ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ মনসা মঙ্গলের অন্যতম কবি কেতকা দাস ও ক্ষেমানন্দের কাব্য থেকে জানা যায় - গন্ধবনিকরা বৌদ্ধ ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তন করলেও সংখ্যাগরিষ্টই ছিলেন শৈব! পরবর্তীকালে চৈতন্যদেবের প্রভাবে অনেকেই বৈষ্নব ধর্ম গ্রহন করেন!
এই বনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা দেব দেবীর পূজা- অর্চনা চালু থাকলেও একটি বিশেষ ব্রত আজও করে থাকেন! এই ব্রতটি হ'লো মকর সংক্রান্তিতে 'সুয়ো দুয়োর ব্রত '! বয়ষ্ক সধপা মহিলারা ( মায়েরা) সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় কলার ভেলায় নানাবিধ পূজা উপকরনসহ ঘৃতের প্রদীপ জ্বালিয়ে সেটি ওই ভেলায় রেখে নদীতে সময়ে কাঁসর ঘন্টা বাদ্য বাজিয়ে চিৎকার করে সুর করে ছড়া কেটে বলতে থাকেন-
সুয়ো দুয়ো যায় ভেসে
সাত ভাই আসে হেসে!
এই ব্রত পালন করার পশ্চাতে একটি কাহিনী আছে! কথিত আছে,একদা সাত ভাই বহির্বানিজ্যে গিয়ে দুর দেশে একটি বাড়িতে রাত্রিযাপনের জন্য আতিথ্য গ্রহন করে!যে বাড়ীতে আশ্রয় নেয় তারা ছিল দুর্ধর্ষ ডাকাত পরিবার, তারা সেই সময় ডাকাতি করতে গিয়েছিল!
ডাকতদের মা তাই সাত ভাইকে ফন্দিকরে আটকে রাখতে ছলনার আশ্রয় নেয়, যাতে তার ছেলেরা ফিরে এসে এদের সর্বস্ব লুঠ করতে পারে! কিন্তু ওই বাড়ীর বধূ ছিল এই সাত ভাইয়ের একমাত্র বোন! সে তার ভাইদের চিনতে পেরে নিজের পরিচয় গোপন করে, তাদের দ্রুত পালাতে পরামর্শ দেয় এবং সাহায্য করে!ডাকতরা যখন ফিরে আসে তখন তাদের বনিজ্যতরী সমুদ্রের মাঝদরিয়ায়, সেই সময় তাদের বাড়ীতে তাদের মায়েরা সুয়ো- দুয়োর ব্রত করছিলেন!বানিজ্যে গিয়ে সন্তানরা যাতে নিরাপদে ফিরে আসে সেজন্য আজও বনিক সমাজে সুয়ো- দুয়োর ব্রত প্রচলিত! এই ব্রতযাপনের মধ্যে দিয়ে এটা পরিস্কার বোঝাযায় একটা সময় গোপভুমের বনিকরা বহির্বানিজ্য করত!
মনসা মঙ্গল কাব্য থেকে জানা যায়,চাঁদ সওদাগর মনসা দেবীর পুজা করতে না চাওয়ায়, মা মনসা তাঁর অনেক ক্ষতি করেছিলেন!তাঁর সপ্তডিঙা সমুদ্রে ডুবে গিয়েছিল, তাঁর পুত্ররা একে একে মনসা দেবীর কোপে মারা যায়, এবং পুত্রবধু বেহুলা বাসর ঘরেই বিধবা হ'ন, পুত্র লখীন্দর কালনাগিনীর ছোবলে মারা যান!তাই আজও মনসা দেবীকে তুষ্ট করতে এই সমাজে মনসা পুজা করেন২ অনেকে! বনিক পরিবারে পুত্র কন্যাদের বিয়ের আগে বাড়ীতে মনসা পূজা করা হয় এবং বিয়ের কয়েক দিন পুর্ব থেকে মনসা মঙ্গলের গান গাওয়া হয়! (চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours