Fitute
সঞ্জয় সরকার, সাংবাদিক, বাঁকুড়া: জেলা প্রশাসনের কাছে পুত্রবধূ চেয়ে আবেদন করে তাঁদের পছন্দের মেয়েকে ঘরে তুলে নিলেন বাঁকুড়া শহরের এক ট্যাক্সি চালক পরিবার। বিষ্ণুপুরের একটি হোমে কাটানো অনাথ মেয়টি স্বপ্নেও ভাবে নি কখনও স্বামীর ঘর পাবে। কিন্তু এখন না ভাবা সেই স্বপ্ন বাস্তব হওয়ায় খুশি শারীরিক প্রতিবন্ধী সেই আদিবাসী মেয়েও। ১২ জুলাই বাঁকুড়া শহরের অদূরে দ্বরকেশ্বর নদের পাড়ে এক্তেশ্বর মন্দিরে ওই চার হাত এক করে দিয়ে খুশি বাঁকুড়া জেলা শাসক উমাশঙ্কর এস। গত মার্চে অজিত দাস তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধী বড় ছেলে পেশায় লটারি টিকিট বিক্রেতা দেবাশিসের বিয়ের জন্য একটি অনাথ মেয়ে চেয়ে বাঁকুড়া জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেন। সেই মত জেলাশাসক উমাশংকরের চেষ্টায় বিষ্ণুপুরের এদকটি হোমে থাকা ২০ বছরের মেয়ে ছবি হেমব্রমের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রবুদ্ধভারতী নামে ওই হোমের সুপার সুচিত্রা ঘোষ বলেন ‘ছবির জন্য একটা ভাল পাত্রর সন্ধানে ছিলাম। তখন জেলা শাসকের মাধ্যমে দেবাশিসের সন্ধান পাই। আমি নিজে পাত্রর বাড়িতে গিয়ে দেখে এসে নিশ্চিন্ত হইয়েছি। পরিবারটি খুবই ভাল। ছবি খুব ভাল শান্ত স্বভাবের মেয়ে। আশাকরি ওই বাড়িতে গিয়ে ও খুবই ভাল থাকবে’। এক্তেশ্বর মন্দিরে বিয়ের আসরে পাত্র পক্ষর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলা শাসক সহ সমাজ কল্যাণ দফতর এবং শিশু কল্যাণ দফতরের আধিকারিকরা। ওই দিন সকাল থেকে হিন্দু ধর্মে বিয়ের রীতি রেওয়াজ মেনে গায়ে হলুদ থেকে কন্যা সম্প্রদান, সিঁদুর দান সহ সব উপাচারই হয়েছে। জেলে শাসক নবদম্পতিকে উপহার দেওয়া সহ ধানদূর্বা দিয়ে আশীর্বাদও করেছেন। হোম সুপার সুচিত্রা ঘোষ বলছিলেন ‘হোমের সব মেয়েরাই আমার নিজের মেয়ের মতো। এর আগেও দুটি মেয়েকে এখান থেকেই বিয়ে দিয়েছি। এখন মেয়ে দুটি সুখে সংসার করছে। আজ ছবিকে আমি নিজে সম্প্রদান করলাম।
আমি তো মা তাই ওঁদের সামনে কাঁদতে পারি না। তবু সিঁদুর দানের সময় আর থাকতে পারিনি। আড়ালে গিয়ে চোখের জল মুছেছি। এখন হোমে ফিরে এসে খুব ফাঁকা লাগছে। তবু মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি যে অনাথ মেয়েটার কপালে শেষটায় ভালই লেখা ছিল। ভাল একটা শ্বশুরবাড়ি পেয়েছে’। দৃষ্টান্তকর এই বিয়ের জন্য খুশি বাঁকুড়া জেলা শাসক উমাশংকর এস। তিনি বলেন ‘ছেলের বাবার আবেদনে সাড়া দিয়ে আমরা ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। আজ অসহায় নতুন করে জন্ম হোল। আমরা চেষ্টা করব যাতে মেয়েটির জন্য কোনও কাজের ব্যবস্থা করা যায়’।
হোমের জীবন কাটিয়ে এখন নতুন জীবনে পা রেখে খুশি ছবি। আর শান্ত স্বভাবের মেয়েকে সহধর্মিনী পেয়ে খুশি দেবাশিসও। দুজনের চার হাতের সেতু বন্ধনে খুশি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই। একেই বোধ হয় বলে মধুরেণসমাপয়েৎ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours