ভুলো না ভুলো না এ গাঁয়ের কথা
এ যে সাধকের গ্রাম রে -
কত মহিমা কীর্তি গরিমা
ছিল এই মানকরে
সাধক চন্ডীদাস করে অঞ্জাত বাস,
ঠাকুর নিমাই আসি এই ঠাঁই
তন্ত্রশিক্ষা করে!
এ নহেক মিথ্যা নহে গো কাহিনী
ন্যায়- শিরোমনি পন্ডিত রঘুমনি
জনমিল এই মানকরে !
এ গাঁয়ের ছেলে সাধক জীবন
সাধনায় পেল পরম রতন,
হেলায় মানিক ঠেলিল দুরে!
এ গাঁয়ের এক ভট্চাজ
মায়ের সাধক বৈদ্যনাথ,
'ইচ্ছা ভোজন' দিল সবারে!
মানকর গ্রামের সু সন্তান জীবন গোস্বাীকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর তাঁর 'স্পর্শমনি ' কবিতাটি রচনা করেছেন!" ......শুধালেন সনাতন ' কোথা হতে আগমন,
কি নাম ঠাকুর?'
বিপ্র কহে, কিবা কব পেয়েছি দর্শন তব
ভ্রমি বহুদুর !
জীবন আমার নাম মানকরে মোর ধাম
জিলা বর্ধমান!'
মানকর যে বহু তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তেমনই মানকরের মাটি ধন্য হয়েছে গুনীজনের পদধূলীতে! পূর্বে মানকর স্বাস্হ্যকর স্হান বলে গন্য হতো!১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে ঈস্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ভগ্ন স্বাস্হ্য উদ্ধারের জন়্য কিছুদিন কবিরাজ বাড়ীর অতিথি ভবনে বিশ্রাম নেন! সেই সময়ে ১৮৫৫ খ্রীঃ ৩ রা নভেম্বর মানকর " নর্মাল স্কুল' স্হাপন করেন! পরে লর্ড স্যার আমলে স্কুলটি 'উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় ' এ পরিনত হয়!
সাধক কবি নীলকন্ঠ প্রতি বছর মানকরে জৈষ্ঠ মাসে বারোয়ারী কালীপুজো উপলক্ষে ' কৃষ্ন যাত্রা ' পালাগান করতে আসতেন! একবার পালা চলাকালীন মেয়েরা খুব গোলমাল করায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি রসিকতা করে মন্তব্য করেন " পুরুষ কই মানকরে , মেয়েরাইতো মান করে!" সে মন্তব্য নিয়ে আজও গ্রামের মানুষ রসিকতা করে!
পরম বৈষ্নব হরিদাস বৈরাগীর পদধুলী পড়েছিল এই গ্রামে! তারাপীঠের সিদ্ধসাধক বামদেবের শ্রী পুর্ন ক্ষেপা এই গ্রামের সন্তান!
তাঁর পুর্বনাম পূর্নচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়, তিনি বাঁকুড়া জেলার পাঁচকোল উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন! হঠাৎ সংসারের প্রতি তীব্র বৈরাগ্য দেখা দিলে তিনি তারাপীঠে বামদেবের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন !বামদেবের নির্দেশে নেপালের পশুপতি নাথ মন্দিরে মহাদের কঠোর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন!তিনি 'তারা ' নামে ক্ষিপ্ত হতেন তাই লোকে তাঁকে পূর্নক্ষেপা ' বলতো!তারাপীঠে বামাক্ষেপার সমাধির পাশেই তাঁকে ও সমাধিস্হ করা হয়!
কাশ্মীর স্টেটের দেওয়ান মহেশ বিশ্বাসের বাড়ীতে এসেছিলেন নেপালের রাজকন্যা সংসার ত্যাগিনী মাতাজী শ্রীশ্রী ঞ্জানানন্দ সরস্বতী! মহেশবাবু অমর নাথ যাত্রাকালে এক গুহায় মাতাজীর দেখা পান! তাঁরই অনুরোধে প্রথমে কাশ্মীর রাজপ্রাসাদ পরে মানকরে আসেন! তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ও তত্বঞ্জানের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হ'ন পন্ডিত দেবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য ও মহেশবাবুর দীক্ষাগুরু তান্ত্রিক প্রবর শ্রীমৎ কৈলাশপতি মহারাজ! তাঁর সানিধ্যে এসে রাইপুর ও খান্ডারী গ্রামের অনেক কান্যকুজ্ব ব্রাক্ষ্মনকে তিনি দীক্ষা দেন!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours