Old temple
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর: রাঢ় বঙ্গে কৃষি ও শিল্প জীবি ছাড়াও আর একটি শ্রেনীর জীবিকা ছিল ব্যবসা বনিজ্য তাঁরা বনিক সম্প্রদায় ! সেই প্রসঙ্গে আগের পর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, চাঁদসওদাগর দক্ষিনরাঢ়ের গোপভুমের চম্পাইনগরীতে বাস করতেন! স্হলপথে বানিজ্যের ব্যপকতা না থাকায় জলপথেই নৌকাযোগে বনিজ্য চলত!তাই বনিক সম্প্রদায় নদী বা সমুদ্রের তীরবর্তী অন্চলে বাস করতো! এর কারন জলপথে বনিজ্যের সুবিধা, চাঁদ সওদাগর গাঙ্গুর নদীর তীরে বাস করতেন , এই নদীর সন্নিকটেই দামোদর, তাই নদীপথে ব্যবসা বানিজ্যের উপযুক্ত ক্ষেত্র ছিল! কিংবদন্তী এই গাঙ্গুর নদীতে কলার ভেলায় স্বামী লখীন্দরের মৃতদেহ নিয়ে সতী বেহুলা দেবতাদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছেন , উদ্দেশ্য ছিল মৃত স্বামীকে পুনরায় জীবিত করা! যদিও মনসা মঙ্গল কাব্যে বলা হয়েছে, লখীন্দর কালনাগিনী সাপের ছোবলে বাসররাতেই প্রান হারান ! কিন্তু এই কালনাগিনী সাপটি সম্পূর্ন নীর্বিষ, তাই এই সাপের কামড়ে মৃত্যু অসম্ভব! সম্ভবতঃ মনসা দেবীর পুজার প্রচলনের জন্যই মনসা মঙ্গল কাব্যের মাধ্যমে চাঁদ সওদাগর ও মনসা দেবীর দন্দ্ব ও বেহুলা লখীন্দরের কাহিনির অবতারনা!
প্রকৃত পক্ষে রাঢ় বঙ্গে মনসা দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার করে পূজা অর্চনার প্রসার ঘটানোই মূল উদ্দেশ্য! একটা বিষয় লক্ষ্যনীয়, রাঢ় বঙ্গে বিশেষতঃ দক্ষিন রাঢ়ে, ধর্মঠাকুর ও মনসা দেবীর পূজার ব্যপক প্রচলন রয়েছে এবং ধর্মরাজ ( ধর্মঠাকুর) ও মনসার সেবাইতরা মুষ্টিমেয় দু একটি পরিবার বাদ দিয়ে সকলেই অব্রাক্ষ্মন! ধর্মরাজের সেবাইতরা আগুরী, সদগোপ, মাহিষ্য, সদগোপ, তন্তৃবায়, কায়স্হ প্রভৃতি! অন্যদিকে মা মনসার সেবাইতরা সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবর্গের , বাউরী, বাগদী, ডোম, মুচি,কেওট, ব্রাক্ষ্মনদের মধ্যে একমাত্র গ্রহাচার্যরা মনসা পূজা করেন! মা মনসা সর্পদেবী তাই সম্ভবতঃ যাঁরা মাঠে ঘাটে কাজ করে, সর্পদেবীকে তুষ্ট রাখতেই তাঁর পূজা করেন!
আর এজন্য যেহেতু বর্ষাতেই সাপের উপদ্রব বেশী হয় তাই শ্রাবন ও ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতেই মা মনসার পুজা হয়! মনসা মঙ্গল ও চন্ডী মঙ্গল কাব্যে মূলত রাঢ় বঙ্গের বিশেষ করে গোপভূমের বনিক সম্প্রদায়ের বিস্তারিত বিবরন আছে! গোপভুমে অন্যতম রাজাদের কেন্দ্র ছিল উজ্জয়িনী.... (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours