Politics
স্বপন দাস, প্রবীণ সাংবাদিক, কলকাতা: রাজ্য আর রাজনীতিতে এখন গায়ের জামা বদলের একটা স্রোত চলছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ১৮তি আসনে জিতে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বি জে পি , রাজ্যের শাসকদলকে নানা ভাবে ব্যাতিব্যস্ত করে তুলেছে। পালের হাওয়া অন্য দিকে ঘুরছে ভেবে , রাজ্যের শাসক দলের নিচু তলার নেতা থেকে বিধায়ক । সবাই ছুটে চলেছে বি জে পি’র দিকে । এই সেই বিষয়কে সামাল দেবার জন্য স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার জন্য , রাজ্যের শাসক দলের সুপ্রিমো আর নিজের কাছের লোকতো দূরের কথা নিজের হাতকেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। এখন এমন অবস্থা যে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে , হাজার বার হোঁচট খেতে হচ্ছে। কেননা কোন সিদ্ধান্ত কিভাবে বুমেরাং হয়ে নিজের দিকেই ফিরে আসে , এটা তিনি বুঝতেই পারছেন না। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে। তিনি একজন ভোটগুরুকে নিয়ে এসেছেন । বছরে ৫০০ কোটি তাঁর দক্ষিণা। পি কে নামের ওই ব্যাক্তি কতটা আমাদের রাজ্যের , রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে চেনেন , বা কতটা হোম ওয়ার্ক করে মাঠে নেমেছেন , সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যের শাসকদলের একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানাচ্ছে যে , প্রশান্ত কিশোরের এই না জেনে বা না বুঝে এমন কিছু প্রয়োগ করা বিষয় ইতিমধ্যেই বেগ দিয়েছে খোদ শাসক দলকেই। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে। আমাদের রাজ্যের সিংহ ভাগ মানুষ রাজনৈতিক ক্ষেত্রের নাড়ি নক্ষত্রের খোঁজ রাখে। এমন কি গতি প্রকৃতিও লক্ষ্য রাখেন।
আমাদের এই রাজ্যে জাত পাত বা ধর্মীয় রাজনীতি খুব একটা ভোটের ময়দানে প্রভাব ফেলে না । তাঁর কারণ , এখানে বর্তমানে শিক্ষিতের সংখ্যার বেড়ে চলা ও সেই কারণে সচেতন হবার বিষয়টাও রয়েছে এর পিছনে। রাজনৈতিক দলগুলি জাত এর ক্ষেত্রে বা ধর্মীয় মেরুকরণের ক্ষেত্রে বিভাজনের রাজনীতি করতে গেলেও একেবারে শিকড়ে সেটা দানা বাঁধতে পারে না। কিছু সন্ত্রাসের রাজনীতি রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতার কায়েম করতে গিয়ে , ব্যবহার করলেও , আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার বাঁধন , সেটাকে খুব অল্প সময়েই প্রতিহত করে। সাময়িক ভাবে হয়ত বা সেটা কিছুটা প্রভাব ফেললেও। অল্প সময়েই সেটা মিটে যায়। এমতাবস্থায় পি কে প্রাথমিক চারটি পদক্ষেপ শুরুতেই ফ্লপ তকমা পেয়ে গেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিরোধী রাজনৈতিক মহল মনে করছে , পি কে’র এই পদ্ধতি প্রকারন্তরে তাদের সহযোগিতা করছে, শাসক দলের বিরুদ্ধে জোট বাধার। অন্য দিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের এক প্রথম সারির নেতার একটা উক্তিকে সামনে এনে বিরোধী রাজনৈতিক মহল বলছে , পি কে এই রাজ্যে এসেছে বিজেপি’কে সহযোগিতা করতে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতাতে নয়। যদি জেতাতেই আসতেন তিনি , তাহলে সাম্প্রতিক নেওয়া চারটি পদক্ষেপ শাসক দলের বিপক্ষে যেত না। চারটি পদক্ষেপ কি ? ১। জনসংযোগ অভিযান দানা বাধল না, ২। কাটমানি প্রসংগ এনে দলে বেনোজল দূর করে শুদ্ধিকরণ করতে চেয়ে ছিলেন। শুরুতে বেশ কিছু নেতা জামা বদল করেও ফেলেছিলেন । কিন্তু দেখা গেল, বিশ্বাস যোগ্যতার জায়গা থেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল দল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটা শুদ্ধিকরণতো হলই না, উল্টে ঘরের ভিতর আগুন লেগে গেল, ৩। চিকিৎসকদের বিদ্রোহের সময়েও নাকি পিকের কিছু উপদেশ নাকি ছিল। এমনটাই মনে করে বিরোধী রাজনৈতিক মহল। সেটাও কাজে আসে নি , ৩। দলের ভিতর আয়ারাম ও গায়ারামদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবার কোথাও নাকি ছিল। সেটার ক্ষেত্রে কেউ নাকি দ্বায়িত্ব নিতে চায় নি। ৪। প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের ক্ষেত্রেও নাকি পি কে ফরমুলা কাজে আসেনি। এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের।আর এর সঙ্গে ছিল “ জয় শ্রী রাম নিয়ে বিরোধী ট্রোল। সেটাতেও পিকের ফরমুলা কাজে লাগেনি। এসব দেখে , শাসকদলের ভিতরেই নাকি আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সুত্র। শাসকদলের একটি সুত্র জানাচ্ছে যে,পিকে মানে প্রশান্ত কিশোর এখনও সেই অর্থে কাজ শুরু করেন নি। তাই পিকে’কে নিয়ে যা বলা হচ্ছে সব গুলিই অতিরঞ্জিত।
তবুও রাজনৈতিক মহলের কথা ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। তাদের মতে ,যবে থেকে প্রশান্ত কিশোর রাজ্যের রাজনীতির চানক্য হবার চাকরি পেয়েছে, তবে থেকেই নাকি সব ক্ষেত্রে রাজ্যের শাসকদলের অবসানের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours