সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায়,
লেখিকা,
কলকাতাঃ
"মহামেঘ প্রভাংঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভূজাং"
মা কালীর শত সহস্র রূপের কথা আমরা কালিকাপুরাণ থেকে জানতে পারি । দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে মায়ের যে রূপটি পুজিত হয় সেটি ভবতারিণী । দক্ষিনেশ্বরের পাশেই আড়িয়াদহ গ্রামে শ্মশান সংলগ্ন যে মা বিরাজ করছেন , তিনি মুক্তকেশী । আর যেখানে কালী আছেন সেখানে কি শিব না থেকে পারেন ? তাই আড়িয়াদহ শ্মশানের পাশেই আছেন বাবা বুড়ো শিব । মুক্তকেশীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আহিরীটোলা নিবাসী রামনারায়ণ মিশ্র ১৮১০ থেকে ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে কোন এক সময়ে । বুড়ো শিব এই আড়িয়াদহ গ্রামে বিরাজ করছেন তার বহু আগে থেকে । কথিত আছে কোন এক বানরাজার গৃহদেবতা ছিলেন শিবশম্ভু । ইতিহাস বলে এই বানরাজা রাষ্ট্রকূট বংশের সমসাময়িক । পূর্বকালে এই শিবলিঙ্গটি শ্মশানের পাশে নয় বরং দক্ষিনেশ্বরের দেউলপোতা সংলগ্ন অঞ্চলে বানরাজার গৃহেই পুজিত হতেন । বানরাজার গৃহ ছেড়ে তবে শিব কেমন করে শ্মশানচারী হলেন ? এ কাহিনী আরো রোমাঞ্চকর । বানরাজার গৃহে যে ব্রাহ্মণ নিত্যপুজায় নিয়োজিত ছিলেন , হঠাতই একদিন তিনি স্বপ্ন দেখলেন যে শিব তার সামনে এসে বলছেন "আমি এখান থেকে গঙ্গা দেখতে পাই না , তাই এ জায়গা ছেড়ে আমি গঙ্গার ধারে শ্মশানের পাশে গিয়ে উঠবো , আমার সেবার ব্যবস্থা করবে তুমি ।" পরের দিন
সেই ব্রাহ্মণ গঙ্গার ধারে এসে সত্যিই একটি শিবলিঙ্গ দেখতে পান । সেই থেকে বুড়োশিব রাজবাড়ির চারদেওয়াল ছেড়ে পাকাপাকি ভাবেই শ্মশানচারী হলেন । পরবর্তীকালে আড়িয়াদহের দেওয়ান স্বর্গীয় হরনাথ ঘোষাল বুড়ো শিবের একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করে দেন । শোনা যায় লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস নাকি একবার আড়িয়াদহে এসে এই শিবলিঙ্গ পরীক্ষা করতে চান । কিন্তু যতই মাটি খোঁড়া হয় এই শিবলিঙ্গের শেষ কোথাও পাওয়া যায় নি , দেখা যায় , লিঙ্গটি ক্রমেই স্থূল থেকে স্থূলতর হতে হতে চলে গেছে গভীরে । একইভাবে মুক্তকেশীও তার সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করে চলেছেন আড়িয়াদহ গ্রামকে । প্রতিবছর নীল ষষ্ঠীর দিন মুক্তকেশী এবং বাবা বুড়ো শিবের বিবাহ হয় । এছাড়াও অগ্রহায়ণ মাসে অন্নকূট উৎসবও পালিত হয় সাড়ম্বরে । মা মুক্তকেশী ও বাবা বুড়ো শিব এইভাবেই স্বামী স্ত্রী রূপে আড়িয়াদহের সমস্ত ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে তাদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করে চলেছেন অনাদিকাল ধরে ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours