Fiture
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ (রাজ্যসভায় লেখকের শেষতম স্মরণীয় ভাষণের পরমূহুর্তের ছবি। ছবি সৌজন্যে লেখক); রবীন্দ্রনাথ যে কেন এদেশে খাদকের মুখে, তার কারনটা চিহ্নিত না করতে পারলে, আজকে ভারতীয়  সংকটের কারনটাকেও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। যাইহোক।সেখানে যাওয়ার পূর্বে, অন্য একটা গল্প বলে নিই। বিষয়টি বোঝাতে শুভিধা হবে। সংসদে আমার শেষ ভাষনের একটা অংশ নিয়ে।  অনেক পরে যখন এক মহাজ্ঞানীর বলে যাওয়া কিছু  কথার সাথে মিলাতে গিয়ে বুঝেছিলাম -  কি করে আজ থেকে ১৪ বছর পূর্বে  সংসদে তার  শেষ ভাষনে, ---- জীবন রায়ের মুখ থেকে  বেড়ুতে পারে এমন কিছু অবিস্বাস্য কথা,  তার ঠোট বেয়ে বেড়ুতে দেখেছিলাম। ক্রমে ইতিহাসের আলোকে দেখেছিলাম,  ভারতকে জনগনের গনতন্তের ফিরে আসার প্রশ্নে শুধু গুরুত্বপূর্ন নয়, এক মৃত্যুঞ্জয়ী সর্ত।  সে দিন আরো দু'টো কথা বুঝেছিলাম। প্রথমতঃ কোন সত্য, যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার যোগ্যতা দেখাতে পারে  -  সেটা কে বল্লেন, তার থেকেও  'কি বলা হোল', বিদ্দজনেরা তাতেই গুরুত্ব দেবেন। সংসদীয় জীবনের শেষ দিনে, সেই শেষ 'সত্য'টাকে, যেমন বুঝেছিলাম  বলার পর, এতো টেবিল চাপড়ানো পেয়েছিলাম, তা জীবনে ভোলার নয়। পরে বুঝেছি, সেই সহর্ষ সম্বর্ধনা কোন বক্তাকে নয় -   'সত্যে'কে  যখন দল মতের উপরে তুলে উপস্থিত করা হয়, সেই সত্যের প্রতি আনুগত্য বা স্বিকার।  কালটা ২০০৫ এর আগষ্ট; বাবরী মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়ার পরিনাম ভেতরে ভেতর গুমরাতে থাকলেও বাইরের হইচই অনেকটাই স্থিমিত।তবে শ্রীরাম চন্দ্র তখনো "জয় শ্রীরাম' হয়ে দানবিক শক্তিতে আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায় নাই।  এই সুত্রেই বলা উচিত হবে, সেই ভাষনের পরেই, সেদিন আমাদের যে সাত-আট জন সেদিন অবসর নিয়েছিলাম, তাদের সম্বর্ধনা হচ্ছিলো, রাজ্যসভা সভাপতির এজলাসে। সেই সভাপতি আর কেউ নন, উপরাষ্ট্রপতি স্বয়ং ভৈরন সিং সেকোয়াত সাহেব, দীর্ঘদিনের রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের দিক থেকে বিজেপি এর উচ্চ স্থরের নেতা। তাকে একজন মহৎ স্টেটসম্যান হিসেবেই চিনেছিলাম।তার  তার ঘড়ে যাওয়ার পথেই দেখা হয়েছিলো, সেকোয়াত সাহেবের সাথে । তিনি গলায় হাত রেখে, বল্লেন - আমি নাকি ভালোই বলেছিলাম। যাইহোক, যা বলেছিলাম শুরুতে,  কয়েক বছরের ব্যবধানে, শোনা এক মহাপ্রানের  দুটি, শিক্ষার রসায়নেই নির্মিত হয়েছিলো --  সেদিনে বলা  সে সত্যটি। এই সত্যকে ধাওয়া করেই, আমি রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছিলাম। প্রথম শিক্ষাটি এসেছিল সেদিনঃ যেদিন জিজ্ঞাষা করলাম, দু'দেশই, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে, অনেক দূর এগিয়ে গিয়েও এতো ভূল করে বসে রইলো। একজন ডুবে গেলো, অন্য জন বেঁচে গেলো  ----- তেমনটি কেন হতে যাবে? তিনি এক সান্তসৌ্ম হাসির মধ্যেই জবাবে বল্লেন - Some one has allowed denigration to country's past glory, when the other defended the glory and sought to consolidate  the past for the future ( একজন তার অতীত গৌরবকে কলংকিত হতে দিয়েছে, অন্য জন অতীতের গৌরবকে ঘষে মেজে ভবিষ্যতের সৌধ নির্মানের পথে এগিয়ে দিয়েছে। ঠিক এই কথা কয়টিকেই সংসদে,  জীবন রায় তার শেষ ভাষনে শেষ কথা হিসেবে , ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে গুছিয়ে বলেছিলেন। তিনি মাননীয় সভাপতির মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ---- ভারতকে যদি সৃজনী আরে বিকাশের দিক থেকে বিশ্বে প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে হয়, সেখানে জন অংশগ্রহনের কী রুপ হবে? ----
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো - - তিনি  কী মনে করছেন, বর্তমানে ভারতীয় মানবিক সত্বা যে বিন্দুতে দাড়ীয়ে, সেই  দুই মহাকাব্যিক ভাবপ্রবাহে আবিষ্ট থেকে, সে কী কোন দিন  আসধুনিকতার দরজায় পা রাখতে পারবে?  এই সুত্রেই সেদিন চিন যে জগত সভায় শ্রেষ্টত্বের সিংহ শিখরে আরোহন করেছে, তার রহস্য ভেদ করে বলেছিলেন। ওরা চৈনিক মহাকাব্যিক ব্যক্তিত হিসেবে, কনফুইসিয়াসে বসে থাকেন নাই। আবার তার দেওয়া শিক্ষাকে নতুন চিন নির্মানে ভিত্তি হিসেবেও মেনেছেন। তিনি আধুনিক চৈনিক সভ্যতার মননের ঠিকানা দিয়ে, আধুনিক  ভারত চিন্তনের মূল-কথাটি জানতে চেয়েছিলেন। ----- তিনি সংসদে তুল্লেন -    , কনফিউসিযাস, মাও সে তুং , এবং দেন সিয়াও পিং -,  এই  তিন মস্তিস্কের ককটেল যদি নির্মান করতে পারলে যা পাওয়া যাবে সেটাকেই 'চিনের' ভাব বা বুদ্ধিসত্বা বলে বুঝতে হবে।   তিনি জিজ্ঞাসা করলেন -  তবে ভারত কোথায় দাড়ীয়ে। সেই সত্বা রামচন্দ্রর বনবাস এবং মহাভারতের  স্বরযন্ত্রের মিলিত নির্য্যাসের উপরেই আধুনিক বিশ্বাসে টিকে থাকতে পারবে।  জ্ঞানী মানুষ ছিলাম বলে সে অপবাদ জীবন রায়কে কেউ দেয় নাই। কিন্তু জীবনের দীর্ঘকাল শ্রমিকের সাথে সাংস্কৃতিক এবং শেষকালে শিক্ষার  সাথে যুক্ত থেকেছি। কিছু কিছু  চিন্তা ভাবনা এ থেকে জন্ম নিতেই পারে। কিন্তু, কখনো সে সব ভাবনা কোন পূর্নতার পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় নাই।  -------শেষ প্রান্তে এসে সেই ভাষন ---, জীবনের বৈচিত্রময় পদচারনা  এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের অভিজ্ঞতাকে একটি মালা গেথে আমাতে উপস্থিত হয়েছে। ----- অখন্ড জ্ঞানের পথে  (দ্বিতীয় জ্ঞান হিসেবে সে প্রয়োজনীয়তাটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন - A communist has to learn the arts for  assimilating all the knowledge into a common unity)  অতীত থেকে বর্তমান ধরে ভবিষতের সেতুবন্ধনের পথেই মার্ক্সের কাছে পৌছুনো সম্ভব।  সে পথের পরিব্রাজক হিসেবেই আমি একদিন রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছিলাম। একবারে অন্তিম সত্য হিসেবে বুঝেছি, রবীন্দ্রনাথ ব্যতিত, এদেশে অন্য কেউ নেই যিনি ভারতীয় সভ্যতাকে অতীত থেকে বর্তমান বেয়ে আধুনিকতার আলোক স্থম্ভ হিসেবে মার্ক্সের কাছে পৌছে দিতে পারেন। তখনই দেখলাম রবীন্রনাথ এখনো  অনাবিস্কৃত। এই আবিস্কৃত না হওয়াটাই তার নিজের এবং ভারতীয় ভবিষ্যতের পথটাই  মৃত্যুযন্ত্রনার কারন হয়ে উঠেছে। (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours