Old temple
সঞ্চারী চ‍্যাটার্জী, ফিচার লেখিকা , কলকাতা : শিবের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে প্রলয় ও স্থিতিতে ভারসাম‍্য বজায় রাখছেন যে মা কালী তিনিই আবার দূর্গাপুজোয় উমা রূপে আসেন আমাদের ঘরে । সুদীর্ঘকাল জুড়ে শক্তির দেবী মা রূপে রক্ষা করে চলেছেন জগতকে । এমনভাবেই দক্ষিনেশ্বরের বুড়ো মা প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি সময় জুড়ে বিরাজ করছেন বিন্ধ‍্যবাসিনীতলার অদূরেই । দক্ষিনেশ্বরের প্রাচীন দূর্গাপুজাগুলির মধ‍্যে বুড়ো মা অন‍্যতম । এই পুজো প্রকৃতপক্ষে অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু মুখোপাধ‍্যায় পরিবারের বংশের পুজো ছিল । কিন্তু পরবর্তী কালে বেশ কিছু বছর আর্থিক অসঙ্গতির কারণে এই পুজো প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয় । সেইসময়ে প্রতিবেশী তাঁতিবাড়ি অর্থাৎ দে পরিবার সানন্দে ভার নেয় মায়ের পুজোর এবং পুজো চলতে থাকে বরাবরের মতোই । ভবিষ‍্যতে দে পরিবারেরই স্বর্গীয় প্রিয়নাথ দে বর্তমানের ঠাকুর দালানটি নির্মাণ করান । পরবর্তীকালে এই দালানটি যখন আবারও ভগ্নপ্রায় দশার সম্মুখীন হয় তখন সেটি পুনঃনির্মাণ করেন মিত্র পরিবারের প্রবীর মিত্র মহাশয়ের দ্বারা । এরপর দে পরিবারের থেকে এই পুজোর ভার আবারও গ্রহণ করেন মুখোপাধ‍্যায় পরিবারের মনিলাল মুখোপাধ‍্যায় ।
বর্তমানে এই পুজোর ভার মুখোপাধ‍্যায় পরিবারের হাতেই ন‍্যস্ত আছে । এই পুজো এবং এর রীতিনীতি ঘিরে নানা কাহিনী জানা যায় । শোনা যায় বাংলায় তখন বর্গীর খুব উপদ্রব । সেই কারণে সন্ধে হলেই গাঁয়ের যত আলো সমস্ত নিভিয়ে দেবার নির্দেশ দিতেন গ্রামের মোড়লরা । তার কারণ আলো দেখলেই লুঠপাঠ চালাতো বর্গীর দল । সেই কারণে বুড়ো মার পুজো সেরে নিতে হতো বিকেলের আলো থাকতে থাকতেই । ঠিক এই কারণেই এই পুজোয় অষ্টমী নবমীর সন্ধিক্ষণে যে সন্ধিপুজো তা হয় না । এছাড়াও এই পুজোয় কলাবউকে ঠাকুরদালানেই স্নান করানো হয় গঙ্গায় নিয়ে যাবার পরিবর্তে । এই পুজো প্রথম শুরু করেন নগে নামক কোন এক অচেনা বৈরাগী ভক্ত । সেকালে তাই বুড়ো মা 'নগের মা' নামেই বেশি প্রচলিত ছিলেন । কালক্রমে এই নগের মা পরিবর্তিত হন 'বুড়ো মা' তে । একবার দক্ষিণেশ্বরে প্রবল বন‍্যা হয় । তখন সমস্ত পথঘাট ডুবে গেলেও এই দালানটি অক্ষত ছিল । অতীতে এই পুজোয় পশুবলির প্রচলন ছিল । কিন্তু ষাট সত্তর বছর আগে এখানে বলি বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন থেকে কুমড়ো আখ ইত‍্যাদি সবজি বলি শুরু হয়
দূর্গাপুজোর সময়ে একমাত্র বুড়ো মার মুর্তি পুজো হয় এবং বরাবর একচালার ডাকের সাজের প্রতিমাই পূজিত হন । এইভাবেই মা দূর্গা বুড়ো মা রূপে সেই সুদুর অতীত থেকে প্রতিবছর একই ভাবে মর্ত‍্যে আসেন এবং মুখার্জী পরিবার সহ এলাকাবাসীর সুখদুঃখের সাথী হন তার আপন দালানে ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours