সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুরঃ শেষ করতে হবে ,গুটিয়ে নিতে হবে ভাবনার জাল। আবার ভোর ৫টার অ্যলার্ম। উঠরে উঠ। ছোট ছোট। ছটা রুটি। শক্ত মাছে গরমজল।দু মিনিটের কফি।জানলার গরাদে রোদের খেলা,প্রেসারের সিটি। ছোট ছোট।ঐ যে বাস।হিসেবের খাতা।তুই কেরানী। আর কোন স্বপ্ন নেই তোমার মামনি। তিনদিনের শেষ দিন। আর কয়েক ঘন্টা। মেনু কি?মেনু কি?স্পেশাল তো? গলদা আছে।পাবদা আছে। বাহ।বাহ। আসর ও আছে। লঞ্চের গতি পাড় ঘেঁষে। বাঘ নেই।বাদর আছে। রসিক দাদা অনুযোগের সুরে বলে উঠলেন কাল খুব ভুল হয়ে গেছে।তোমার বৌদিকে গান করতে ডাকিনি।ও খুব ভালো গান করে।একটু যেন সঙ্কুচিত হয়ে গেলাম।এ মা আমাকে ও কেউ ডাকেনি। না ডাকলে যেতে নেই, অভিমান, অভিযোগ করতে হয় এই বোধ গুলোর অভাবের অন‍্য নাম হ‍্যাঙলামো। আসলে সারাবছরের একঘেয়ে জীবনের বাইরের তিনটে দিনে খানিকটা অক্সিজেন ভরে নিতে গিয়ে বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। তার গান শুনতে ভালো ই লাগলো।বেশী ভালো লাগলো দাদার উৎসাহ।এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের পজিটিভ কেয়ার অনেক সাধারণ কে অসাধারন করে তুলেছে।আসলে নিজের বাগানের গাছের যত্ন যে মালি যত সুন্দর করেন সে গাছ তত ফুলে ভরে ওঠে।অন‍্যদিকে অনেক অসাধারন গাছ ও অবহেলায় ঝোপে পরিনত হয়। হঠাৎ ই সার্বজনীন দেবর আমাকে খুঁচিয়ে বললো মলি বৌদিকে বল।গান কি বুঝবি।অনেক বলার পর ইমন রাগের বন্দিস শুরু করলেন।মুহূর্তের মধ্যে সূচ পরা নিরবতা।কয়েকবছর ধ্রুপদ শিখেছিলাম।তাই আমি যে কতটা নিকৃষ্ট সেটা সহজেই বুঝি। তুমি প্রাকটিস করোনা। না। কেন? তোমার দাদা থাকে না। তো? উনি বিরহিনী।দেবরটি বলে উঠলো। কতবার বলেছি।আমার ঘোরাঘুরির চাকরি।ওকে বাধা দিইনি। তবুও, বৌদি আমিতো।না বলবোনা।অনেক কথা বলতে নেই। মীরাতো কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে গানই গেয়েছিলেন।পাতলা ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো।চোখ চিকচিক।নীরব অভিমান ।বুঝলাম। কে দেবে বৌদি ঐ অভিমানের দাম? ঝড়খালি।ঝড়খালি।আমরা সবাই নামবো। এই ইরফান এখানে আগে এসেছিস? হ।হ। বাঘ আছে মা।মা বলেই বেশ লজ্জা পেলো।মাথায় হাত রাখতেই কাছে সরে এলো।দুই হাতে দুই ছেলে নিয়ে এগিয়ে চললাম। এটা আসলে পশুদের হাসপাতালের মতো।এক বাঘিনী এসেছেন।ডেলিভারি কেস।বিশাল চেহারা।ধীরগতিতে গোটা এলাকা চক্কর কাটছেন।ডাক্তার কি ওনাকে বলেছেন নর্মাল হতে গেলে বডি মুভমেন্ট দরকার।কে জানে? কুমীর অনেক গুলো দেখলাম।রিলাক্স হয়ে রোদ পোহাচ্ছে।ভারী হিংসা হলো।কি আনন্দ। অফিস যেতে হয়না।রিপোর্ট বানাতে হয়না। হরিণ ও ছিল।আছে,প্রজাপতির বাগান ও।সকলে নিয়ম না মেনে বাগানে ঢুকে প্রজাপতির সাথে সেলফি তুলতে ব‍্যস্ত হয়ে পরলো। আমি সিমেন্টের বেঞ্চে এসে বসলাম।সাদেক পাশে বসলো।দিদি তুমি অন্যদের থেকে আলাদা। এই রে। আমার পাগলামি ওর নজর এড়ায়নি। কেন?ভাই। আমি এখানকার বাচ্চাদের জন্য কিছু কাজ করি।ঐ দাদা বললো তুমি ও নাকি কি সব করো।বোবাদের কথা বলানোর স্কুল, ঐ সব বাচ্চাদের মানে আসলে পাগলের ভালো শব্দ জানা নেই তাই ও দ্বিধাবোধ করছে। তোমাকে কে বললো? ঐ দাদা। ওহ। আচ্ছা ভাই ।চেষ্টা করবো। লঞ্চে ফিরে এলাম।
দুপুরের খাবার আধ ঘন্টা পরই আমরা চলে এলাম বাসন্তী। ঘড়িতে তখন চারটে। সেখান থেকে বাসে ধর্মতলা। আর কিছু ক্ষণ।চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম।বুকে ভরে নিলাম বিশুদ্ধ বাতাস।সুন্দরবন যেন আমাকে নিজের সাথে নিজের পরিচয় করালো।আজ বাস্তবিক মনের ঘরে বসত করে কয়জনা?এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই আজ "বহুজনা"।না মানতে পারায় দায় থেকে নিজের মুক্তি হয়েছে সাগর সঙ্গমে। সামনে নতুন বছরের জৌলুশ।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সূন্দরবন আমার কাছে জীবন খাতার একটি স্মৃতি ভরা পৃষ্ঠা। এমনই স্মৃতি সঞ্চয় করে এগিয়ে যাবো সেই
দিকে,যেখানে ভব নদীর পারে অপেক্ষায় সেই কালরুপী মাঝি যার হাতে তুলে দেবো আমার শেষ পারানীর কড়ি--------। (সমাপ্ত)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours