ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ মানকরের পূর্ব প্রান্তে ' সভাবরন ' স্হানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে! ডঃ পঞ্চানন মন্ডল ' রাঢ়ভুমির ঐতিহাসিক ভুগোল ও মহাবীরের চরিকা ' প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, গৌতম বুদ্ধ বর্ধমান জেলার শেতক ও দেশক নগরে এসেছিলেন! এই দুটি গ্রাম হ'লো মানকরের সভাবরন স্হানটির নিকটস্হ ' সুয়াতা ' ও ' দেয়াশা ' গ্রাম! তিনি লিখেছেন, " পশ্চিম মুলুক থেকে 'সভাবর ' ডাঙায় আগত বরনীয় মহান পুরুষটি যে তথাগত বুদ্ধ, সে বিষয়ে সন্দের অবকাশ নেই! মহাবীরের সমকালে অর্থাৎ ছ'শ বছর খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে বুদ্ধদেব সুম্ভ ভুমিতে এসেছিলেন!তখন সুম্ভের সীমানা ছিল,সনগ্র গোপভূম , ময়ুরভঞ্জ, সিংভুম থেকে রাঁচি, পুরুলিয়া থেকে হাজারীবাগের দক্ষিনাংশ পর্য্যন্ত ! গোপভুমের শেতক ( বর্তমান সুয়াতা)জনপদের অদুরের ' সভাবরন ' স্হানটি বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত! এখানে অনেক মানীগুনি ব্যক্তি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন!এই এলাকায় এক সময় বৌদ্ধ ধর্মের বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে! মানকর বহু দেবদেবীর পীঠস্হান! দীপ্তিময় রায় তাঁর ' পশ্চিমবঙ্গের কালী ও কালীক্ষেত্র ' গ্রন্হে তিনি উল্লেখ করেছেন, " মানকর বর্ধমান জেলার এক সংস্কৃতি সম্পন্ন প্রসিদ্ধ জনপদ ! একদা এই অঞ্চলটি বর্ধমান জেলার গৌরব ছিল!" শৈব ও শাক্ত ধর্মের পীঠস্হান মানকর! গ্রামের আনাচে কানাচে শিব মন্দির! এর একটি কারন হতে পারে বর্গীর আক্রমন! তাই সম্ভবতঃ বর্গী হামলা থেকে রক্ষা পেতে মানকরে বহু শিবমন্দির নির্মান ও শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল! কারন মারাঠা বর্গীনেতা ভাষ্কর পন্ডিত ছিলেন শিবের উপাসক! যে স্হানে শিব মন্দির২ থাকতো সেখানে তাঁরা আক্রমন বা লুটতরাজ থেকে বিরত থাকতো! গ্রামের উল্লেখ যোগ্য শিবলিঙ্গগুলি হ'লো , মানিকেশ্বর ( গ্রাম্য দেবতা), বুড়োশিব, মল্লিকেশ্বর, দেউলেশ্বর, বানেশ্বর, সদাশিব প্রভৃতি! এছাড়া চাঁদরায় , বাঁকুড়া রায় প্রভৃতি
ধর্মঠাকুরও শিবঞ্জানে পুজা হয়! গ্রামের প্রাচীন মন্দিরগুলির গাত্রে অপূর্ব টেরাকোটার মনোমুগ্ধকর কারুকাজ আজও মনে বিষ্ময় সৃষ্টি করে!এই এলাকায় অতীতে যে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল তাঁর নিদর্শন শিব মন্দির গুলির টেরাকোটায় বুদ্ধদেবের প্রচুর মূর্তি খোদিত আছে! মানকরের ভট্টাচার্য্য পাড়া এককালে তন্ত্রসাধনার পীঠস্হান ছিল!এই গ্রামের রামানন্দ গোস্বামী গ্রামের উত্তর প্রান্তে মহাশ্মশানে বড়কালীর মূর্তি স্হাপন করে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন! বড়কালী ছাড়াও গ্রামের উল্লেখযোগ্য কালীদেবী হ'লো পঞ্চকালী, আনন্দময়ী, এলোকেশী, মুক্তকেশী, শ্যামাকালী ! গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে তন্ত্রসাধনার জন্য পঞ্চমুন্ডির আসন আজও রয়েছে!স্বামী তপানন্দ এখানে তন্ত্রসাধনা করেন!পৌষমুনির ডাঙা এবং পাঁড়ে কালীতলায় পঞ্চমুন্ডির আসন আজও অতীতের সাক্ষ্য বহন করছে! মানকরের পঞ্চকালীতলা প্রসিদ্ধা কালীপীঠ! প্রতি বছর কার্তিক মাসের অমাবশ্যায় সাড়ম্বরে দেবীর পুজা হয়! এই পঞ্চকালীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি কিংবদন্তী প্রচলিত! বহুকাল পূর্বে এক তান্ত্রিক এখানে পঞ্চমুন্ডির আসন নির্মান করে সেই আসনে বলবো তন্ত্রসাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন! পরে ঐ তান্ত্রিক তাঁর অনুগতা শিষ্যা ' পঞ্চার মাকে ' বিগ্রহ ও মুক্তিদার সেবাকার্যের দ্বায়িত্ব অর্পন করে চলে যান! তাই লোকমুখে দেবীর নামকরন হয় পঞ্চার কালী বা পঞ্চকালী! পঞ্চারা ছিলেন সিং পদবীধারী রাজপুত!
বর্তমানে এঁদের কোন বংশধর না থাকায়প পঞ্চকালীর পুরোহিত গোস্বামী পরিবার এবং রজক পরিবার সেবাইত! এই গ্রামের আর একটি বৈশিষ্ঠ এককালে ধনী ছিল এমন প্রতিটি পরিবারের একটি করে বিষ্নু মন্দির আছে! (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours