Old temple
সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায়, লেখিকা, কলকাতা: যে কালী , সেই দূর্গা আবার সেই মহামায়া । ধরাধামে নানা স্থানে শক্তির দেবী নানা রূপে আবির্ভূতা হয়েছেন বারংবার । তাই তো যে স্থান কালীক্ষেত্র হিসেবেই বিশ্বের কাছে পরিচিত , সেই পূণ‍্যভুমিতেই মহামায়া বিন্ধ‍্যবাসিনী রূপে নেমে আসেন প্রতিবছর । কিন্তু যে দেবী বিন্ধ‍্যাচলে আরাধ‍্যা , তিনি দক্ষিনেশ্বরের আদ‍্যাপীঠ পেরিয়ে কোন এক অখ‍্যাত পাড়ার ঘরের মেয়ে কিভাবে হয়ে উঠলেন ? এ কাহিনী বড় মনকাড়া ।
দক্ষিনেশ্বরের আড়িয়াদহ গ্রামের বিখ‍্যাত সিংহী বাড়ির হরিশচন্দ্র সিংহ ছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষ । সারা বছর তিনি তীর্থে তীর্থে পরিভ্রমণ করে বেড়াতেন । এভাবেই একদিন তিনি বিন্ধ‍্যাচলে উপস্থিত হন । তখন বিন্ধ‍্যাচলে মা বিন্ধ‍্যবাসিনীর পুজো হচ্ছিলো সাড়ম্বরে । এ দৃশ‍্য দেখে হরিশচন্দ্রের বড় ভাল লাগে । তিনি এই পূজার প্রচলন নিজের এলাকাতেও করতে চান । তাই তিনি মা বিন্ধ‍্যবাসিনীর ছবি এঁকে ফিরে আসেন তীর্থ সেরে । ঘরে ফিরে বয়োজ‍্যেষ্ঠ এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার পর প্রথমবার আড়িয়াদহ গ্রামে বিন্ধ‍্যবাসিনী পূজার প্রচলন করেন । এই ঘটনা আনুমানিক দেড়শো বছর আগেকার । এরপর ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই পূজা বন্ধ ছিল । ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে সন্তোষ কুমার রায় , পঞ্চানন মুখোপাধ‍্যায় , শৈলভূষণ মিত্র , যতীন দাস , ললিতমোহন বোস প্রমুখ সেইসময়ের যুবক বৃন্দের উদ‍্যোগে বিন্ধ‍্যবাসিনী পূজার পুনঃপ্রচলন হয় এবং এখনো সাড়ম্বরে এই পূজা হয়ে চলেছে । বিন্ধ‍্যবাসিনী প্রধানত মা মহামায়ারই রূপ বিশেষ । শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময়ে নন্দ রাজা ও যশোদার কোল আলো করে যে কন‍্যা সন্তান জন্ম নিয়েছিলো এবং বসুদেব যাকে ঝড় জলের রাতে শ্রীকৃষ্ণের সাথে অদল বদল করে কারাগারে নিয়ে এসেছিলেন , সেই দেবীই মহামায়া , কংসকে দৈববাণী করেছিলেন , "তোমারে বধিবে যে / গোকূলে বাড়িছে সে ।" কথিত আছে বিন্ধ‍্যাচলে দেবরাজ ইন্দ্র প্রথম মহামায়ার পূজা শুরু করেন বলে এই দেবীর নাম হয় বিন্ধ‍্যবাসিনী । তাই তো বিন্ধ‍্যবাসিনীর সাথে আমরা শিব , কংস , কৃষ্ণ এবং গরুড় এই চার বিগ্রহকেও দেখতে পাই ।
এলাকাবাসীর কাছে এই পুজো বড় ভালোবাসার । তার প্রধান কারণ পুজোর সঙ্গে পাঁচদিন ধরে চলা বিন্ধ‍্যবাসিনী মেলা । এইভাবেই প্রতিবছর দূর্গাপুজোর আগেই জামাইষষ্ঠীর সময়ে ঘরের মেয়ে বিন্ধ‍্যবাসিনী পরিবার নিয়ে এসে পাঁচদিন এলাকাবাসীকে যেন অকাল বোধনের আনন্দ দান করেন ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours