Fiture
অসীম সাহা, প্রবীণ সাংবাদিক ও বিশিষ্ট কবি, বাংলাদেশ: (বাংলাদেশের সামরিক শাসক এরশাদের জীবনাবসান। প্রাক্তন এই শাসক প্রসঙ্গে এক নির্ভীক কলম) পটুয়া কামরুল হাসান এরশাদের নাম দিয়েছিলেন ‘বিশ্ববেহায়া’। কিন্তু বেহায়ারও বোধহয় একটা চরিত্র থাকে। এরশাদের তাও ছিলো না। স্বৈরাচারী এরশাদ বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখলের পর ৯ বছর একটানা স্টিম রোলার চালিয়ে দেশকে শাসন করেছেন। মিলনকে হত্যা করেছেন, বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক/গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ শীর্ষক প্ল্যাকার্ড চাপানো অবস্থায় গুলি করে নূর হোসেনকে মেরেছেন। নারী কেলেঙ্কারিতে তাকে আজ পর্যন্ত কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। বুড়ো বয়সেও ঔষধি সেবনে তার ভীমরতি তাকে একটুও ছাড়েনি।মেরীকে বিয়ে করেছেন ফের ছেড়েছেন। রওশন থাকতেই বিদিশাকে বিয়ে করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। এই ধরনের একজন ক্লাউনকে বারবার রংপুরের লোকজন ভোট দিয়ে ক্ষমতার সিংহাসনে নানাভাবে অধিষ্ঠিত করতে পারেন, সেটাই বিস্ময়কর! এমন একজন ক্লাউনকে নির্বাচিত করতে রংপুরবাসীর কি একটুও লজ্জা লাগেনি? সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, এরশাদের সাঙ্গপাঙ্গদের ভূমিকা। তাদের ভূমিকা ‘যেমনি নাচাও, তেমনি নাচি/তুমি খাওয়াইলে আমি খাই।’-এর মতো।
এরশাদ বারবার লাত্থিগুঁতো মেরেছেন, কিন্তু ধ্যাতা বিড়ালের মতো এরা তবু দল ছেড়ে যায়নি। কিসের লোভে? মালকড়ি, নারী-বাড়ি-গাড়ি? না হলে কিসের মোহ? এমন একজন ক্লাউনের সঙ্গে থাকতে থাকতে তারাও যে ক্লাউনে পরিণত হয়ে গিয়েছে, সেটা বোঝবার ক্ষমতাও তাদের নেই। এরশাদ যেভাবে খুশি ডুগডুগি বাজাতেন, তাদের দলের সবগুলো তেমনি করে নাচতো। রওশন এরশাদের পার্টিতে থাকা আর না থাকা নিয়ে তার কৌতুক সকল ক্লাউনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দিয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব করা, ফের বাবলুকে বাদ দিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করা কোন নাটকের কোন অংকে পড়ে, সেটা নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। আপন রক্তের ভাই জিএম কাদের, যিনি জাতীয় পার্টিতে সবচেয়ে ভদ্রলোক বলে বিবেচিত, রওশনকে বাদ দিয়ে এরশাদ ভাই কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কথা নেই, বার্তা নেই, ফের হুট করে কোনো ছাড়া ভাইকে জবাই করে ফেলেছিলেন। এরশাদ ছাড়া আর কারো পক্ষে এটা করা সম্ভব ছিলো না। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি ফের রওশনকে কো-চেয়ারম্যান এবং সংসদ উপনেতা বানিয়েছিলেন, তা নিয়ে জাতীয় পার্টিও মধ্যে কানাঘুষা চলেছে; কিন্তু নির্লজ্জের নাকি বাটপাড়ের ভয় থাকে না! পৃথিবীতে এরশাদের চেয়ে নির্লজ্জ ও বেহায়া কোথাও কোনোদিন ছিলো কিনা, তা ইতিহাস ঘেটে বের করাও কঠিন হবে। ৯০ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থাতেও চাণক্যকেও হার মানিয়ে তিনি নতুন করে নিজের ভাইকে বলি দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি! এর পেছনের রহস্য তার ভাই জিএম কাদেরও জানতেন না। অন্যদের জানার তো প্রশ্নই নেই। আবার কোনো নতুন অভিসার, কিংবা টাকা না নারী ছিলো কিনা, কে বলবে? এই ক্লাউনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বছর খাচায় পুরে রাখলেও সুযোগ পেলেই তিনি মাথা বের করে কামড়ে দিতে চেষ্টা করতেন। কামড়ে দেয়ার অভ্যাসটা যে তার পুরোপুরিই ছিলো, তা তার সর্বশেষ দৃষ্টান্তেও প্রমাণিত হয়েছিলো। জিএম কাদের সৎ মানুষ। তাই মুখ বুজে আপন বড় ভাইয়ের নানা অত্যাচার সহ্য করেও দলে রয়েছেন। তিনি একটু ভিন্ন চরিত্রের হলে দল ছেড়ে চলে যেতেন। কিন্তু যাননি। ভাইয়ের বয়স হয়েছে। যে কোনোদিন চলে যাবেন, এই বিবেচনায় দলে থেকে গেছেন। শেষপর্যন্ত মৃত্যুর আগে এরশাদ ভাইকে ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান করেছেন। 
এখন এরশাদ নেই। জাতীয় পার্টির অবস্থা এরশাদের অবর্তমানে কী হবে, সেটা সময়ই বলবে। তবে দেশ যে একজন সামরিক স্বৈরাচারের বিচিত্র ডিগবাজি প্রত্যক্ষ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন, ৯০ বছর বয়সে এরশাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার অবসান হলো।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours