Politics
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ 

এটা এখন নিশ্চিত, ২০১৯ যে আধুনিক ভারতটাকেই উল্টে দিয়েছে, সেকথাটা যে ইতিহাস বোধ ফিরিয়ে না পর্য্যন্ত কিছুতেই জনমনে ফিরে আসবে না, সেটা এখন নিশ্চিত। 
---   যদি মেনে চলা হয়, ভারতীয়া উদারবাদের  সংকটজনীত কারনই ইতিহাসকে পাল্টি ঘটানোর কাজটিকে সহজ করেছে, তবে এটাও বুঝতে হবে,  যত সময় জনগনের মধ্যে  ইতিহাসবোধ ফিরিয়ে আনতে  কারখান-খনিমুখ-অফিসগেট এবং  বন্দরকে সংগঠিত মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলে না দেওয়া যাবে, উদারবাদীদের দোলাচল নিশ্চল করা এবং তাদের অতি-দক্ষিনী যাত্রাকে স্তব্ধ করা যাবে না 
----- তবে যুদ্ধকালিন প্রস্তুতি নিয়ে, দল-মতের- উর্ধে উঠে শ্রমিক আন্দোলনকে উল্লেখিত বোধজগতে উন্নিত করার নতুন আয়োজন নির্মমানের মধ্য দিয়েই, 
---  একপ্রান্তে ইতিহাসবোধের বিস্তার এবং অন্যপ্রান্তে ফ্যাসিবাদ এবং অর্থনৈ্তিক পরাধীনতার যুগলবন্দির বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষনাকে রনভূমীতে টেনে নিয়ে গিয়েই, মানুষকে ফ্যাসিবাদী চিন্তন প্রকৃয়ার   বিপরীত মেরুতে  পৌছে দেওয়া প্রয়োজন হবে। 
শ্রমিক আন্দোলনে ইতিহাসবোধের  কথাটা  বল্লেই যখন  একটা অসম্ভাব্যতার ফুট্কুড়ি কাটতে থাকে, তার জন্য কিংবা বিদ্যালয় ব্যবস্থায়, ইতিহাস পঠন পাঠনে অনিহা কিংবা সাধারনকে যে, মহাভারত থেকে বিশ্বভারতে (অক্টোবর বিপ্লব কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে) টেনে নিয়ে যাওয়ার কথা কমরেডরা ভাবতেই ভয়  পান, তাতে ইতিহাস ভয়  থেকেও
----- ইতিহাসবোধ এবং ইতিহাসের পার্থক্যটা না বোঝার কারণে। এই না বোঝার পেছেনেও যেমন 'শ্রমের' উপরে 'কেন্দ্রিভূত পুজির' আধিপত্য বিস্তারের হিংস্রতার ভূমিকা রয়েছে, তেমন জীবন রায়ের মতো নেতাদের সোজাপথে, কারখানা গেট অথবা খনিমুখকে নিরন্ত্রনে রাখার প্রবনতা থেকে।
যদি মেনে চলা হয়, যে কোন রকম উদারবাদি বুদ্ধিজীবি থেকেও একজন শ্রমিকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সৃজনীর সাথে যুক্ত থাকার কারনেই ইতিহাসবোধ তো বটেই, ইতিহাস বোধের সাথে 'অনুভূতি যগতের সুক্ষাতিসুক্ষ' সংবেদনশীলতাগুলি সর্বাগ্রে ধরা পরার কথা হলেও সেসব
ধরা পরছে না, তবে  তার পেছনে দুটি কারনকে চিহ্নিত করতে হোত
---- প্রথমতঃ ইতিহাসের বাঁকগুলি ভালো করে বুঝতে এবং সেখান থেকে অনুভুতি জগৎকে (ইতিহাস বোধ)কে সমৃদ্ধ করতে, মার্ক্স দ্বন্দ্বতত্ব নিয়ে যে মানদন্ড দিয়ে গেছেন সেটা এবং আধুনিক বিশ্বকে বোঝার জন্য যে  
 ৫০ পাতার সাহিত্য টিকেই   (বিশ্বে বাইবেলের পরে এখনো  দ্বিতীয় সর্বাধীক প্রচারিত সাহিত্য)  ট্রেড ইউনিয়ন অফিসের বোধসত্বায় আনা হয় না। 
----- আমারা যাকে, উদারবাদী বুদ্ধিজীবি বলে মানি, তাদের যদি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে ভালো করে বোঝার বিষয়টি থেকে মুক্তিও দেওয়া যায়,  আমার ধারনা, ১৭৮৯ এর বুর্জোয়া বিপ্লব (ফরাসি বিপ্লবের) ধারনাগুলি সম্পর্কেই স্বল্প সংখ্যক মানুষের ধারনা রয়েছে। 
----   গত দুই দশক ধরে বিদ্যালয় শিক্ষার সাথে কিঞ্চিৎ যোগাযোগ থাকার সুবাদে, ইতিহাস পঠন-পাঠন সম্পর্কে যে মারাত্মক ভীতি ছাত্র-ছাত্রিদের মধ্যে রয়েছে, তার প্রধান কারন  মুলতঃ বৃহত্তর সমাজে ইতিহাস বোধ মহাভারতীয় শৃংখল ভেঙ্গে বেড়ীয়ে আসতে না পারা এবং ইতিহাস শিক্ষকদের মধ্যে, ইতিহাস পড়ানোয়,  ইতিহাসবোধ  নির্মানের উপাদানগুলিকে সুচিন্তিতভাবে নির্মুল করে দেওয়া। 
----   সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর থেকে জ্ঞান সংহতির বিকল্প ধারাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকে, কেন্দ্রিভূত বিশ্বপুজি, একমাত্র ইতিহাসবোধ নিধনের কারনেই, 
----   একপ্রান্তে প্রকৃতি বিজ্ঞানের একটি শাখা থেকে অন্য শাখাকে, অন্যপ্রান্তে প্রকৃ্তি বিজ্ঞানে অজৈব থেকে জৈব এবং জৈব থেকে 'চিন্তন' বা ইতিহাসের সেতুবন্ধনগুলি ভেংগে দেওয়ায় ইতিহাস বোধটাকেই ভেংগে দিয়েছে। 
এই সুত্রেই ইতিহাসের সাথে ইতিহাসবোধের পার্থক্যের একটা রেখাচিত্র রেখে, বিষয়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্ট করবো। ইতিহাসের অর্থ যখন, সম্মিলিত মানুষের সৃজনের অভিমুখে ক্রিয়াকান্ডের ঘাত-প্রতিঘাত,জ্ঞান ও সংস্কৃতির চলমান ধারা সম্পর্কিত জ্ঞান। 
---- তখন ইতিহাসবোধ হোল, ইতিহাসের মূল বাকগুলিকে বুঝে নিয়ে, ইতিহাসের সাথে মানব সভ্যতার বিকাশ সংক্রান নিয়ম এবং বিকাশের অভিমুখ  সম্পর্কে বিজ্ঞান সম্পর্কীত ধারনা। ইতিহাস বিজ্ঞান, রেনেশা এবং তার পরিনতি হিসেবে ফরাসি বিপ্লব (১৯৮৯) থেকে ইতিহাসের মানবিক উত্তোরনের কালের দুটি স্তর হিসেবে অক্টবর বিপ্লব এবং হিটলারের উপর সোভিয়েতের হাত ধরে বিশ্ব মেহনতিদের বিজ্য় পর্য্যন্ত সময় কালক বিবেচনা করা হয়। 
---- লেখার শুরুতে যখন চিহ্নিত করা হোলঃ
---- রবীন্দ্রনাথ-নেহেরু-জ্যোতি ধ্বংসের পাচালীর অর্থ আধুনিক ভারতটাকে উল্টে দেওয়া, এর অর্থ নিশ্চিতভাবে ধরতে হবে
----  ফরাসি বিপ্লব থেকে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরিনাম হিসেবে যে আধুনিক বিশ্বের জ্ঞান ও সংস্কৃতিগত উপাদানের পাশাপাশি যে মানবিক উপাদান সমুহ নির্মিত হয়েছিলো, সেগুলি উলটে যাওয়া।
---- বিষয়ের সাথে ভাতীয় ইতিহাসবোধের সংকটকে নিয়ে আলোচনায় যাবো তখন, শিরোনামার বিষয়গুলি স্পষ্ট হবে অনেক।
---- বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকে রবীন্দ্র নিধন, নেহেরুর সাথে ভারতীয় আধুনিকতা নিধন, এবং সাথে সাথে বুর্জোয়া-সামন্তিক ব্যবস্থায় একটি সাম্যের সরকার নিধনের অর্থটা বলতে গিয়ে এনারা যে কী সেটাই দু' চার কথায় বলে নিঃ 
রবীন্দ্রনাথকে একটুকরো পাবেনঃ 
(ক) যখন তিনি এক 'বনফুলের লক্ষকোটি বছরের রুপান্তর প্রকৃয়া্কে উল্লেখ করে বলছেন, প্রকৃ্তি প্রতিটি ক্ষনের মাতৃস্তনে এই রুপান্তরের কারন হয়েছেন, তিনি বিবর্তনবাদকে স্পষ্ট করে জ্ঞান তত্বকেই সমৃদ্ধ করছেন।রবীন্দ্রপূর্বকালে কোন ভারতীয় এমনভাবে বুঝিয়েছেন বলে শোনা যায় নাই। 
(খ) নির্ঝরের স্বপ্নভঙ কবিতায় চিত্তমুক্তির অর্থকে যেভাবে উল্লেখ করেছেন - রবীন্দ্র পূর্ব কিংবা উত্তরকালে কাউকে তেমনভাবে বলেন নাই। তিনি লিখছেনঃ "ওরে চারি দিকে মোর, এ কী কারাগার মোর - ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর্ । 
যারা বুঝেছেন এই দুই এবং বিশ্বভারতীর মহামানবিক সত্য নিয়েই রবীন্দ্রনাথ দেশের আধুনি সত্বকে বাচিয়ে রাখতেই, রবীন্দ্র নিধন যজ্ঞের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পরতেন।
তিনিই তো নেহেরু যিনিঃ
(১) রবীন্দ্রনাথের মন্ত্রশিষ্য হিসেবে, ভারতীয় ইতিহাসের পুনোরুদ্ধার করে
ঘোষনা করলেনঃ ভাতিয় ইতিহাস এমন এক বিজ্ঞানর স্পর্শ পেয়ে, নতুন অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে, যেখানে সে আধুনিক দর্শনের পেছনে পেছনে  এগিয়ে নিজেকেও সমৃদ্ধ করছে এবং দর্শনকেও নবদিগন্ত উন্মচনে এগিয়ে দিচ্ছে। 
(২) তিনিই যখন, বৃটেন যখন ভারতের সব সঞ্চিত স্টারলিং ব্যালেন্সকে চুরী করে ফাক করে দিলো এবং আমেরিকা ভারতের আশ্রিতা (সেটাই এখন সেরে ফেলেছে) কষি দেশে বদলে দিত চাইলো, 
----- তখন স্তালিনের সাথে যে অর্থনৈ্তিক চুক্তি করলেন নেহেরু, তাই ২০১৯ পর্য্যন্ত কমবেশী ভারতের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করেছে। এই বিকাশটাই, এবারে 'পরমব্রহ্মের' পেটে গেলো।
জ্যোতি বসুঃ
( 1) বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম পুজিবাদী এবং বুর্জোয়া চিন্তন কাঠামোর মধ্যে গনতান্ত্রিক প্রকৃয়ায় ৩৪ বছরের সরকার চলালেন। চলতঁ আরো  ৫০ বছর যদি না বিশ্বায়ন বিশ্ব সংকট এই সরকারের ঘারে চেপে না যেতো। শ্রীমতি মমতা বিক্রি হয়ে গেছেন, তা না হলে তিনিও প্রকাশ্যে বলতেন - তার সংকটের প্রধান কারন বিশ্বায়ন।
(2)  তার থেকেও ভারতের ইতিহাসে যে তাৎপর্য্যপূর্ণ ঘটণাটি ঘটিয়ে গেছেন,যা পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে গেছে এবং রাজ্যের সাম্যবাদী কমরেডদের ইতিহাসবোধহীনতায়, সেই তাৎপর্য্য অতলে তলিয়ে গেছে, তা হোল এসিয়ার সর্ববৃহৎ ভূমি সংস্কার। 
(২)   সি পি আই এম এর রাজ্যনেতৃত্ব যদি খোজ নিয়ে দেখেন ৯০ভাগ কর্মী জানেন না, জ্যোতিবাবু-হরেকৃষ্ণ কোনার-বিনয় চচধুরী জুটি সেদিন ২০০ বছর পূর্বের লর্ড কর্নোওয়ালিশের অনাচারকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছিলেন এবং সেই অনাচারটাই ছিলো, বাংলা, বিহার, উরিষ্যা এবং আসামের চরম গরিবি, অশিক্ষা, অত্যাচার এবং  ধর্মান্তকরনের মুল কারন।
(৩) আরো একটু যদি নেতারা খুটিয়ে দেখেন, সংস্কারের মূল আইনটা নেহেরু নিজে সংসদে পাশ করিয়েছিলেন। নেহেরু এবং বিধান রায়ের মুরোদে কুলায় নাই, জমিদারদের প্রাচীর ভেঙ্গে সেটা কার্য্যকরী করলেন
বামফ্রন্ট।
(৪) সেই জাগরন, অংশত ভেংগে দিলো, বিশ্বায়ন বাকিটা ভাংগার জন্যেই অস্র-সস্ত্র দিয়ে শ্রীমতি মমতাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
মনে আছে  সেকালে কমরেড ডাংগের একটা ভাষন সংসদে এই সংস্কারের অনেক আগে
---- তিনি নেহেরুকে উল্লেখ করে বলছেন - " এ এক বিচিত্র প্রধানমন্ত্রী, এই সংসদের বসে, রাজা-তন্ত্র নিধন করে আইন নির্মান করেন, আর বাইর গিয়ে জমিদার দের সাথে আপোষ করেন"। আসলে কংগ্রেস দলটাই ছিলো সেরকম । কংগ্রেসকে দিয়ে জমিদারেরা, জ্যতিবাবুকে টাইট করাতে পারলো না, তখন জমিদারদের ছেলেপিলেদের সাথে দিয়ে
---- শ্রীমতি মমতাকে পাঠিয়ে দিলেন, ভূমি এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্কারের সর্বনাস করতে। (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours