Fiture
রণজিৎ গুহ, সমাজকর্মী ও লেখক: রসাস্বাদনের রহস্যময় রসায়নে আবশ্যিক অনুঘটকের উপস্থিতি সহসা স্বীকৃতি পায় না।সকলেই সম্মাননা চায়।স্বীকৃতি চায়। কিন্তু স্বীকৃতি দিতে, সম্মান জানাতে বড়ই কুন্ঠা সকলের। অনুঘটকই বা হতে চায় ক'জনা?সকলেই চায় নিজেকে মেলে ধরতে। পরিচিত হতে চায় আপন পরিচয়ে। আড়ালে থেকে অন্যকে এগিয়ে দিতে কার দায় পড়েছে? হীরকের তল কাটেন যে গুনী তাকে মনে রাখে কোন সুজন?হীরকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ে।দ্যুতির ছটায় ঢাকা পরে যায় তল কাটা গুনীর কদর।কিন্তু হীরকের কদর বাড়ে।অনেকে আবার নিজেকে মেলে ধরার আনন্দে অজান্তেই বহুজনের আনন্দ বেদনার সঙ্গী হয়ে যান নৈর্ব্যক্তিকভাবে।চিনিয়ে দেন এক নতুন সুর্যাস্ত বা সমুদ্র উপকুল।এযেন আসলের ওপর ফাউ।যে দেয় তার মাথা ব্যাথা নেই।কিন্তু যে পায় সে কৃতজ্ঞ থাকে। সেই কৃতজ্ঞতা জানাতেই এই ব্যাক্তিগত গদ্য। আমার মত কবিতা পাঠকের কাছে আবৃত্তিকাররা একেবারেই ঘরের লোক।এই শহরের বাচিক শিল্পীরা আমার একান্ত প্রিয়জন।অনুরাগ পক্ষপাতিত্ব আনে।আবার কৃতজ্ঞতা অনুরাগেরই ভিন্ন প্রকাশ। পক্ষপাতিত্বের আশংকায় কৃতজ্ঞতা গোপন কি সমীচীন হবে? কিছু দ্বিধা থেকেই যাচ্ছে। আবৃত্তি শুনতে আমি দূরে অদুরে আগ্রহের সাথে ছুটি। সত্যি বলতে কি কবিতা শুনতেই যাই।যদিও কবিতা পাঠ আমার মতে একেবারেই একটি একান্ত বিনোদন। কবিদের স্বরচিত কবিতা পাঠের বড় আসরে সেকারণেই আমি যুৎ পাই না।
কিন্তু আবৃত্তি আমাকে খুবই কবিতা বিনোদন দেয়।আবৃত্তিকাররা প্রায়শই দাবী করেন যে তাদের উপস্থাপনায় তাদের কণ্ঠ কৌশলে কবিতা ভিন্ন রুপ পায়।কবিতা নতুনভাবে অর্থবহ হয়ে ওঠে শ্রোতাদের কানে। তাদের দাবী অনেকটাই গ্রহনযোগ্য। কবিতায় কবির একটা নিজস্ব নিশানা থাকে ঠিকই কিন্তু পাঠক আবৃত্তিকার ব্যাক্তি বোধ বিবেচনায় তাতে নতুনতর সৌরভ খুঁজে নিতেই পারে।তবে অন্যদিকে দেখা যায় আবৃত্তিকারের পরিশীলিত কণ্ঠ, স্বরের ওঠানামার নিয়ন্ত্রিত কৌশল, উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যই শ্রোতাদের এত মুগ্ধ করে যে যাকে আশ্রয় করে এত আয়োজন সেই কবিতাই যায় হারিয়ে। বিষয়ের চেয়ে বিষয়ীর গৌরবে হতবাক হতে হয় শ্রোতাদের। সাধারণ কবিতা পাঠকেরা নামী আবৃত্তিকারদের পাঠে খানিকটা হকচকিয়ে যান।আবৃত্তি শিল্প প্রকৃতই কবিতার সহায়ক শিল্প কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়।চলচিত্র কি গল্প উপন্যাসের সহায়ক বা পরিপুরক শিল্প? আবার একথাও জোরালো ভাবেই বলতে হয় কবিতা ও পাঠকের মাঝে আবৃত্তিকার কি নিছক অনুঘটকের কাজ করবে কবিতাকে ভালবেসে। নিজেকে মেলে ধরার স্বাভাবিক আকাংখা থেকে দূরে থাকবে?আবৃত্তিকার শ্রোতাদের কবিতার ও কবির কাছে পৌঁছে দেওয়ার পথটুকু স্পষ্ট করে দেন।আগ্রহী করে তোলে আবৃত্তিকৃত কবিতাটির প্রতি।সেটুকুতেই পরিতৃপ্ত থাকবেন তিনি?কবিতার মত এক জটিল সাহিত্যকর্মকে বাচিক শিল্পীরা কত আয়াসে সাধারণের গ্রাহ্যতার সীমার মধ্যে নিয়ে আসেন। একজন কবিতা প্রিয় মানুষ হিসাবে বাচিকদের বাহবা জানাই।
কৃতজ্ঞতা জানাই।কবিতা পড়ার প্রয়োজনীয় অনুসারী শিল্প কবিতা আবৃত্তি। আবৃত্তিকারদের দাপট অনেক ক্ষেত্রেই কবিতাকে স্তিমিত করে দেয় বটে তবুও কবিতা ভালবাসি বলেই আবৃত্তিকাররা আমার একান্ত স্বজন। এই শহর কেন্দ্রিক আমার যে বৃহত্তর পরিবার পরিধি বাচিক শিল্পীরা তার অন্যতম। কৃতজ্ঞতা অবশ্যই জানাই।পরিবারের সদস্য হিসাবে ত্রুটি বিচ্যুতি চোখে পরে খুব।সেসব কথা বারান্তরে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. সুন্দর আলোচনা । কবিতাকে আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা লতাটির উপর যথার্থ আলোচনা ।

    ReplyDelete