সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
বাঘ মামা যে মামা নন সেই কথা জেনেও মনে আশা যদি বা কোথাও কখন উনি সদয় হন।অদ্ভূত লাগলো দেখে শেওলা বা পলি পরে গাছের গুড়ি গুলো কালো।যেন কেউ রঙ করে দিয়েছে।মাঝে মাঝেই দু চারটি পাখি উড়ে যাচ্ছে। হঠাৎই একাকী এক বিশাল পরিযায়ী পাখি দেখে সে চিৎকার করে উঠলো মা "বার্ড উইথ ব্রোকেন উইঙস"।
বয়স বেড়ে গেলে সম্পর্ক,দায়িত্বের বোঝায় জীবনটাও ঐ একাকী ডানা ভাঙা পাখির মত হয়ে যায়।উড়তে ইচ্ছে করে স্রোতের বিরুদ্ধে। কখনো বিপরীত মেরুতে চোখ আটকে গেলেও,জীবন খাতার জটিল অঙ্কে বেহিসাবের পরাজয় নিশ্চিত।ডানা ভাঙা পাখির তাই নীল আকাশ ছোঁয়া হয়না।
এক মাত্র মহিলার ওপরে বসে থাকায় কিছু অস্বস্তি বোধ সকল পুরুষের মধ্যে।আসলে অমৃত সুধার হালকা আয়োজন হয়েছে।তাই বলেই দিলাম কোন সুচিবায়ুগ্রস্ততা নেই।দয়া করে নিচে যেতে বলবেননা।দুই কলেজ পড়ুয়া ভাই বোন ছিল আমার দলে।ছেলেটি ফটোগ্রাফার।
তারা ও ভীষন আগ্রহী ওপরেই থাকতে।
মোবাইলের যুগে এমন ছেলে মেয়ে দেখলে ভালো লাগে।ক্যামেরা তাক করে বসে আছে ছেলেটি।জিম করবেট কি ভাবে,
ভারতের বনাঞ্চল ভালোবেসেছিলেন সেটা এক সদ্য যুবকের মুখ থেকে শুনতে ভীষন ভালো লাগছিল।হলুদ আভার কিছু পেলেই জুম করে দেখা চলছিলো।
হঠাৎ ই লঞ্চের পেটের ভিতর থেকে প্রমিলা বাহিনী বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করে উঠলো।ডান দিকে।ডানদিকে।আরে বোটটা নিয়ে চলনা সামনে?ইত্যাদি নানা কথা।
হঠাৎ সব লোকজন একদিকে হয়ে যাওয়ায় লঞ্চ গেল হেলে।বোটম্যান সকলকে বলতে লাগলো ব্যালেন্স করতে।
বাঘ প্রথম দিনই সুন্দরী বৌদিদের দেখে থাকতে না পেরে সামনে চলে এসেছে বোধহয়।
আসলে যারা নিদৃষ্ট লক্ষ্যে অবিচল তাদের লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়না বোধহয়।টুরের মোট দেও টাকার ৪০% প্রথম দিনই উসুল হল।
কুড়কুড়ি(কলেজ পড়ুয়া মেয়ে)হতাশ হয়ে শুয়ে পরলো।না না, কিছুতেই মানা যাচ্ছেনা।কোথায় বাঘ।যারা দেখেছেন,তারা নখ ,চুল সবের ই বর্ণনা দিলেন নিখুঁত।
বারবার ক্যামেরা জুম করে,
যা বোঝা গেল মাটির ঢেলার মতো উজ্জ্বল হলুদ রঙের কিছু।
বোটম্যান আমাদের সাথে একমত।কুড়কুড়ি যুক্তি দিয়ে বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে নিজের মনেই বিড়বিড় করছে সবাই ওরা কমন স্বপ্ন দেখলো।
চারটে প্রায় বাজে।দুপুরের খাবার এল।ভাত,ডাল,ফুলকপি, আমুদে মাছ ভাজা, চিকেন,চাটনি, পাপড়।
খেতে খেতে ই দেখতে পেলাম সূর্য পাটে গেল।
এরমধ্যেই জিমের সাথে ইরফানের ভাব জমে গেছে।জিম কানে কানে বললো মা ও যদি তোমাকে মা বলে অসুবিধা আছে?
তুইতো ক্ষেপে যাস কেউ আমাকে মা বললে।না রাগবোনা।ওর মা স্টার হয়েগেছে।ও হোস্টেলে থাকে।উইনটারে বাবার কাছে এসেছে। এত কষ্টের কথা শুনে ওর মন গলেছে।কিছু বাদে ইরফানকে নিয়ে জিম এলো। এটা ওটা কথার পর ইরফানের সরাসরি প্রশ্ন এই এতবড় নদী সাগর কোন ডজার দিয়ে খোদা হয়েছে? এক কথায় ভগবান বলতে কেন যেন মন চাইলো না। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours