জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
সংগঠিত শিল্পশ্রমিকদের
দল এবং ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রে নিয়ে
আসাটা
যখন নেতারা উদারবাদের ধারায়
দয়া বলে মানেন,
তখন কোন আত্মমর্য্যাদা সম্পন্যা কর্মীকুল
যখন দয়ার দানকে প্রত্যাখ্যান করে,
কেন্দ্রটাকে জোর করে দখন করে নিতে
তৈরী হবেন,
তখনই রাস্থা খুলবে ।
নয়তো অপেক্ষা করুন, একটা লম্বা ফ্যাসিতন্ত্রকে
স্বাগত জানাতে।
এটা তো দ্বন্দ্ব তত্বের সাধারন কথা হিসেবে বুঝতে হোত। দ্বিতীয় যুদ্ধের পর, বিশ্ব দ্বন্দ্ব যখন সরাসরি,
----- পুজির হিংস্র অংশ বনাম শ্রমিক শ্রেনীতে উঠে এসেছে এবং আমেরিকা ক্রমে হিংস্র পুজির প্রতিনিধিত্ব করছে, তখন উদারবাদ এই দুই মহাশক্তির কোন না কোন একটার ছায়া পরিব্রেষ্টিত হবে।
-- --- তাই তো হচ্ছে। পুঁথি সর্বস্য পন্ডিত রা স্তালিনকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। উনি যেহেতু মুচির ছেলে সেজন্য তার অভিজ্ঞতা পড়াশুনা সব বাতিল এবং এমনকি, যুদ্ধকালে তার স্তালিনের সর্বাধিনায়ক হয়ে যাওয়াটাও নাকি দুর্ঘটনা ছিলো।
--
------ ১৯৭৪ সালে জীবন রায় ইস্পাত শিল্পের ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সোভিয়েত ভ্রমনের পর, বেশ কিছু সভায় উল্লেখ করেছিলেন, সেখানে খ্রুশ্চেভবাদের আত্মপ্রকাশটাই ঘটেছিলো, ইউরোপে যুদ্ধকালিন ধ্বংস থেকে বেড়িয়ে এসে বিশ্বপ্রযুক্তি হয়ে উঠায় আমেরিকার সাহায্য এবং সেই মিলিটারীতন্ত্র, বিশ্ব উদারবাদের নেতা হয়ে যাওয়ার কারনেই। দেখে এসেছিলাম, এই উদারবাদীদের আত্মপরতার ছত্রছায়ায়,কিভাবে শ্রমিকদের মধ্যেও আনুগত্যহীনতার প্রভাব বাড়ছিলো এবং সাধারনভাবে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।
------ আমাদের দলে এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের পুঁথিপড়া ওয়ালার, ১৯৬৪ সালের পার্টী কর্মসূচীতে যদি 'শ্রমিক নেতৃত্ব' মেনে নিয়ে থাকেন, আজ বুঝছি -- তারা জানতেন ভারতীয় শ্রমিকরা চেতনা অতলতার যে বিন্দুতে রয়েছেন, সেটা কোনদিন দাবী করতে আসবেন না। ১৯৬৯ সালের আন্তর্জাতীক দলিলে যদি ক্রুশ্চভকে বাতিল করা হয়ে থাকে, তার বুঝতেন, আসলে ভারতীয় রাজনীতি যে পর্য্যায়ে, ওসব নিয়ে দলের ভেতরে সেকালে যে বিতর্ক ছিলো, সে 'রোগ' 'জ্যোতিবাবুকে সামনে রেখে, একটা দুটো সরকার চলালেই মিলিয়ে যাবে।
--- এমন কি ১৯৭০/৭১ সময় কালে সম্ভবতঃ কেন্দ্রিয় কমিটি , সপাটে স্তালিন সম্পর্কীয় খ্রুশ্চেভ ঘোষনা বাতিল করে দেওয়া হলেও, ওটা যে কোন্দিন দলের আন্তর্জাতীকতা সম্পর্কীত ভাবাদর্শের পূনঃর্গঠনে প্রয়োজন হতে পারে সেটা কখনো ভাবার যে প্রয়োজন হবে সেটা দলের উদারবাদীরা যখন বাতিল করে দিয়েছেন,
----- তখন দলের ভেতরকার সে সব নেতারা যারা লেনিনবাদকে
মার্ক্সবাদে পৌছুনোর 'রকেট' বলে মেনেছেন, সম্ভবতঃ তারাও চতুর্মুখী সংগ্রামে রনক্লান্ত।
----- এম্পর্কেই একটা মজার কথা আছে, সাম্যবাদীদের জানা উচিত। তদানিন্তন সিপিআই , স্তালিনের প্রশ্নে, খ্রুশ্চভকেই সমর্থন করতেন। কিন্তু বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে, একটা পুস্তক বেরুলো, সি পি আই সদর দপ্তরের মাথার উপর দিয়ে, যে বইটা বলে দেয়, উদারবাদের মধ্য একটা/দুটো বিপ্লবী যদি বিরাজমান থাকতেন কোন ভুমিকা তাকে নিতে হোত।
------ সেই পুস্তকে শিরোনামাতেই লেখা হোল, "হাতির দাতের আবার খুত কী"। এই বই এবং লেখক জীবন রায়ের জীবনে, দল এবং ট্রেড ইউনিয়নে উদারবাদীদের নষ্টামীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে এক 'রুপকথা' এবং 'রুপকথার নায়ক' হিসেবে চিরকাল জাগরুক ছিলো। উনি আর কেউ নন - বাংলা থেকে উঠে আসা এক বিশ্ব নেতা - সংসদকে কাপিয়েছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। তিনি হলেন অধ্যাপক হীরেন মুখোপাধ্যায়।
----- লেখাটা শেষ করার একটা পথে খুজতে খুজতেই আরো দু'চারটি কথা বলে নিলে ভালো হবে। সোভিয়েত পতনের কালটিকে এমনভাবে দেখা যায়ঃ একপ্রান্তে বাইরে থেকে রোনাল্ড রেগনের 'তারকা যুদ্ধের' ভয় দেখানো, অন্যপ্রান্তে ভেতর থেকে, 'রাজনৈতিক কেরানীকুল' হিসেবে তথাকথিত উদারবাদীদের পার্শবদলের পরিনাম।
--- -- কোন মার্ক্সবাদী যদি, স্তালিনের সেই কথাকে মানা হোত, তবে দলে এবং সংগঠনের উদারবাদের আত্মসমর্পন প্রকৃয়ায় শ্রমিক শ্রেনীকে 'আত্মসমর্পন করানোর প্রকৃয়াটাকেও আটকে দেওয়া যেতো। তিনি বলেছিলেন - 'হিটলার শেষ হয়েছে, হিটলারবাদ কিন্তু পুঁজির কেন্দ্রিকতা বৃ্দ্ধির সাথে সাথে ক্রমে ভয়ংকর হবে এবং তার নেতা হবে আমেরিকান মিলিটারি তন্ত্র'।
----- দল এবং সংগঠনের বিপর্য্যয়ের পেছনে, উদারবাদের বিপর্য্যয় - , আগামী দিনের শ্রেনীরাজনীতির গবেষনাটি সে বিন্দু থেকে শুরু হতে হবে।
ইন্দোচিনের অনেক যায়গায়, দলের ভেতরেই শ্রেনী এবং উদারবাদের সংঘাতে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অথচ, এই দ্বন্দ্ব যে তৃ্তীয় বিশ্বের দেশগুলিতে
------ একটা স্বাভাবিক প্রকৃয়া, সেটা বোঝার যায়গা থেকে দেশের শ্রমিক আন্দোলনকে - আধুনিক শ্রমিক শ্রেনী আসার পরেও তাকে হাজার কিমিটার দূরে রাখা হয়েছে।
কাজেই আগামী প্রজন্মকে গবেষনা এখান থেকেই শুরু করতে হবে। ১৯৬৪ সালে যদি পার্টি কর্মসূচী গ্রহন করা হয়ে থাকে আন্তর্জাতীক দলিল গ্রহন করতে আরো পাঁচ বছর কেনো লাগলো। যদি লেগেই থাকে তবে, দুই সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে,
----- কেন নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া গেলো না। এই সুত্রেই প্রশ্ন উঠবে, সোভিয়েত ভেংগ যাওয়ার পর
------ রুপান্তরকামীতা থেকে 'সরকারবাদীতায়' ফিরে আসার পেছনে, দল এবং ট্রেড ইউনিয়ন 'উদারবাদ' বিরোধী সংগ্রামে আত্মসমর্পনের পরিনাম নয় কী? কোথায় আমরা ট্রেড ইউনিয়ন থেকে স্বয়ংসম্পর্নতার জন্য লড়বো? সেকালে 'আমেরিকান প্রিতির এতো বিস্তার ঘটেছিলো ভেতরে, অনেক সময় জীবন রায়েরো বুঝি মনে হোত - একবার আমেরিকায় ঘুরে না এসে 'ঠকেই গেলাম'।
------ সেই সুত্র ধরেই, একদিন না একদিন, শ্রমিক শ্রেনীর শ্রেনী রাজনীতিকে স্পষ্ট করে বুঝে নিতে হবে,
------ কোন বুদ্ধিতে বাংগলা সরকাররের জন্য পুজি সংগ্রহের জন্য কমরেড জ্যোতি বসুকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে প্রশ্নটা তোলাই ছিলো, উদারবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংগ্রাম। জাত গেলো কিন্তু পেটও ভরলো না। নতুন প্রজন্মে খোজ নিতে হবে ক'জন বিরোধীতা করেছিলো সেদিন।
------ এই লেখকের কাছে, যে খবর আছে, একটি বই দুটি চিঠি কেন্দ্রীয় কমিটিতে সেদিন যায় নাই। ইস্কো যখ নিজিকরনের উদ্যাগ ভেতর থেকেই উঠলো, বাংলার সব থেকে বড় বড় ট্রেড ইউনিয়ন নেতার কাছে গিয়েও ঠোট খোলানো যায় নাই।
---- তবে সেদিন অন্তত এইটুকু ভরসা পয়েছিলাম, শ্রমিক নেতারা নিজেদের ডুবিয়ে দিলেও, নিশ্চিতভাবেই, উদারবাদ থেকে আসা কিছু নেতা ক্রমে শ্রেনীর পর্য্যায়ে উঠিয়ে এনেছিলেন
----- নয়তো জীবন রায়কে, দলনেতাদের কাছে দরখাস্ত করতে হোত না, সম্মানজনক বিচ্ছেদের জন্য।
এই সুত্রে বিনয়ের সাথে নিজের সম্পর্কে দু'টি কথা বলে রাখি। জীবন রায় যদি জীবনের বাজী রেখে, এই সংগ্রামে না নামতেন, আজকের কথা কোন দিন আসতোই না এই বিশ্বপ্রবাহে,
---- অন্ততঃ আগামি শত বছরে।
আবার যদি এখানে না যেতাম ১৯৯৩ সালে নিলীমা চলে যাওয়ার পরেই হয়তো ,শারিরীক ভাবে চলে যাওয়াটা অস্বাম্ভাবি হয়ে পড়তো। যদি শ্রেনী রাজনীতি চলে যাওয়াটাকে বাস্তব বলে মেনে নেওয়া যেতো সেই চলে যাওয়টা কোন দুঃখের হোত না। তাই, একজন অত্বাত্বিক ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীকে প্রয়োগতত্ব সম্পর্কে কথা বলতে হয়, তার জীবন কথা কিছুটা চলে আসবেই। কাজেই পাঠকরা মেনে নেবেন আশা করি। জীবনটা যে এতো দীর্ঘাইয়িত হোল, তার অর্থটাও তো খুজতে হবে। (চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours