মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:
দই শুভ বাঙালীর কাছে।
যে কোন শুভ কাজে দই লাগবেই।
দইয়ের ফোঁটাও লাগে আশীর্বাদে। শেষ পাতে দই এক মধুরেণসমাপয়েৎ। সারা ভারতে দই খাবার প্রচলন থাকলেও বাঙালির ঘরে দই এক আপন জনের মত। নানা রকম ভাবে একে প্রস্তত করা হয়।
রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এর লেখা থেকে নিয়ে কিছু জানালাম।
চার রকম দই কাহিনী ,ছাঁচি দই - জাল দেয়া ঘন দুধ দিয়ে বানানো
কাঁচা দই - জল বিহীন কাঁচা দুধ থেকে বানানো
দ্গড়া দই - তিন ভাগ দুধ এক ভাগ জল দিয়ে বানানো।
গলেয়া দই বা গয়লা দই - অর্ধেক দুধ অর্ধেক জল দিয়ে বানানো দই।
ছাঁচি দই এখন প্রায় লুপ্ত.কারণ এখন দই এ মিশে থাকে ভেজাল বনস্পতি।
মানুষ যখন প্রথম দই বানিয়ে ছিলো তা ছিলো টক. মিষ্টি দই এর চল একমাত্র বঙ্গ দেশে বাঙলা থেকে সব চেয়ে বেশী গুড় বাইরে রপ্তানী হতো সেজন্য বাঙলা কে বলা হতো গুড়ের দেশ। আর তার থেকেই গৌড় দেশ। 1835 সালের আগে বিদেশ থেকে এদেশে কলের চিনি আসা শুরু হয় নি তাও সে চিনি কেউ কিন্ত না।
কারণ গুজব ছিলো সেটি পরিস্কার করার জন্য হাড় এর গুঁড়ো ব্যবহার হতো বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় এর মিষ্টান্ন পাক গ্রন্থে লেখা আছে একটি পাত্রে দানাদার সার গুড় রেখে তার ওপর পুকুরের পাটা শ্যাওলা চাপা দিয়ে আট দিন রেখে দিলে সে গুড়ের লালচে ভাব চলে গিয়ে সাদা হয়ে যেত। তখন তাকে জাল দিয়ে তৈরী হতো সাদা চিনি। এই চিনিটির দীপ্তি বা কাশ এর জন্য এর নাম হয় কাশীর চিনি যা মানুষ কাশী ধাম এর পবিএ চিনি বলে মানুষ মনে করতেন এবং পূজা পার্বণ এ ব্যবহার করতেন। এর থেকেই তৈরী হতো চিনি পাতা দই।
উত্তরবঙ্গে বাঁশ এর চোঙা তে বহরমপুরে বেতের ঝুড়িতে দই পাতার কথাও শোনা যায়।
সাদা দই হলো চিনি পাতা দই আর লাল দই হলো গুড়ের বাতাসা না হলে চিনি গরম কড়ায় নেড়ে তা দিয়ে বানানো দই।
দই যাই হোক যে রূপে আসুক তাকে সহাস্যে তাকে বরণ করে নিতে রাজী বাঙালী মন।
শুধু মিষ্টি দই কেন রান্নাঘরে বাহারি রান্নার উপকরণ ও টক দই।
দই পটল দই ইলিশ,
দই রুই, ভাপা দই এক লোভনীয় উপাদেয় খাদ্য।
মাংসে দই দিয়ে রান্না এক আলাদা মাত্রা আনে সে সবাই স্বীকার করবে।
আবার রুপটানে দই সেকাল ও একালে সমান জনপ্রিয়। দই বেসনের প্রলেপ মুখে জেল্লা আনে নিমেষে কে না জানে।
কেশচর্চা তে হেনার সাথে দই চুল হবে রেশম কোমল।
তাহলে মোদ্দা কথা এসে দই এর মত সই আর পাই কই?
মাছেভাতে আর দই পাতে চলুক বাঙালীর রসনার রথ গড়গড়িয়ে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours