Foture
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা: 'আমিত্ব' কে সাধারনত আমরা 'ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা' বলে চিহ্নিত করে থাকি। আসলে 'আমিত্ব' বা 'অবতারবাদ' বুর্জোয়া ব্যবস্থার অভিমুখ। বুর্জোয়া দলগুলি সাম্প্রতিক ইতিহাসে, শ্রমিক শ্রেনীর সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে, ' 'সংগঠন' নামক শব্দটাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বিকৃতি দিলেও, 'আমিত্ব' বা 'অবতারবাদ' কেই তারা সাংগঠনিক অভিমুখ হিসেবে মেনে চলতেই হবে। অন্যথায়, তাদের প্রতিষ্ঠানগতভাবে সাম্যবাদী চরিত্র নিতে হবে। 'আমিত্ব' আসলে পুঁজির কেন্দ্রিভবনের কালে, সামন্ততন্ত্র থেকে ধার করা একটি দাম্ভিক সত্বা যা ইতিহাসকে 'অখন্ড জ্ঞান সত্বা' থেকে বিচ্ছিন্ন করে, একপ্রান্তে 'অবতারবাদ' এবং অন্যপ্রান্তে, অবতারবাদকে পরমব্রহ্মত্বের সাথে যুক্ত করতে সাহায্য করে। এই সুত্রেই বলতে হয়, হিটলার যদি, তার তত্বকে ইতিহাসের 'পুঁজ-রক্ত' প্রবাহকে অতি-অতীতের গহ্বর থেকে টেনে তুলে, সেই অতীতের সাথে 'পরব্রহ্মের' সাথে যুক্ত করতে না পারতেন, তবে 'হিটলার' কিছুতেই 'হিটলারত্বে' উঠে আসতে পারতেন না। অন্যদিকে তারাই দার্শনিকঃ যারা প্রকৃতি বিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের আত্মিক সম্পর্কের আলোকে তথাকথিত 'অবতারত্বের' মুখোশ উন্মোচিত করতে ----- , ইতিহাসকে কুজ্ঝটিকা মুক্ত করায়, যুক্তিবাদে বিজ্ঞানধর্মীতার প্রয়োগ করে থাকে। সেই অর্থে, মার্ক্স যখন ইতিহাসকে আধুনিকতার সর্বোচ্চ ধাপে উঠিয়ে আনতে ' জ্ঞানকে' এক অখন্ড সত্বায় প্রতিষ্ঠিত করলেন, লেনিন এক প্রান্তে, পুজিবাদকে তার 'কেন্দ্রিক স্তরে উত্তোরনের ইতিহাসগত পরিনামকে চিহ্নিত করলেনন অন্যপ্রান্তে ---- ইতিহাসের সর্বাধুনিক রুপান্তরে প্রয়োগতত্বকে আবিস্কার করলেন এবং অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে, ইতিহাসের এক মহামানবিক রুপান্তরে (সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে কেহ নাই) । ইতিহাসের বিচারে স্তালিন সব থেকে কঠিক কাজটি করেছিলেন, সেই কঠিনত্বের কারনেই কিছু ভূল হয়তো করে থাকবেন। সে রকম ভূল চিন সমেত সব দেশে এবং এমনকি ভারতেও হয়েছে; সেটা হতে বাধ্য ছিলো। যে বিশ্বে তখন 'মেহনত' কিংবা 'মেহনতির' স্থান এবং মূল্য ----- গাছ, পাথর এমন কি জানোয়ারের দাম থেকে নিচে এবং বর্ণাশ্রম এবং নারী নির্য্যাতন আমদানী হয়, মুলতঃ সেই নিম্ন স্তরগুলিকে চিহ্নিত করে দিতে ----- সেখানে একটা বিশ্বজোরা পুঁজ-রক্তের প্লাবনকে আটকে দিয়ে সত্যের সংগীত নির্মান এবং সেই সংগীতের সাথে বিশ্বজনের বিপুল অংশকে একাত্ম করা, ইতিহাসের সব থেকে কঠিন কাজ বলে বিবেচিত ছিলো। ইতিহাসকে এক মহামানবিক উত্তোরন ঘটিয়েই, যোসেফ স্তালিনকে, হিটলারের 'অবতারবাদ'কে দুর্বল করেই 'হিটলারের' সাথে সাথে তার স্বপ্নের সমাধীর আয়োজন করতে হয়েছিলো। ---- সে লড়াই চালাতে হয়েছে, সারা বিশ্বের কোনায় কোনায়। ইতিহাসের পরবর্তী স্থবীরতা দেখা দিলো একটা কারনেই। সেখান থেকেই ক্রুশ্চভ বা পেরোস্ত্রোয়ীকা বাদের আত্মপ্রকাশঃ মানুষের এই মহাবিজয়ে, কিছু মানুষ মনে করলেন, এটাই বুঝি মুক্তি তার সাথে সাথে অনেকে ভাবলেন, এটাই বুঝি সাম্যবাদী ক্ষমতার কেন্দ্রিকতা। 
অথচঃ স্তালিন বলে দিলেনঃ HITLER GONE BUT HITLARISM WOULD STILL FLOURISH LIPS AND BOUND WITH CONCENTRATION OF CAPITAL, AT A FASTER RATE AND AMERICAN MILITARISM, AS BEING THE LEADER OF CAPITAL CONCENTRATION WOULD OCCUPY THE SEAT OF WORST OF HITLER. যাই হোক, পোস্টিং টা শেষ করতে গিয়ে, 'আমির আমিত্ব' যে আসলে প্রচলিত রাষ্ট্রীয় সত্বারই যে প্রতিধ্বনি সে ইংগিত রেখে না গেলে, 'আমি' এবং ইতিহাসের ' অন্তসম্পর্ক সম্পর্কে ভাবনাকে এগিয়ে দেওয়ার আকাংখ্যাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আসলে 'আমি' প্রাক্-ঐতিহাসিক কাল থেকে মহাকাল ধরে আজ পর্য্যন্ত ---- মনুষ্যজাতীর সংঘবদ্ধ কার্য্যকলাপ, প্রথমে প্রকৃ্তি বনাম গোষ্টিবদ্ধ মানুষ, পরে তার সাথে যোগ হোল, গোষ্টিবদ্ধতার মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত (যাকে আমরা ইতিহাসের কাল বলে জেনেছি) ফলাফলের অনুক্রম বা ধারাবাহিক সত্বার সাধারনিকৃ্ত রুপ ব্যক্তিতে যা প্রতিফলিত হয়। ---- সে অর্থ 'আমি' কখনো সমাজ নিরপেক্ষ, ইতিহাস নিরপেক্ষ অস্তিত্ব নয়। সে ইতিহাসের কোন কালে ইতিহাসেরই যুগপদ অংগ এবং প্রতিধ্বনি। তখন প্রশ্ন দাড়ায়ঃ তবে 'আমি' ভাবনায় কিংবা 'আমিত্বে' এতো 'আনন্দ' কেন? 
আসলে কালে কালে 'রাষ্ট্র শক্তি মনুষ্যকে ইতিহাসের শ্রষ্টা হিসেবে দেখাতে চায় না, তাকে 'ক্রিড়নক' হিসেবেই দেখতে চায়। সেকারনে, সে ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন এক 'পরমব্রহ্মের' অংশ হিসেবে দেখিয় তার উপরে একটা স্বর্গীয় সত্বা আরোপ করতে চায়। (চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours