নীতির দিকে সাম্যকে ঠেলার চেষ্টা করেছে। -------- জ্ঞানের অভিমুখটা নির্মান করাই যে সাম্যের অভিমুখ, সেকথাটা বুঝিয়ে না দিয়েই অহেতুক 'ক্ষমতার' অভিমুখে পৌছে দেওয়ার স্বরযন্ত্রে পা' দিয়ে বসলাম আমারা। আপনি যখন 'সাম্যকে' ক্ষমতার সোপান হিসেবে দেখতে শুরু করবেন, তখনই যে সাম্যহীনতার গহ্বরে পরবেন, সে কথাটা, দলনেতাদের চোখ কুজ্ঝটিকার আধারে ডুবতে পারে, কিন্তু যারা 'সাম্যকে' আতুরঘরেই বিনাস করতে চান, তারা নিশ্চিত অবগত। ----- এই গবেষনায়, তারা সারা বিশ্বে লক্ষ কোটি লোক নিয়োগ করছেন, সাম্যের নামে কিংবা সাম্যের বিরোধীতায় , সমাজ বিরোধী, স্খলিত উদারপন্থিদের সংগঠিত করছেন, লক্ষ কোটি অর্বুদ খরচা করছেন - সাম্যকে খতম করে দেওয়ায়, তারা অনেক ভালো জানেন এই তত্ব কথা থেকে। ---- সে কারনেই মার্ক্সকে জ্ঞান তত্ব আবিষ্কার করতে হোল। এই তত্ব জ্ঞানকে তার অখন্ড রুপেই শুধু আবিস্কার করার প্রয়োজনীয়তার কথা বল্লো না। জ্ঞান এবং সংস্কৃতিকে এক অভিন্ন সত্বায় দেখিয়ে, সেখনে যুগে যুগে সঞ্চিত আবর্জনা মুক্ত করে, জ্ঞানকে রুপান্তরকামীতাকে জাগরুক করার তত্ব আবিস্কার করলেন। পুঁজি থেকে প্রকৃ্তির ধারাবাহিক সত্বা হিসেবে ইতিহাসের অখন্ড রুপ হিসেবে আবিষ্কার করলেন। তার সাথে বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির ইতিহাসের মধ্যেই, বুর্জোয়া উদারবাদকে মানবিকতার রুপে উঠিয়ে আনলেন। @যেমন ভাবেন নাই, দলগত শিক্ষার সাথে একপ্রান্ত বিদ্যালয়, অন্য প্রান্তে ট্রেড ইউনিয়ন এবং জনশিক্ষার বৃহত্তর অবস্থানের সাথে যুক্ত করার অস্বিকৃ্তি। যদি মাথায় রাখা হোত, এখনো ভারতে বিজ্ঞান সত্বা এবং অনুমান ধর্মীতার দ্বন্দ্বটাই সব থেকে বড় দ্বন্দ্ব।এখনো দেশের শতকরা ৭০ জন, পৃথিবীর সূর্য্যাবর্তন বিজ্ঞান হিসেবে মানলেও, বিশ্বাস হিসেবে, উল্টোটাই চিত্তের চালচিত্রে ধরে রাখেন। -----অনুরুপভাবে বুঝে চলতে হোত, ক্রুশ্চেভবাদকে যদি সুবিধাবাদ বলে মানা হয়, সেটার ভিত্তিও আমাদের চিত্তে ইতিহাসের আবর্জনা বই অন্য কিছু নয়। ---- ধরুন না কেন, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ কিংবা দেশাত্ববোধে তো একপ্রান্তে সব রকম ভৌতিক ও আদি-ভৌতিকবাদ, সংস্কার ও কু-সংস্কার, ইতিহাস ও ইতিহাসহীনতার একটা যখন মিশ্রন। এই মিশ্রনেই ভারতীয় মানুষকে যদি পাওয়া যায়, তবে সেখানকার সাহিত্য এবং সংগীতে, সব কিছু বিরাজমান থাকলেও --- মানবিক কিংবা মহামানবিক উপাদান নিকৃ্স্ট অবস্থায় বিরাজমান। ----- দেখুন, আজ এই মূহুর্তে বাংলার অন্যতম সমাদৃত কবি ও সংগিতজ্ঞ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম দিন অনুষ্ঠান হচ্ছে। এমন কেউ আছেন বলে জানি না যিনি তার দেশাত্মবোধ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলবেন। কিন্তু যদি বিচার না হয়, যে তার দেশাত্মবোধ ভারতীয়-প্রাচীনত্ব এবং আধুনিকতার সন্ধিক্ষনের - তবে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তার কটু কথা-বার্তার সামাজিক ভিত্তি ধরাই যেতো না। প্রাচীনত্ব-আধুনিকতার সন্ধিক্ষনের সাথে বিশ্বের সমকালীন আধিনিকতার সংঘাত বই তো কিছু ছিলো না। --- প্রথম জন রবীন্দ্রনাথকে 'বুড়ো খোকা' বলতেন, তিনি রবীন্দ্রনাথের 'চন্ডালিকা' কাব্যায়নের পর, দেশের অর্বাচীন সামাজিক কাঠামোর 'নিশ্চয়তা' সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ---- কাজেই ইতিহাসের মানবিক উপাদানটিকে টেনে তুলে, মানুষের মধ্যে রুপান্তরকামীতার বৈপ্লবিক উপাদানগুলিকে সামনে নিয়ে আসতেই গনশিক্ষাকে জ্ঞানের অখন্ড সত্বার দিকে ঠেলাই, সাম্যবাদী লক্ষ হওয়া উচিত। ------ সেখানেই জ্ঞান, রুপান্তরকামীতা এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে একাত্ম হতে হোত। ---- এ পথেই চিত্তপটে ক্রুশ্চভ বা পেরোস্ত্রোয়ীকাবাদের উৎস-পথটাকে বন্ধ করে দেওয়া যেতো। আগামী প্রজন্ম নিশ্চিত একটা সিদ্ধান্তে পৌছতে পারবেন। কিন্তু একজন নিজের চোখে দেখা ব্যক্তি হিসেবে, মনে হয়েছে, ক্রুশ্চভ কিংবা গর্বাচভকে মানবিকতা বিরোধী সত্ব হিসেবে মনে হয় নাই।
তবু, গর্বাচভ যে একেবারে ইতিহাস বোধহীন ব্য্যক্তিত্ব হওয়ার কারনেই তাকে বিপ্লব বিরোধীতায় টেনে নিয়ে গেছে। ---- পরের একটা অংকে দেখাবো, কেমনভাবে, ক্রুশ্চভের সাম্রাজ্যবাদ 'কোটের বোতাম' তত্ব কিংবা দু'টি রাষ্ট্র নয়, দুই ব্যবস্থার সহ অবস্থান তত্ব ইত্যাদি আসলে - ---- রনক্লান্ত সোভিয়েতের দুর্বলতা এবং দ্বন্দ্ব তত্বের নিরখে লেনিনকে বুঝতে না পারা এবং সর্বোতোপরি স্তালিনের শক্তহাতে প্রতিবিপ্লব ঠেকানো নীতী সম্পর্কীত অবস্থান থেকে ঘৃ্না ভাব, তাকে বিশ্বজনীন মানবিকতার বিরোধী মঞ্চে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো। (চলবে)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours