roth zatra
ইন্দ্রানী সেন, সাংবাদিক, বাঁকুড়া: ধর্ম ঠাকুরের রথ যাত্রায় ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে যায় বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার মানুষ।সাধারণ মানুষ যেখানে জগন্নাথ সুভদ্রা বলরাম এর রথ দেখতে অভ্যস্ত সেখানে এই রথযাত্রা ধর্মঠাকুরকে কেন্দ্র করে। বাঁকুড়ার জেলার একমাত্র ব্যাতিক্রমী রথ হলো ইন্দাসের গবপুর গ্রামের স্বরুপনারায়ণের রথ। পুরাণগাথা অনুযায়ী সারা বছর যারা ভগবান এর কাছে আসেন না স্বয়ং করুণাময় আসেন ভক্তবৃন্দের কাছে করুণা ধারার আশীষ নিয়ে দর্শন দিতে। ঠিক বাবা স্বরূপনারায়ণও আসেন ভক্তদের জন্য ভক্তদের কাছে এই বিশেষ দিনে।রথ বা রথের দড়ি একবার স্পর্শ করলে বিনাশ হয় শতজন্মের পাপ। তাই এই বিশেষ দিনে সমস্ত কিছুই শুভ সূচনা হয়। 
দিন গোনা শুরু মা দুর্গার আগমনের । স্বরুপনারায়্ণ আদতে ধর্ম ঠাকুর বা ধর্মরাজ। নারায়ণ এর কূর্ম রুপী শিলা এখানে স্বরূপনারায়ণ রুপে পূজিত হন। তবে ধর্মরাজ হলেন রাঢ় বাংলার অন্যতম লৌকিক দেবতা। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনাকারদের লেখা ও প্রচলিত কথা অনুযায়ী “স্বরূপনারায়ণ” বা “ধর্মঠাকুর” হলেন কুষ্ঠরোগ নাশকারী ও বন্ধ্যত্ব নিরাময় ও চক্ষুরোগ নাশকারী দেবতা। এর প্রমাণ আজ ও রয়ছে নিঃসন্তান মহিলারা সন্তান লাভের আশায় স্বরূপনারায়ণ এর মন্দিরে পূজো দেন। কিভাবে শুরু হলো ধর্ম ঠাকুরের রথযাত্রা বা কিভাবে ঠাকুরের প্রতিষ্ঠা হল, এই বিষয়েও রয়ছে লোককথা। মথুর পন্ডিত নামে জনৈক ব্যাক্তি স্থানীয় একটি পুকুর “ধর্মসায়র” থেকে একটি পাথরের শিলাখন্ড কুড়িয়ে এনে বাড়ির উঠোনে রাখেন। মথুর পন্ডিতের স্ত্রী ওই শিলাকে পাথর মনে করে গুগুলি ভাঙেন। পরে রাত্রে মথুর পন্ডিতকে স্বপ্নাদেশ দেন স্বরূপনারায়ণ, নিজের অজান্তেই অজ্ঞতা বশত ভুল কাজ করায় পরের দিন যথাসাধ্য মত ওই শিলাটির পূজার্চনা করেন ওনার পরিবারের লোক। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর কানে এই ঘটনার খবর পৌঁছালে দ্রুত ওই পাথররুপী শিলাকে নিজেদের অধিকারে নিতে উদ্যোগী হন। মথুর পন্ডিত এর বাড়ি থেকে শিলা নিয়ে যাবার সময় ‘স্থানীয় সায়র দীঘি’ কাছে শিলা ভারী হয়ে যায় আর নিয়ে যেতে পারেন না। পরে আবার স্বপ্নাদেশ দেন স্বরূপনারায়ণ–গবপুর এ থাকার কথাও জানান। মথুর পন্ডিত পুনরায় গবপুরে স্বরূপনারায়ণকে প্রতিষ্ঠা করেন। এবার আসি রথের কথায়।গিরিশ পন্ডিত নামে জনৈক পন্ডিত বংশের এক সেবাইতকে স্বরূপনারায়্ণ স্বপ্নাদেশ দেন রথ নির্মাণ করে রথ করার জন্য। মতান্তরে অনেকেই বলেন স্বরূপনারায়ণ প্রতিষ্ঠাতা মথুর পন্ডিত এই রথ শুরু করেছিলেন। রথের দিন বিশেষ পূজোর পর মন্দির থেকে রথ পর্যন্ত শোভাযাত্রা করে রথে বসানো হয়। রথের প্রথম ধাপে স্বরূপনারায়নণ, ধামাস কন্যা ও কামিখ্যে বসিয়ে পূজার্চনা শুরু হয়। একাধিক পন্ডিত বংশের সদস্য ও স্থানীয় ব্রাহ্মণরা এদিন রথের পুজোতে অংশ নেন। বাতাসা মন্ডা গুড়ের পাটালি দিয়ে পুজো দেন ভক্তরা। এরপর রথের জন্য নির্ধারিত মাঠে রথ টানা শুরু হয় যাতায়াত নিয়ে মোট ছয়বার রথ টানা হয়। একই নিয়ম মেনে উল্টো রথের দিন ও বিশেষ পুজা পাঠের পর রথযাত্রা সম্পন্ন হয়। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours