মুজতবা আল মামুন , সাংবাদিক, কলকাতা: কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কের নিচে রয়েছে বিশাল জলাধার। ইংরেজ আমলের। ইটের তৈরি। কালের নিয়মে তা জীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি তার একাংশ ভেঙে যাওয়ায়, সি আর এভিনিউ পর্যন্ত জলে ভেসে গিয়েছিল। পুর কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মত নেয়। বিশেষজ্ঞ টিম বলেছে, দ্রুত সংস্কার দরকার। সংস্কারের সময় পার্কের ওপর কোনও চাপ দেওয়া যাবে না। ওই পার্কে কলকাতার এক নাম করা পুজো হয়। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। সামনেই সেই পুজো। তবে তার আগে সংস্কারের কাজ শেষ হবে না। তাই পুর কর্তৃপক্ষ পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসে। সমস্যা বুঝিয়ে বলে।
তার সমাধান কী, তাও জানানো হয় পুজো কমিটিকে। কমিটি সব শোনে। বাস্তবতাটাও উপলব্ধি করে। সভাপতি প্রবীণ হেমচাঁদ জৈন বৈঠকের পর নিজেই জানান, জলাধারের ছাদ ভেঙে পড়তে পারে। তাতে জীবনহানির সম্ভবনা থাকছে। কিছু ঘটে গেলে, তার দায় আমাদের ওপরও এসে পড়বে। তাই উল্টোদিকের মুনলাইট সিনেমা হলের কাছে, ৩৯ তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে এবার মহম্মদ আলি পার্কের পুজোটা হবে। ওখানেই আগে পুজো হতো। বৃহতর স্বার্থে জলাধার সংস্কারও জরুরী। তাতে পুজো কমিটির সহযোগিতা রইলো। সামনে বছর আবার পার্কেই পুজো ফিরবে। কারণ, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে, তার দায় পুজো কমিটির ওপরও বর্তাবে। এ পর্যন্ত কোনও গোল ছিল না। গোল বাধলো খবরটা প্রকাশ হতেই। একদল এটাকে পুজো বন্ধের ষড়যন্ত্র বলে ঘোঁট পাকাতে শুরু করেছেন । শুরু হয়েছে নোংরা রাজনীতি। সোস্যাল মিডিয়াতেও একটা শ্রেণী অপপ্রচারে নেমে পড়েছেন । জলাধারের জীর্ণ ছাদের ওপর হাজার হাজার মানুষ উঠলে, তা থেকে যে ভয়াবহ বিপদ আসবে, প্রাণহানিও ঘটে যাবে, এই সত্য এড়িয়ে গিয়ে, এটাকে হিন্দুদের পুজো বন্ধের ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করা হচ্ছে। এও বলা হচ্ছে, এ রাজ্যটা পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে। ওই পার্কে নাকি মসজিদ গড়া হবে, তাই পুজো বন্ধ করা হলো.... ইত্যাদি। এই সব মন্তব্যে প্রচুর লাইকও পড়ছে। এতে স্পষ্ট, একটা শ্রেণী ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা নিয়ে হিন্দু আবেগে সুড়সুড়ি দিতে চাইছে। ধর্মের ওপর আঘাত হিসেবে দেখাতে চাইছে। অথচ এটা কোনও পুজো বন্ধের ব্যাপারই নয়। প্রশ্নটা হাজার হাজার প্রতিমা দর্শনকারীর নিরাপত্তার । এবং এক বছরের জন্যে স্থানান্তর মাত্র। পুর কর্তৃপক্ষও কোনও গুজবে কান না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।
গুজব না ছড়াতেও আবেদন জানিয়েছে। সোস্যাল মিডিয়াতেও অপপ্রচারের বিরোধিতা করে, জলাধার সংস্কারের পক্ষে এবং দ্রুত কাজ শেষ করার আবেদন জানানো হচ্ছে। এবার মহম্মদ আলি পার্কের পুজো হচ্ছে উল্টোদিকে ৩৯ তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে। মন্ডপ তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। পুরসভা ও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন, নতুন জায়গায় পুজো আয়োজনের সমস্যা অনেক।

কাজ করতে গিয়ে কমিটি কোনও সমস্যায় পড়লে, রাজ্য সরকার ও পুরসভার উচিত দ্রুত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। যাতে সবার মিলিত প্রয়াসে বহু পুরানো ঐতিহ্যবাহী এই পুজো, যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উদভাসিত হয়ে ওঠে। বিগত বছরগুলোর মত জনসমাগমে নন্দিত হয়ে ওঠে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours