জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভাঃ
বন্ধুদের মধ্যে যারা এই কলমের লেখা অনুসরন করছেন, ২০১৯ এর পর তারা কী কখনো মানবেন,
---- ভারতের অন্ততঃ ১০ ভাগ মানুষ, নিজে এবং নিজের দিক থেকে হল রাষ্ট্রীয় চেতনাকে, ইতিহাসহীনতা কিংবা আদি- ভৌতিকবাদের (metaphysics) বিপরীতে
---, ইতিহাসকে মুক্ত-মানবিকতা এবং বিজ্ঞান-মুখিনতার পথে
চালিত করতে কিঞ্চিত চেষ্টা করছেন।
---- সেই সুত্রেই, অন্যপ্রশ্নটা আসবে। যদি মেনে চলা হয়, সোভেয়েত কালে, তিলে তিলে খন্ড খন্ড জ্ঞান একসুত্রে বেঁধে মানব সভ্যতার শ্রমের অবদানকে যেখানে ইতিহাস এবং সংস্কৃতির ধারায় সৃজনীমুখীন করা হয়েছিলো,
---- সেগুলিকে ভেংগে গলিয়ে, যখন এক তরলতার পারস্পরিকতায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হোল, বিশেষ করে ভারতে এক জ্ঞানহীন-সংস্কৃতিহীন, মোবাইল ইংরাজী কাঠামোতে স্থান করে দেওয়া হোল
---- সেই বিচ্ছিন্নতাবোধকে ইতিহাস চেতনা হিসেবে বোঝানো হোল এবং এইভাবে, ইতিমধ্যেই হিংস্র থেকে হিংস্রতর হতে থাকা ক্রম কেন্দ্রিভূত পুজির সেবায় লাগানো হোল এইভাবে বিশ্বায়নের পথে, অন্যান্য তৃ্তীয় বিশ্বের দেশগুলির সাথে
---- ভারতকেও ক্রমে জ্ঞান এবং সংস্কৃতিহীনতার উলঙ্গতায় নিক্ষেপ করেছে এবং দেশকে কার্য্যত দাসত্ব থেকেও দাসত্বের চিন্তনে ক্রমাগত ঠেলছে এবং ভারতকেও বিশ্ব সম্পদের দখলদারিতে বদলে দিচ্ছে
---- এই দখলদারীকে 'নীতিনিষ্ঠ' দেখাতে গিয়ে এই দাসত্বকেই ইতিহাসের পরিসমাপ্তি হিসেবে দেখান হয়েছে এবং বলা হয়েছে
---- যেন এখানেই ইতিহাসের সাথে দর্শনেরও শেষ অধ্যায়।
---- আমারা বামপন্থীরাও কদাচিত বুঝেছি
---- কিভাবে, , ইতিহাস- বিজ্ঞান-সংস্কৃ্তির, অখন্ডতা এবং একাত্মতা বিনাশে, মানবিক সত্বাকে হিংস্র থেকে হিংস্রতর করে তোলা হচ্ছে এবং
---- করা হচ্চে সমাজকে, ফ্যাসিবাদী হিংস্রতার কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে ।
সেদিন যখন বিরাষ্ট্রীয় করনের অর্থনীতি নিয়ে আসা হোল, সংসদে এবং ট্রেড ইউনিয়নের ময়দানে যখন সামনে দাড়িয়ে লড়াইতে ছিলাম
---- আজ স্বিকার করছি, অনেক স্বপ্নই সেদিন অনেকটাই স্বল্প অভিজ্ঞতার কারণে গনশত্রুর শয়তানি প্রবৃত্তির , এবং সেউ অভিমুখে সংসদীয় ব্যবস্থাকে 'নর্দমা' (লেনিন বলতেন শুয়োরের খোয়ার) বানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাকে যথেষ্ট খাটো করে দেখেছিলাম।
-- এটা এই কলম লেখকের এক নিজের কাছে নিজের গৌরবগাথা, বিশ্বায়ন এবং বিরাষ্টীয় বিরোধিতায়, যে ভারতব্যাপি সংযুক্ত ধর্মঘট হয়েছিলো, তার প্রধান সংগঠক হিসেবে , সেদিনের উত্তাল জনশ্রোত এবং জনাগ্রাহ আমায় মোহিত করেছিলো, উদ্দিপিত করেছিলো
---- সেদিন শ্লোগান তুল্লাম, শতবছরের সংগ্রামের শুরু হোল। একটা শ্লোগানকে যখন ভাব এবং রাজনীতির সাথে মেলানো যায়, কিভাবে জলোচ্ছাসকে প্লাবনের চেহারা পেতে পারে, সেদিন বুঝেছিলাম।
---- সেই জলোচ্ছাস যখন নেমে গেলো, বুঝলাম, ইতিহাস বোধের সাথে শ্লোগানের যুগলবন্দি না ঘটায়, বিশ্বায়ন বিরোধী আন্দোলন, শ্রেফ বিরাষ্ট্রীয়করন বিরোধীতা এবং বিরাষ্ট্রীয়ন বিরোধীতা "চাকুরীর নিশ্চয়তার' সংগ্রামের আবেদনে সংকুচিত হয়ে এলো।
বিষয়টাকে যদি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তবে ইতিহাস বিহীনতার পরিনাম হিসেবে, একে একে যে বিষয়গুলী সামনে আসবে এবং যার উত্তর শ্রমিক শ্রেনী ছাড়া অন্যরা খুজে পেলেও, শেষ পর্য্যন্ত, উদারনীতিক অপ্রাসংগিতার জালে গুটিয়ে যাবেঃ
প্রথমতঃ সমাজিক রুপান্তরে অংশ নিয়েই, রিজার্ভেসনের অধিকারকে সুযোগে বদলাতে পারেন, অন্যথায় নিশ্চিত গৃহ যুদ্ধ।
দ্বিতীয়তঃ শ্রমিক আন্দোলনই চিহ্নিত করে দিতে পারতো, কি করে - শুধু সরকারী চাকরী নয়, বেসরকারী চাকরী থেকেও ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের সরিয়ে দিয়েছে। সময়কালে হয়তো বা, প্রাতিষ্ঠানিক স্থরে সেখানেও সংরক্ষনের দাবী করতে হবে, যদি না ইতিমধ্যে রুপান্তরের কাজটা শুরু না হয়। ... আবার তারাই বলে দিতে পারেন, অন্য কেউ নন, কেন ১৯৭৯ এর পর থেকেই বাংলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে সি পি আই এম এর গনভিত্তি ভাংগতে শুরু করেছে।
--- এই ভাবে শ্রমিক আন্দোলন এবং তার সাথে সাথে ক্রমে,সাধারনের মধ্যে, ইতিহাসবোধের সাথে অসভ্যতার দড়িটানাটানিতে, ইতিহাসবোধ যেমনভাবে পিছু হাটছিলো,
--- তেমনভাবেই, গনতান্ত্রিক মানষসত্বাকে হারিয়ে দেওয়া চলতে লাগলো।
বাইরে ফ্যাসিবাদী ভাবসত্বার প্রচন্ড চাপে
---- ভেতরের স্বতস্ফুর্ততা সর্বস্য চিরেচিপ্টে হতে লাগলো।
আধুনিক ইতিহাস, তার বিড়ম্বনাকে দেখিয়েই বার বার চিৎকার করে বল্লো, এই অসভ্যতা থেকে বাচানো হোক। কিন্তু ইতিমধ্যে, ইতিহাসবোধহীনতায় আমরাই যথেষ্ট অসভ্য হয়েছি। আমরা ব্রহ্মন্যবাদের বিরোধীতা ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই সেই গোলকধাধায় নিজেদের ঢুকতে দিয়েছি।
------ কারখানার মধ্যে কিভাবে শ্রেনী সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বর্ণ সম্পর্কের প্রধান্য পেয়েছে, তা নাকের ডগায় নেতাদের চরিত্রে ধরা পরলেও বুঝতে অস্বিকার করেছি।
অনুরুপভাবে, যখন শিক্ষিত তথাকথিত জ্ঞানিগুনীরাও, রোম, মোঘল এব্বং বৃটিশ কিংবা বর্তমান আমেরিকান সম্রাজ্যের তফাৎগুলি (দ্রষ্টব্যঃ এই কলমের লেখন) বুঝতে অস্বিকার করলো
--------- তখন ইতিহাসবোধহীন, বিজ্ঞান বোধহিন, খন্ড বিখন্ড সংস্কৃতিতে বিভাজিত হওয়া জ্ঞান সত্বার দেশটিকে অতিসহযে পাগলা গারদে বদলে দেওয়া সোজা হয়ে গেলো। (চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours