ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ জেলাম মানকরের সন্নিকটে ডান পাড়া, ভাল্কী,প্রভৃতি গ্রাম তখন গভীর অরন্যবেষ্টিত ছিল, এড়াল গ্রামের জনৈক নিঃসন্তান ব্রক্ষ্মন ওই দুর্ভেদ্য অরন্যের মধ্যদিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ সদ্যজাত শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে থমকে যান, দেখেন , দুরে একটি সদ্যজাত শিশুকে ঘিরে আছে কয়েকটি ভালুক!নিঃসন্তান ব্রাক্ষ্মনের হৃদয় পিতৃত্বের আকুল আগ্রহ জেগে উঠল, তিনি লুকিয়ে ভালুকগুলি গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগলেন! তাঁর নন ব্যকুল হয়ে উঠলো, যে কোন মূল্যে এই শিশুকে তিনি রক্ষা করবেন,
প্রয়োজনে প্রানের বিনিময়েও, সারাদিন পর প্রায় সন্ধ্যা যখন নামছে তখন ভালুকগুলি সরে যেতেই তিনি মানব শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাড়ী ফিরে তাঁর পত্নীর কোলে তুলে দিলেন পুর্ন করলেন তার মাতৃত্বের স্বাদ, কিন্তু একি! এতো কুৎসিত!!! শিশুটির সারা শরীর ভালুকের মতো লোমে ঢাকা! কথিত আছে গুজরাট থেকে আস একটি যাযাবর গোষ্ঠীর সাথে থাকা এক পুর্নগর্ভা স্ত্রীলোক ছিল, তিনি ওই ভালুক সদৃশ কুরুপ সন্তানের তিনি দেন, এইরূপ কুরুপ দর্শন সন্তান অমঙ্গলের বার্তাবাহক মনে হওয়ায় তারা এই সদ্যজাতকে ভালুকের গুহার সামনে রেখে স্হান পরিত্যাগ করেন! অন্য আর একটি কিংবদন্তীটি বীরভুম বিবরন গ্রন্হে মহিমা রঞ্জন চক্রবর্তী উল্লেখ করেছেন, তাঁর অভিমত," মহাভারতের বিদুরের পুত্র ধর্মবান পর্বতে ভালুকের পদতলে রক্ষিত হয়েছিলেন, তাই তাঁর বংশ ভল্লুপদ নামে পরিচিত " এই বংশের কোন ব্যক্তি সৌরাষ্ট্র থেকে নীলাচলে উদ্দেশ্যে তীর্থ ভ্রমনের পথে সপার্ষদ এখানে ঘন জঙ্গলেই ছাউনি ফেলেন, তাঁদের সাথে একজন পুর্নগর্ভা নারী ছিলেন , তিনি মৃতপ্রায় একটি সন্তান প্রসব করেন, সেই সদ্যজাত শিশুকে মৃত ভেবে এই অরন্যেই ত্যাগ করে তাঁরা চলে যান! পরে এক সন্ন্যাসী তাকে উদ্ধার করে লালন পালন করেন! সর্বশেষ কিংবদন্তীটি একটি কাব্য নির্ভর, স্হানীয় কবি নাট্যকার দেবেন্দ্র নাথ চট্টোপাধ্যায় রাজা মহেন্দ্র সম্পর্কে তাঁর " শিবক্ষ্যা কিংকর " কাব্যে উল্লেখ করেছেন, "পিতামহ তার ক্ষত্রিয় কুমার ভল্লুপদ নাম জানে সর্বজন!
ভালুকে তাহারে করিল পালন জাতীয় প্রকৃতি লুকাবার নয় শৈশবে সে শিশু নির্ভয় হৃদয় মৃগয়া করিত শ্বাপদ বধিত বনের বরাহ করিয়া বিজয়! এখানে কবি কিংবদন্তীর আশ্রয় নিয়েছেন! শুধু নতুন সংযেজন এটুকুই তাঁকে ক্ষত্রিয় বলে অভিমত প্রকাশ! কিংবদন্তীকে কেন্দ্র করেই গোপরাজা ভল্লুপদের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে! ভল্লুপদ বংশ প্রকৃতপক্ষে বাংলার আদি বাসিন্দা নন, তাঁরা এরাজ্যে বহিরাগত তাঁরা কোন প্রদেশ থেকে এসেছিলেন সে বিষয়ে দ্বিমত আছে ( চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours