ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ গোপভুমের অনান্য রাজাদের প্রসঙ্গ পরে আলোচিত হবে! পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে দক্ষিন রাঢ়ে তথা গোপ ভুমকে কেন্দ্র করে দুটি মঙ্গল কাব্য রচিত হয়েছে! ইছাই ঘোষ ও লাউসেনের কাহিনী নিয়ে ' ধর্মমঙ্গল কাব্য ' এবং চাঁদ সওদাগর ও মনসার দ্বন্দ্বের কাহিনী নিয়ে ' মনসা মঙ্গল '!
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের ( দুর্গাপুর মহকুমা) গৌরাঙ্গপুর মৌজা ও গড়কিল্লা খেরোবাড়ী মৌজায় ঢেঁকুর গড়কে কেন্দ্র করে 'ধর্মমঙ্গল কাব্য 'রচিত হয়েছে!সম্ভবতঃ রাঢ় বঙ্গের এই অংশে ধর্মঠাকুরের পূজার প্রচলনের জন্য ধর্মঠাকুরের মাহাত্ম্য প্রচারই ছিল ধর্মমঙ্গলের রচয়িতাদের মুখ্য উদ্দেশ্য!
একইভাবে বুদবুদ থানার চম্পাই নগরীতে ( বর্তমানে কসবা) অতীতে ছিল মনসা মঙ্গলের চাঁদ সওদাগরের বাড়ী এবং চাঁদ সওদাগর ও মনসা দেবীর দ্বন্দ্বের কাহিনীই মনসা মঙ্গল কাব্যের মূল উপজীব্য! প্রকৃত পক্ষে মনসা দেবীর পূজার প্রচার ও প্রসার ই মুল উদ্দেশ্য ছিল মনসা মঙ্গল কাব্যকারদের!
গোপভুমে বনিক সম্প্রদায়ে প্রাধান্য ছিল! প্রাচীনকালে এই সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন! পরে এদেশে বৌদ্ধ ধর্মের অবক্ষয়ের সাথে সাথে এঁরা পুনরায় হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তন করেন!
এই সম্প্রদায়ের আদি পুরুষ বিম্বট গন্ধেশ্বরী দেবীকে সন্তুষ্ট করে গন্ধ দ্রব্য পেয়ে ছিলেন অর্থাৎ ব্যবসার দিশা পেয়েছিলেন তাই এই সম্প্রদায়ের আরাধ্যা দেবী গন্ধেশ্বরী! বৈশাখী পূর্নিমায় মহাধূমধামে দেবী গন্ধেশ্বরী পূজায় মাতেন বনিক সম্প্রদায়! গন্ধেশ্বরী দেবী চতুর্ভুজা, দেবীর উপরের ডান হাতে শঙ্খ, নীচের হাতে ত্রিশূল, উপরের বাম হাতে পদ্ম, নীচের হাতে ব্যবসার প্রতীক তূলাদন্ড! এই দেবীই গন্ধবনিক সম্প্রদায়ের আরাধ্যা দেবী!
অন্য দিকে এঁদের আদিপুরুষগন ছিলেন শৈব! কারন এঁদের বিশ্বাস দেবাদিদেব শিব কর্তৃক এঁরা সৃষ্ট!
এর প্রমান পাওয়া যায় বিভিন্ন মঙ্গল কাব্যে, চন্ডী মঙ্গলে ধনপতি সওদাগর ও শ্রীমন্ত এবং মনসা মঙ্গলে চাঁদ সওদাগর! শিব ভক্ত চাঁদ সওদাগরের কাছে মনসা দেবী বার বার পূজা চাওয়ায় চাঁদ সওদাগর উত্তর দিয়েছিলেন -
যে হাতে পূজেছি আমি শিব শূলপানি
সে হাতে পূজিব না চ্যাংমুড়ি কানি!
সেদিক থেকে চাঁদ সওদাগরের শিব ভক্তি বনিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল!
আজও তাঁর আরাধ্য দেবতা বানেশ্বর ও রামেশ্বর শিব চম্পাই নগরীতে নিত্য পুজিত হ'ন!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours