জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
প্রকৃত ইতিহাসের সাথে পুঁথির সম্পর্কের মাঝখানের ফাঁকা যায়গাটা চিহ্নিত করতে পারাটাই, একজন সমাজবিজ্ঞানীর সাথে ইতিহাসের কারিগরের ফরাক। এই ফরাকের যায়গাতেই কিন্তু ইতিহাসের খাজগুলি চিহ্নিত এবং সেখান থেকেই, রুপান্তর পর্বে এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে উত্তরনের
সুতোটি কারিগরকে খুজে বেড় করতে হয় এবং অভিমুখটিকে পরিস্কার রাখার সামাজিক উদ্যাগকে সংহত করতে হয়।
----- সমাজ বৈজ্ঞানিক গবেষনার মধ্য দিয়েই লেনিনবাদ বিধান দিয়েছে, পুঁজির চক্রাকার সংকটের কারনেই, রেনেসাঁ যখন স্তব্ধ হয়ে যায় এবং পরিনামে পুঁজি সামাজিক সৃজনীর প্রশ্নে বিশ্বাসঘাতের ভূমিকা নেয়, তখন উল্লেখিত ফাকা বা স্পেসগুলিতে তন্যতন্য করে রুপান্তরের পথে ছিন্ন সুতোর মুখগুলি, খুজে নেওয়া এবং সংগঠিত হস্তক্ষেপে রুপান্তরের অভিমুখকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায়
----- শ্রমিক শ্রেনী ব্যতিরেখে, অন্যকেউ ইতিহাসের চালিকা হিসেবে টিকে রইলো না। ইতিমধ্যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তোর কালে, প্রথম দিকে, উচ্চ মধ্যমবর্গীয় উদানীতির লোকজন সমাজতন্ত্রের প্রভাবে, বিপ্লবী অভিমুখে টিকে থাকলেও, ক্রমে উদারবাদ অপ্রাসংগিক হয়ে যাওয়ার কারণে, সমাজ যখন কার্য্যতঃ ভেংগে পরতে শুরু করেছে, তখন শ্রমিক শ্রেনীর প্রাসংগীকতাই স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ইতিহাসের চালিকা হতেই হোত।
অন্যথায়, ফ্যাসিবাদ যে নিশ্চিত, সেটাই মেনে চলতে হবে।
এখান থেকেই, অন্য দুটি গুরুতর প্রশ্নটা সামনে আসবে। প্রথমতঃ শ্রমিক শ্রেনীর মধ্যে সৃজন বিকাশ ঘটানোর সচেতন নেতৃ্ত্ব ব্যত্তিত, কোন সাম্যবাদী দলের বিকাশ কি সম্ভব? দ্বিতিয় প্রশ্নঃ যদি মেনে চলতে হয়, সৃজনীর সন্ধানে দলের নেতৃ্ত্বদায়ী অবস্থানটিও শ্রমিক শ্রেনী থেকেই আসবে এবং
------ যেটা আসে সেটাকেই চক্রবৃদ্ধির হারে, দল শ্রমিক শ্রেনীকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রকৃয়ায় যেমন সক্রীয় হতে পারবে , তেমনই, শ্রমিক শ্রেনীর রাজনৈ্তিক নেতৃ্ত্বে সংহত হতে থাকবে, তবে এই প্রকৃয়া্টি কেন, বারবার
জনগনের গনতন্ত্রের কাছাকাছি এসেও ফস্কে যাচ্ছে।
----- এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে, যেমন খন্ডিত শিক্ষা, অখন্ড জ্ঞানের রুপান্তরন না ঘটার কারণে, সাধারন অক্ষর জ্ঞানের সাথে গনশিক্ষাকে গুলিয়ে ফেলার বুর্জোয়া ধারাকে সমার্থক ধরা এবং তার সাথে অবস্য শ্রমিক আন্দলোনকে শরীর সর্বস্বতায় আচ্ছন্ন রাখায় শ্রমিক আন্দোলনে স্বার্থানেসনের ( vested interest) নেতৃ্ত্বদায়ী ভুমিকা ইত্যাদি বার বার আলোচনায় আসবে।
এই সুত্রে এগিয়ে যেতে গিয়ে, আরো কয়েকটি গুরুতর সমস্যা খুজে পেলাম, ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বদায়ী অবস্থানে উত্তরনের প্রশ্নে। সেটা সেই রুপান্তরের পর্বে
----- কর্মসূচী এবং লেনিনবাদের আঁধারে, রুপান্তরন কালীন সময়ে,ইতিহাসের ছিন্ন হয়ে যাওয়া উপাদান গুলিকে খুজে পাওয়া এবংস সেগুলি নিয়ে মালা গেথে একটা অভিন্ন রুপ দেওয়া।
----- গত দু' তিন মাস ধরে যে লেখাগুলি উপস্থাপিত করছি, সেগুলিকে গভীরে গিয়ে দেখলে, দেখা যাবে, এই লেখাগুলিতে ভারতীয় এবং বিশ্ব ইতিহাসের কিছু ধারা, বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের হাত ধরে, বিশ্ব ইতিহাসের এক মহামানবিক উত্তরন এবং তার সাথে ভারতীয় ইতিহাসের নানা খাজগুলি খুজতে গিয়ে, এখানকার অতি-অতীত, আধুনিকতার অন্তত চারটি ধাপে, অতি-অতীত থেকে সাম্যবাদী ভাবগত অবস্থানকে
---- বিশ্ব ইতিহাস প্রবাহের সাথে, বিশেষতঃ তার সৃজনী বিকাশের বিভিন্ন ধাপগুলির আয়নায় ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।
ভারতে হটাৎ করেই ইতিহাস যে স্থব্ধ হয়ে গেলো,
আমরা যে এখন ফ্যাসিবাদের অপেক্ষায় দিনগুনছি, সাম্যবাদী বা শ্রমিক শ্রেনীর ভাবাদর্শ এবং রাজনৈ্তিক প্রথিরোধ যে সংকীর্ন হয়ে যাচ্ছে
----- তার সাথে, উদারবাদ অপ্রাসংগীক হয়ে যেতে থাকায়, আজকের দিনে সেই উদারবাদী আত্মপ্রত্যয়হীনতা এবং এমন কি তার ভেতরকার প্রবঞ্চনা, কেমনভাবে শ্রমিক আন্দোলনেও অনুপ্রবেশ করছে
----- সে ইতিহাসের কিছু সংকেত, আগামী কয়েকটি লেখায় প্রকাশের চেষ্টা করবো। (চলবে)

Post A Comment:
0 comments so far,add yours