Fiturr
সুমিত তালুকদার, ফিচার রাইটার, উত্তর ২৪ পরগনা: গৃহশিক্ষকতা আজ শিল্পে পরিণত। ঘরে ঘরে কুটীর শিল্প। তেলেভাজা শিল্পের মতোই জনপ্রিয়। বেকার যুবক- যুবতীদের রুজি- রোজগারের সহজতম পথ ও ধান্দা। লাইসেন্স লাগে না ট্যাক্স দিতে হয় না। মাদুর পেতে বসে পড়লেই হোলো। প্রথমে Charity begins at home কাকা- জেঠা, মাসি- পিসির ছানাপোনা দিয়ে শুরু। তারপর পাড়া- প্রতিবেশীর গজা, ভজা, বাপ্পা, নেপলা, গোপলা দিয়ে ‘মানুষ- গড়ার’ কারবার। অবশেষে ‘স্টার্ট – আপ’ ব্যবসা শিল্পে রূপান্তরিত হলে সত্যদার মতো দাগি বা ব্রান্ডেড টিউটোরিয়াল হোম। বাঙালির ব্যবসা হবে না মানে? গৃহশিক্ষকতা থেকে হোম সার্ভিসের ব্যবসা করে একাধিক বেকার (?) যুবক যুবতী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে অমিত স্যার, সৌমিত্র স্যার কিভাবে হওয়া যায়? ফ্ল্যাট কেনা যায়, দুচাকা থেকে চার চাকায় রাইড করা যায়, ধনী শ্বশুর পাকড়াও করা যায়, সর্বোপরি সম্বৎসর এস এস সি-র রাজনীতি ও উপেক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রমাণ করে দেওয়া যায় যে বিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষকদের চেয়েও বেশি উপার্জন করা যায়।
বুক ফুলিয়ে বলা যায় – আমি গৃহশিক্ষক। এই আমার সগর্ব সতৃপ্ত পরিচয়। সম্প্রতি এই সরলবিশ্বাসী নির্বিবাদী গৃহশিক্ষকতায় থাবা বসাচ্ছে, ভাগ বসাচ্ছে এক শ্রেণীর, একাংশ শিক্ষকের দল। বিদ্যালয়ের মোটা মাহিনার, সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত সরকারি চাকরির আদ্যন্ত সুবিধাভোগী এসব তথাকথিত শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি একধরনের বেআইনি সমান্তরাল শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে ফুলেফেপে উঠছে। গৃহশিক্ষকতার নামে তারা একচেটিয়া ব্যবসা চালাচ্ছে, স্বার্থপরের মতো ব্যবহার করছে। উপরি – রোজগার করছে। গোপনে ছাত্রদের সবরকম সুবিধাদানে প্রস্তুত তারা, আগাম প্রশ্ন বলে দেওয়া। নিজেদের ছাত্রদের পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেওয়া যাতে মধুলোভী ছাত্ররা তাদের পুস্পপাঠোদ্যানে ভিড় করে এবং ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। তবে গৃহশিক্ষকদের জন্য সুখবর। সরকারি ও সরকারপোষিত সাহায্যপ্রাপ্ত সমস্ত বিদ্যালয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তর ও স্থানীয় প্রত্যেক জেলা পরিদর্শক অফিস থেকে নির্দেশিকা জারি করার মাধ্যমে অবিলম্বে প্রাইভেট টিউশন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিগত সরকার প্রাইভেট টিউশন রদ করার যে সদর্থক ভূমিকা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বর্তমান সরকার আইন করে তা বলবত করতে চায়। সুতরাং আগামী দিনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে চরম সংকট ও দুরবস্থা উপস্থিত হবে তা বলাই বাহুল্য। কড়া শাস্তি হিসাবে সাময়িক বরখাস্ত, ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত,এমনকি ‘dismissal from service’ – ও হতে পারে। গত ১০ মে কলকাতার একটি বহুল প্রচারিত ইংরাজি দৈনিকের ই-সংস্করণে ‘ক্রাকডাউন অন প্রাইভেট টিউশন’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। 
প্রাইভেট টিউশনকে কেন্দ্র করে বাজার দখলের অসম প্রতিযোগিতা – এর ফলে অবিলম্বে বন্ধ হবে। বিকল্প কর্মসংস্থানের অবারিত সুযোগ পাবে প্রকৃত অভাবী শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours